সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার জন্য আড্ডা জরুরি

সাহিত্য একাডেমি চাঁদপুরের তৃতীয় সাহিত্য সভা ২৯ আগস্ট বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। একাডেমির মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন মিলনায়তনে কবি-লেখকদের সরব উপস্থিতি ও আলোচনায় অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। একাডেমির সহ-সভাপতি আবদুল্লাহিল কাফীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকত। তিনি বলেন, ‘সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার জন্য আড্ডা জরুরি। আড্ডায় মুক্ত আলোচনা হয়, যুক্তি-তর্কের আলোচনা হয়। আড্ডা মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে। আড্ডার সঙ্গে তারুণ্যের সম্পর্ক যুক্ত।’ তিনি সাহিত্য আড্ডায় বরেণ্য কবিদের নিয়ে আলোচনার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘শিল্প-সাহিত্য পৃথিবীতে ধ্রুপদী। অনেক বিষয় পৃথিবীতে পুরাতন হয়ে গেছে। কিন্তু শিল্প-সাহিত্য পুরাতন হয় না, হবে না। শহীদ কাদরী, শামসুর রাহমান, আবদুল মান্নান সৈয়দরা বেড়ে উঠেছেন উত্তরাধুনিক কালে। গত শতাব্দির কালটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীতে বড় বড় ধরনের পরিবর্তন হচ্ছিল। লেখকরা এ সময়কে ধারণ করেছেন। নাগরিক কবি আগে ছিল না। গত শতকে নাগরিক কবিরা আত্মপ্রকাশ করলেন। তারা নগরযাপনের প্রতিক্রিয়া কবিতায় ধারণ করেছেন।’

একাডেমির পরিচালক (সাহিত্য ও প্রকাশনা) মাইনুল ইসলাম মানিকের সঞ্চালনায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন একাডেমির মহাপরিচালক কাদের পলাশ। তিনি বলেন, ‘আজকের অনুষ্ঠান অনেক স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রাণবন্ত হয়েছে। সাহিত্য একাডেমির উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে অনেকগুলো আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। আগামীতেও চাঁদপুরের সাহিত্যচর্চায় একাডেমি ভূমিকা রাখবে।’ এ জন্য তিনি সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।

আলোচনা পর্বে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে আলোচনা করেন ড্যাফোডিল কলেজের অধ্যক্ষ শিবলী সাদিক ও চাঁদপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শরীফ মাহমুদ চিশতী। হুমায়ুন আজাদ ও শহীদ কাদরী নিয়ে আলোচনা করেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. সাইদুজ্জামান। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে আলোচনা করেন চাঁদপুর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি ম. নূরে আলম পাটওয়ারী ও নজরুল গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. মোশাররফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল গণি।

আরও পড়ুন

• সমধারা সাহিত্য পুরস্কার ২০২৬ পাচ্ছেন তিনজন
• চাঁদপুরে সাহিত্য একাডেমির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

কবি শামসুর রাহমানকে নিয়ে আলোচনা করেন একাডেমির নির্বাহী সদস্য কবি সুমন কুমার দত্ত। কবি শহীদ কাদরীকে নিয়ে আলোচনা করেন দন্ত্যন ইসলাম। বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে কবি জাহিদ নয়ন এবং আবদুল মান্নান সৈয়দকে নিয়ে মুহাম্মদ ফরিদ হাসান আলোচনা করেন। এ ছাড়া একাডেমির নির্বাহী সদস্য, কবি ও লেখক নুরুন্নাহার মুন্নি সম্পাদিত ছোটকাগজ ‘আখ্যান’র অরণ্য সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা।

সভায় নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেন কবি ও সংগঠক খোকন মজুমদার। কবিতা পাঠ করেন কবি নুরুন্নাহার মুন্নি, রাজিব কুমার দাস, জাহিদ নয়ন, উজ্জ্বল হোসাইন, সাদ আল আমিন, শাদমান শরীফ, নেছার আহমেদ, হোসেন ব্যাপারী প্রমুখ। চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখওয়াত জামিল সৈকত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করায় একাডেমির পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়।

সভায় জুন, জুলাই, আগস্ট মাসে সাহিত্য একাডেমিতে নিয়মিত উপস্থিতির জন্য ৬ জন লেখককে শুভেচ্ছা উপহার দেওয়া হয়। উপহারপ্রাপ্তরা হলেন: ইমরান শাকির ইমরু, মুহাম্মদ হানিফ, আরিফুল ইসলাম শান্ত, এএম সাদ্দাম হোসেন, ম. নূরে আলম পাটওয়ারী ও এইচএম জাকির। তৃতীয় সাহিত্য সভায় সেরা আড্ডারু হিসেবে তিনজন লেখককে পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন: খোকন মজুমদার, আবু সায়েম ও শাদমান শরীফ।

আয়োজনে একাডেমির লাইব্রেরির জন্য লেখক ও সাংবাদিক মামুন রশীদের পক্ষে ১৫টি বই তুলে দেন নুরুন্নাহার মুন্নি। রাত সাড়ে আটটায় সাহিত্য সভার সমাপ্তি ঘটে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন একাডেমির পরিচালক (গ্রন্থাগার, সেমিনার ও শিশুসাহিত্য) আশিক বিন রহিম, নির্বাহী সদস্য মোখলেছুর রহমান ভূঁইয়া, ড্যাফোডিল কলেজের উপাধ্যক্ষ ফয়সাল ফরাজী, কবি পলাশ দে, কাজী সাইফ, ইয়াছিন দেওয়ান, সাইফুল খান রাজিব, কাশফীয়া কাফী, তাশফীয়া কাফী, সামিয়া আলম, মুনিয়া আলম, এম আর শোভন, মাহির প্রমুখ।

এসইউ/এমএস