‘সারাদিন মানুষের ক্ষোভের কথা শুনছি, ওরস্যালাইনও নেই যে দেবো’

4 days ago 5

দিনাজপুরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে গত সাড়ে ছয় মাস ধরে কোনো ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী নেই। ফলে সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন রোগীরা। এতে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৩টি উপজেলায় ১০৩টি ইউনিয়ন ও ৯টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর জেলা। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, দিনাজপুর জেলার মোট জনসংখ্যা ৩৩ লাখ ১৫ হাজার ২৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ রয়েছে ১৬ লাখ ৬০ হাজার ৯৯৭ জন। আর নারীর সংখ্যা ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ২৪১ জন। ১০৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯৮টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারসহ পদ রয়েছে ছয়টি করে।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশিরভাগ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নেই। সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে শুধু ৬ নম্বর আউলিয়াপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিলে অফিসার রয়েছেন।

‘সারাদিন মানুষের ক্ষোভের কথা শুনছি, ওরস্যালাইনও নেই যে দেবো’

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে ইপিআই কার্যক্রম, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসাসহ ২৩ ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হতো। কিন্তু গত সাড়ে ছয় মাস ধরে কোনো ওষুধ সরবরাহ নেই এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।

সদর উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের ফুলবন গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম (৩৫)। বাইসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ডান পায়ের বৃদ্ধ নখ উপড়ে গেছে। তিনি চিকিৎসার জন্য সুন্দরবন ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে যান। কিন্তু সেখানে কোনো চিকিৎসা বা ওষুধ পাননি। পরে রামডুবি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা পাওয়া যেতো। এখন পাই না। ওষুধ থাকে না।’

৩ নম্বর ফাজিলপুর ইউনয়নের রানীগঞ্জ গ্রামের গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি ভাইরাস জ্বর ছড়িয়ে পড়েছে। জ্বর-সর্দিতে ভুগছি। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ নিতে এসেছিলাম। এসে শুনি কোনো ওষুধ নাকি নেই।’

কথা হয় ২ নম্বর সুন্দরবন ও ৩ নম্বর ফাজিলপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক লাকি আক্তারের সঙ্গে।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই দুই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে উপসহকারী মেডিকেল অফিসার নেই। আমাকেই দায়িত্ব পালন করতে হয়। ওষুধ সরবরাহ না থাকায় লোকজনকে ওষুধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মানুষ এসে ফিরে যাচ্ছেন। এতে আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীও শেষের পথে।’

‘সারাদিন মানুষের ক্ষোভের কথা শুনছি, ওরস্যালাইনও নেই যে দেবো’

লাকি আক্তার বলেন, ‘সবশেষ ওষুধ পেয়েছি গত ১২ ফেব্রুয়ারি। এরপর আর কোনো ওষুধ পাইনি।’

৩ নম্বর ফাজিলপুর ইউনয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট পাইলট বসাক বলেন, ‘সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিসে এসে অলস সময় পার করছি। সারাদিন মানুষের ক্ষোভের কথা শুনছি। ওরস্যালাইনও নেই যে মানুষকে দেবো। অথচ আগে প্রতিদিন ২০০-৩০০ মানুষ ওষুধ পেতো।’

এ বিষয়ে জানতে দিনাজপুর পরিবার পরিকল্পনা উপপরিচালক এটিএম নজমূল হুদাকে তার সরকারি নম্বরে কল দিয়ে ও অফিসে গিয়েও পাওয়া যায়নি।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আসিফ ফেরদৌস জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি পরিবার পরিকল্পনা উপপরিচালক বললেই ভালো হত। তবে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের অভিভাবক হিসেবে বিষয়টি অবগত রয়েছি। খুব শিগগির কেন্দ্র থেকে ওষুধ সরবরাহ হবে। এই অবস্থা থাকবে না।’

এসআর/এএসএম

Read Entire Article