সায়েদাবাদে যাত্রীচাপ নেই, বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ

2 days ago 13

শেষ মুহূর্তের ঈদযাত্রায়ও ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে। তবে ভ্রমণে ভোগান্তি নেই বললেই চলে। অনেকটাই স্বস্তিদায়ক পরিবেশে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন ঈদযাত্রীরা। সরেজমিনে রোববার (৩০ মার্চ) সকালে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ঈদে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় নেই। টিকিট নিয়েও নেই কাড়াকাড়ি। যাত্রীদের আনাগোনা থাকলেও তুলনামূলক কম।

পরিবহন সংশ্লিষ্টতা জানিয়েছেন, ভোরে যাত্রীদের চাপ বেড়েছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি কমে আসে। বিকেল দিকে ফের যাত্রীচাপ বাড়তে পারে।

তবে যাত্রীদের অনেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেছেন।

বাস মালিকরা আশা করছেন, রোববার সায়েদাবাদ থেকে দুই হাজার বাস বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাবে। সায়েদাবাদ টার্মিনাল সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ২৬টি রুটে বাস চলাচল করছে।

রোববার সকাল থেকে যাত্রাবাড়ী, জনপথ মোড়, এটিএম হায়দার সড়ক, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ভেতর ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীদের আনাগোনা রয়েছে। তবে টার্মিনালের ভেতরে যাত্রীর চাপ কম। মূল টার্মিনালের বাইরে সড়কের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে যাত্রীচাপ বেশি। তবে বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীর ভিড় নেই।

সায়েদাবাদে যাত্রীচাপ নেই, বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ

সায়েদাবাদ টার্মিনালের ভেতরে মালিক সমিতি, র‍্যাব ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ দেখা গেছে।

আরও পড়ুন

মো. মহিউদ্দিন কুমিল্লা যাওয়ার জন্য জনপথ মোড়ে সপরিবারে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি গুলিস্তানের একটি শপিং সেন্টারের বিক্রয় কর্মী। কথা হলে মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ভিড় বেশি নেই। খুব একটা ঝামেলা হচ্ছে না। তবে ভাড়া বেশি। সাধারণ বাসে কুমিল্লার ভাড়া অন্যান্য সময় ২০০ টাকা হলেও এখন আড়াইশো থেকে ৩০০ টাকার কমে যাওয়া যাচ্ছে না।

বরিশাল, পটুয়াখালী, দশমিনা রুটে চলাচলকারী বাস ভাড়া সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। তারা বলেছেন, পটুয়াখালীর ৬০০ টাকা ভাড়া এক হাজার ১০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।

সায়েদাবাদে যাত্রীচাপ নেই, বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ

চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করা নন-এসি বাসে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। যাত্রীরা জানিয়েছেন, আগে এ ভাড়া ছিল ৪০০ টাকা।

সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ের একটি কাউন্টারের বিক্রয় কর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, বরিশালের ভাড়া এখন ৭০০ টাকা নিচ্ছি। অন্য সময় এ ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন, আমরা কী করবো।

টার্মিনালের বাইরে যাত্রাবাড়ীর দিকে এম আর প্লাজায় গোল্ডেন লাইন ও শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করে সেন্টমার্টিন স্কয়ার পরিবহন (এসি গাড়ি)। নুরুল ইসলাম নামে একজন এ বাসের টিকিট বিক্রি করছিলেন। তিনি বলেন, ভাড়া ৭০০ টাকা নিচ্ছি, অন্যান্য সময়েও একই ভাড়া নেওয়া হয়।

তবে সেন্টমার্টিন স্কয়ার পরিবহনের একজন যাত্রী জানান, ভাড়া ৮০০ টাকা চেয়েছিলেন, দর কাষাঘষি করে ৭০০ টাকা দিয়েছি।

এছাড়া টার্মিনালের বাইরে শ্যামলী, হিমাচল, নীলাচল, হানিফ জোনাকিসহ বিভিন্ন বাস কোম্পানির কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। যাত্রীর চাপ দেখা গেছে বায়তুল মামুর মসজিদের নিচের দোলা, টুঙ্গীপাড়া এক্সপ্রেস ও ইমাদ পরিবহনের কাউন্টারেও।

বাস মালিকদের নিয়ে গঠন করা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল পরিচালনা কমিটির সদস্য ও এম আর ট্রান্সপোর্টের মালিক মো. শাহ আলম জাগো নিউজকে বলেন, যাত্রী পরিবহনের জন্য টার্মিনালে পর্যাপ্ত গাড়ি রয়েছে। যাত্রী মোটামুটি রয়েছে, তবে উপচেপড়া ভিড় নেই।

সায়েদাবাদে যাত্রীচাপ নেই, বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ

তিনি বলেন, বিগত যে কোনো ঈদের চেয়ে এবার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা ভিন্ন। যাত্রীরা নির্বিঘ্নে এখান থেকে গন্তব্যে যেতে পারছেন। কোনো ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না। মালিক শ্রমিকদের সমন্বয়ে আমরা ১০০ জনের মত স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দিয়েছি। পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশও কাজ করছে। আমরা মালিকরাও এখানে উপস্থিত থেকে কাজ করছি।

আরও পড়ুন

এ বাস মালিক বলেন, কোনো যাত্রী অভিযোগ করলে আমরা তৎক্ষণাৎ সেটার সমাধান করে দিই। টার্মিনালে আগের মতো কোনো চাঁদাবাজিও নেই।

ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, এবার লম্বা ছুটি। যাত্রীরা পর্যায়ক্রমে চলে গেছে। যার ফলে কোনো একটি নির্দিষ্ট দিনে এসে যাত্রীদের চাপ পড়েনি। যাত্রীরই চাপ নেই, বেশি ভাড়া নেবে কীভাবে। তারপরও দু-একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। সেসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানাও করিয়েছি।

বেলা ১১টা পর্যন্ত ৫০০ শতাধিক গাড়ি টার্মিনাল ছেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুই হাজার গাড়ি বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাবে বলেও জানান শাহ আলম।

আল আরাফা বাস কোম্পানির মালিক আলম দেওয়ান বলেন, অন্য বছরগুলোর ঈদের সঙ্গে তুলনা করলে এবার যাত্রীচাপ কম। ধরা যায় আজকেই তো ঈদের আগের দিন। সে তুলনায় যাত্রী কোথায়। টার্মিনালের বাইরের কাউন্টারগুলোতে কিছু যাত্রী আছে, কিন্তু কাউন্টারের ভেতরে তো একেবারেই ফাঁকা।

আরএমএম/এমকেআর/জেআইএম

Read Entire Article