সিলেট বৈষম্যবিরোধীর সদস্যসচিবসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা যুগ্ম সংগঠকের

3 months ago 9

ধর্ষণের হুমকি, যৌন হয়রানি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব নুরুল ইসলামসহ চার নেতার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। একই কমিটির যুগ্ম সংগঠক সুমাইয়া আক্তার মামলাটি করেন।

বুধবার (১৩ মে) দুপুরে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে মামলাটি দায়ের করেন তিনি।

মামলার অপর আসামিরা হলেন, একই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সালমান আহমদ খুরশেদ (২৭), যুগ্ম সদস্য সচিব ফখরুল হাসান (২৫) ও রেদোয়ান মুনসি (২৬) এবং অজ্ঞাত আরও ৭ জন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. ওয়াহিদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত তদন্তের জন্য কোতোয়ালি মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

আদালতে করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ১০ মে বিকালে নগরীর আলী আমজদের ঘড়িসংলগ্ন সারদা হলের সামনে আসামিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলা কমিটির যুগ্ম সংগঠক সুমাইয়া আক্তারকে গুম, খুন ও ধর্ষণের হুমকি দেন এবং একই সময়ে সুমাইয়া আক্তারের ওড়না ধরে টানাটানি, নগদ ১০ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল হ্যান্ডস্যাট ছিনতাই করে অভিযুক্তরা। এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন ভুক্তভোগী নারী নেত্রী সুমাইয়া আক্তার।

থানায় দেওয়া অভিযোগে সুমাইয়া আক্তার উল্লেখ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলা কমিটির তিনি একজন যুগ্ম সংগঠক ও ফান্ড সেলের সদস্য। এ ফান্ড সেলের সদস্য সংখ্যা মোট পাঁচজন। গত ৬ মে ফান্ড সেল সম্পাদক সালমান আহমদ খুরশেদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ফান্ডের যাবতীয় জমা ও খরচের হিসাব চান তিনি; কিন্তু সালমান হিসাব দেওয়ার পরিবর্তে ফখরুল হাসান সৌরভসহ নুরুলের সহযোগীরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরদিন সালমান হোয়াটসঅ্যাপে একটি গরমিলের হিসাব দিলে এতে সন্তুষ্ট নন বলে জানান তিনি। এ কথা বলতেই সালমান ও নুরুল এবং তাদের সহযোগীরা সুমাইয়াকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এমনকি ধর্ষণের হুমকি পর্যন্ত দেন এবং হোয়াটসঅ্যাপে যৌন-হয়রানিমূলক কথাবার্তা বলতে থাকেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলার যুগ্ম সংগঠক সুমাইয়া আক্তার বলেন, জেলা কমিটির ফান্ডের হিসাব-নিকাশ চাওয়ার কারণে আমাকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে হিসাব বুঝিয়ে দেওয়ার নামে আমাকে ডেকে নিয়ে আমাকে যৌন নির্যাতন, প্রকাশ্যে ধর্ষণের হুমকি এবং নগদ টাকা ও মোবাইল হ্যান্ডসেট ছিনতাই করে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আগে আমি কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছিলাম।

আসামিরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় নিজের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বিষয়টি আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সংগঠকদের জানিয়েছি এবং তারা আইনি সহযোগিতা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

তবে ওই নেত্রীর অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম। পুলিশি তদন্তে সত্য প্রকাশ পাবে এবং অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে বলে বিশ্বাস তার।

নুরুল ইসলাম বলেন, এটি একটি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা। মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সিলেট জেলার আহ্বায়ক কমিটিকে হেয় ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে তৃতীয় কোনো পক্ষের ইন্ধনে এ অভিযোগটি আমাদের ওপর আনা হয়েছে।

একইভাবে অভিযোগ অস্বীকার করে সালমান আহমদ খুরশেদ বলেন, অভিযোগের সিঙ্গেল কোনো প্রমাণ নেই। আমাদের জেলা কমিটিকে হেয় করতে হীন উদ্দেশ্যে মামলাটি করা হয়েছে। এসবের সঙ্গে আমাদের কমিটির কারো কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. জিয়াউল হক কালবেলাকে বলেন, সুমাইয়া আক্তার থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। তার সেই অভিযোগটি তদন্তাধীন আছে। আদালতে মামলা দায়ের হওয়া প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা এখন পর্যন্ত আসেনি। যদি আসে তাহলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Read Entire Article