বিশ্বে প্রতি বছর ১ মে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ পালিত হয়। এদিন শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলেন অনেকেই। পত্রপত্রিকা বিশেষ লেখা প্রকাশ করে। আবার ৩৬৪ দিন পর আসে দিবসটি। ফের দেশে দেশে আলোচনা সভা হয়। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া উত্থাপিত হয়। কিন্তু শ্রমিকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। এই দিবসের তাৎপর্যও স্থায়ী হয় না। বছর বছর ফিরে ফিরে আসে শুধু।
সাহিত্যচর্চায় শ্রমিক প্রসঙ্গ এসেছে নানাবিধভাবে। রচিত হয়েছে উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ কত কী? তারই ধারাবাহিকতায় এবার প্রকাশিত হয়েছে সমাজ, শিল্প ও সাহিত্যবিষয়ক লিটল ম্যাগাজিন ‘সাম্প্রতিক’-এর ‘শ্রমিক সংখ্যা’। গুণী সাহিত্যিক আমিরুল বাসার সম্পাদিত গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যাটি কিছুদিন আগেই হাতে পেলাম।
পাতা উল্টে উল্টে মনে হলো, এমন বৃহৎ কলেবরে কাজ খুব কম সম্পাদকই করেছেন হয়তো। বিষয়ভিত্তিক এমন লেখা সংগ্রহ করাও সত্যিই কষ্টসাধ্য। কী নেই এতে? প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা, নাটিকা, নিবন্ধ বা অনুবাদ—সবই আছে এক মলাটে। চলতি সংখ্যায় শ্রমজীবীদের জন্য প্রবন্ধ লিখেছেন কামাল লোহানী, সলিমুল্লাহ খান, এলহাম হোসেন, মো. আব্দুল বাকী চৌধুরী নবাব, সুকান্ত দে, অজন্তা রায় আচার্য। তাতে উঠে এসেছে রক্তস্নাত মে, বাংলাদেশের প্রথম শহীদ কলমশ্রমিক কবি মেহেরুন্নেসা, সাবঅলটার্ন বয়ান, শ্রমিকশ্রেণির জীবন ও সংগ্রাম প্রভৃতি।
শ্রমজীবীদের জন্য কবিতা লিখেছেন গোলাম কিবরিয়া পিনু, হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, শিহাব শাহরিয়ার, আভা সরকার মণ্ডল, পলটু বাসার, শওকত হোসেন, শুভ্র আহমেদ, আহমেদ ফিরোজ, ওবায়েদ আকাশ, মনসুর আজিজ, শাকিলা নাছরিন পাপিয়া, আলমগীর খান, আলী আফজাল খান, বিধানেন্দু পুরকাইত, চন্দনকৃষ্ণ পাল, অরুণ চক্রবর্তী, মহুয়া দাস, মন্দিরা ঘোষ, সোহেল মাহবুব, বঙ্গ রাখাল, মানিক পন্ডিত, বেবী সাউ, জাফর ওবায়েদ, তাহমিনা শাম্মী, ঝিলম ত্রিবেদী, সাহেদ মন্তাজ, উদয় শংকর দুর্জয়, টিপু সুলতান, রোকসানা পারভীন সাথী, সৌহার্দ সিরাজ, রাসেল আবদুর রহমান, ইমরুল ইউসুফ, শাহনাজ পারভীন, মল্লিকা আফরোজা, ভোলা দেবনাথ, রাজন্য রুহানি, শিশির আজম, আশরাফ চঞ্চল, মুত্তাকিন হাসান, মনিরুজ্জামান মুন্না, মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস, লুৎফর রহমান সাজু, নাসিমা আক্তার, শরিফুল বাসার। এসব কবিতায় উঠে এসেছে শ্রম, শ্রমিক, শ্রমিকের ইতিহাস, আন্দোলন, সংগ্রাম, রক্তপাত, শ্রমের শ্রেণিবিভাগ প্রভৃতি।
