তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান অভিযোগ করেছেন, সিরিয়ার জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে দমিয়ে রাখতে এবং দেশটির নতুন স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে ইসরায়েল সিরিয়ায় তীব্র বিমান হামলা চালাচ্ছে।
এ ছাড়াও তিনি বলেন, সিরিয়ার শাসক বাশার আল আসাদের পতনের পর, ইসরায়েল দেশটির সামরিক সক্ষমতা গুঁড়িয়ে দিতে হামলা চালাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) মিডলইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে আনাদোলু এজেন্সির বরাত দিয়ে এ সংবাদ প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ইসরায়েল সিরিয়ার সংকটময় পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে তাদের দখল করা এলাকাগুলো থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হবে।
তুর্কি প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন একটি প্রচেষ্টা, যার উদ্দেশ্য সিরিয়ার স্বাধীনতাকে আড়াল করা এবং দেশটির জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে নিভিয়ে দেওয়া।
তিনি সিরিয়ার জনগণের প্রতি তুরস্কের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, তুরস্ক সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং ঐক্য রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এরদোয়ান জোর দিয়ে বলেন, তুরস্ক কখনো সিরিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অপপ্রচার বা অনৈতিক আচরণ সহ্য করবে না।
সিরিয়ার সামরিক শক্তির বিপর্যয়
এদিকে আসাদ সরকারের পতনের পর ইসরায়েলি হামলার ফলে সিরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। সিরিয়ার যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস’ জানিয়েছে, এই হামলায় সিরিয়ার বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ, ট্যাংক, সাঁজোয়া যান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন এবং হেলিকপ্টার।
ইসরায়েলের হামলার পটভূমি হলো সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে একটি দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ, যা ২০১১ সালে বাশারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। এরপর সিরিয়ায় কয়েকটি রাজনৈতিক ও সামরিক মিত্রের আগমন ঘটে, যার মধ্যে তুরস্ক অন্যতম।
তুরস্ক-সিরিয়া সম্পর্ক
তুরস্ক এবং সিরিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, বিশেষত সিরিয়ার সুন্নিপ্রধান জনগণের প্রতি তুরস্কের সমর্থন রয়েছে। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের শুরুর সময় থেকে তুরস্ক সুন্নি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির প্রতি তার সমর্থন প্রকাশ করেছে। তুরস্কের জন্য, সিরিয়া একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী রাষ্ট্র, যার সাথে দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।
তুরস্কের সেনা সিরিয়াতে তাদের উপস্থিতি বজায় রেখেছে এবং দেশটির আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সামরিক উপস্থিতি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে, সিরিয়ায় তুরস্কের আপাত বিজয় কতটা স্থায়ী এবং লাভজনক হবে, তা নিয়ে সন্দেহ এবং প্রশ্ন রয়ে গেছে।
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে
বর্তমানে, সিরিয়ার সামরিক পরিস্থিতি এবং এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত তুরস্কের অবস্থান বিশ্ব রাজনীতির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে সিরিয়া কীভাবে তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করবে এবং তুরস্কের সঙ্গে এর সম্পর্ক কীভাবে বিবর্তিত হবে, তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি এবং বাহ্যিক শক্তির কার্যকলাপের ওপর।
এখনো সিরিয়ায় চলমান সংকটের কূটনৈতিক সমাধান এবং সিরিয়ার জনগণের ভবিষ্যত আশা-আকাঙ্ক্ষা কীভাবে পূর্ণ হবে, তা দেখতে হবে। তবে, তুরস্কের দৃঢ় অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া এই সংকটের গতি নির্ধারণ করবে।