এই সংখ্যায় আরও প্রবন্ধ লিখেছেন রুখসানা কাজল, ধীরেন হালদার, অরবিন্দ সরকার এবং একটি প্রবন্ধ অনুবাদ করেছেন দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য। এসব প্রবন্ধে পাওয়া যাবে গৃহকর্মী, শ্রেণিচেতনা, নাটকের শ্রমজীবী মানুষের আখ্যান।
ছোট গল্প লিখেছেন অমর মিত্র, মোহাম্মদ শামছুজ্জামান, নভেরা হোসেন, এলিজা খাতুন, শিল্পী গঙ্গোপাধ্যায়, কঙ্কন সরকার, শাশ্বত বোস। গল্পসমূহে শ্রমিকের জীবন, স্মৃতি, আনন্দ, বেদনা, হাসি, কান্না সুচারুরূপে তুলে ধরা হয়েছে।
শ্রমজীবীদের জন্য আরও কবিতা লিখেছেন বেণীমাধব সরকার, নাহিদা আশরাফী, ড. বিশ্বজিৎ বাউনা, বের্টল্ট ব্রেশ্টের কবিতা অনুবাদ করেছেন মাফীজ দীন সেখ, আমিরুল বাসার, মাধব চন্দ্র মন্ডল, জমর সাহানী, খগেশ্বর দাস, মিঠুন চক্রবর্তী, মনোজ অধিকারী, আলমগীর হোসেন টিটু, এম ডি কাইয়ুম, নদী হোসেন নবীন, সালাম তাসির, শর্বরী চৌধুরী, সৌম্যস্বপন চক্রবর্তী, শর্মিষ্ঠা ঘোষ, সুশান্ত হালদার, তুহিন কুমার চন্দ, মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ। এসব কবিতায় শ্রমিকের নানাবিধ ক্রীয়াকলাপ তুলে ধরেছেন কবিরা। বিবিধ অনুষঙ্গে কবিতার সমাহারে পাঠক চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাবেন স্পষ্ট চিত্রকল্প।
নিবন্ধ লিখেছেন মো. জাহিদুর রহমান, আনোয়ার কামাল, চৈতালী ব্রহ্ম, মারুফ আহমেদ, শহিদুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফরিদ হাসান, আসিফ আজিজ, মুহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাত, সুলতানা হুসাইন, কেতকী বসু, আর্য সারথী, সজীব খান। এ বিভাগে কণ্ঠশ্রমিক, চা শ্রমিক, রেল শ্রমিক, পাহাড়ের শ্রমিক, প্রবাসী শ্রমিক, চা শ্রমিকের আন্দোলন, অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
আরও ছোটগল্প লিখেছেন জয়িতা ভট্টাচার্য, সমর আচার্য্য এবং বিবিকা দেব। এ তিনটি গল্পে শ্রমিকের জীবনালেখ্য সুনিপুণভাবে ফুটে উঠেছে। সবশেষে শ্রমজীবী মানুষের জন্য নাটিকা লিখেছেন গাজী আজিজুর রহমান। যে নাটিকায় লাল পতাকার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন। শ্রমিকের প্রতীককে আশ্রয় করা এ নাটিকা শ্রমজীবীদের জীবনের কথা বলে।
আশা করি, সাম্প্রতিকের এই মহতী উদ্যোগ বাংলা সাহিত্যে নতুন পালক যুক্ত করবে। শ্রমজীবী মানুষদের নিয়ে গবেষণা করতে চাইলে রেফারেন্স হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ফলে এ কথা নিঃসংকোচে বলা যায়, শ্রমিক সংখ্যাটি অবশ্যই সংগ্রহে রাখার মতো। আমি সাম্প্রতিক লিটল ম্যাগাজিনটির বহুল প্রচার ও পাঠ কামনা করছি।
এসইউ/জিকেএস