নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, আইনগতভাবে সংসদীয় সীমানা পরিবর্তনের আর সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত সংসদীয় আসনের সীমানার চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে আইন অনুযায়ী কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তেলার কোনো সুযোগ নেই। বিক্ষোভ-আন্দোলন করেও কোনো লাভ হবে না।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। এ সীমানায় ভোট হবে এবার।
এদিকে সীমানা পরিবর্তনের ফলে ফরিদপুর, বাগেরহাটে আন্দোলন হচ্ছে অন্যদিকে গাজীপুরেও আনন্দ মিছিল হচ্ছে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, যারা আন্দোলন করছে এটা তাদের বিষয়। এই বিষয়ে কমিশনের কিছু বলার নেই। আন্দোলন করে লাভ নেই।
আন্দোলন করে সীমানা পরিবর্তন করা যাবে? এমন প্রশ্নে ইসি বলেন, ‘আইনের ভাষায় কোনো লাভ আছে বলে আমি মনে করি না।’
এবার সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে উপজেলা যেমন অখণ্ড রয়েছে, তেমনি কোথাও কোথাও উপজেলার ইউনিয়ন একাধিক আসনে অদলবদল হয়েছে। যে কারণে গেজেট প্রকাশের পরই ফরিদপুর, বাগেরহাটে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকার অনেকে।
এ নিয়ে গাজীপুরে আনন্দ মিছিল হলেও বিক্ষোভ-আন্দোলন চলছে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায়।
এ বিষয়ে মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সীমানা নির্ধারণের কাজটি কমিশন নিরপেক্ষভাবে শেষ করেছে। প্রশাসনিক অখণ্ডতা, ভৌগোলিক এলাকা, সর্বশেষ আদমশুমারির কথা আইনে বলা হয়েছে। আদমশুমারির প্রতিবেদন পরীক্ষা করে দেখেছি৷ কিছুটাই অসামঞ্জস্য রয়েছে আবার বিতর্ক রয়েছে।
- আরও পড়ুন:
ভোটের পরিবেশ শতভাগ অনুকূলে: ইসি আনোয়ারুল ইসলাম
ডাকসুতে ১৯ হাজার ছাত্রী ভোটই জয়-পরাজয়ের ‘নিয়ামক’
তিনি বলেন, গত ১৬ জুনের আপডেট ভোটার সংখ্যার ওপর ৬৪ জেলার ভোটার সংখ্যা, এভারেজ সংখ্যা, টোটাল সংখ্যা পরীক্ষা করে ঠিক করা হয়েছে- কোথায় খুব বেশি, কোথায় খুব কম। সেটা বিবেচনায় নিয়ে খসড়াটা করি। সেই খসড়ার ওপর দাবি-আপত্তি আসলে, শুনানি করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়।
ইসি আরও বলেন, আদমশুমারির যাতে গ্যাপ না থাকে সেজন্য ভোটার সংখ্যাকেও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ৪৬ থেকে ৫০টি আসনেও পরিবর্তন হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, সীমানা নিয়ে আন্দোলন কারা করছে, কেন করছে, তারা কী বলতে চাচ্ছে আমরা সেটা এখনো জানি না। কেননা আঞ্চলিকতা, রাজনৈতিক বিষয়, স্থানীয় বিষয় থাকে। কমিশন সর্বোচ্চ সতর্কতা নিরপেক্ষতা এবং যৌক্তিক বিবেচনায় নিয়ে সীমানা নির্ধারণ করেছে। সীমানার চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে কোনো আদালতে অভিযোগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সীমানা নির্ধারণে কোন বিষয় প্রায়োরিটি দেওয়া হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কোথাও প্রশাসনিক বিষয় একমাত্র নিলে এক ধরণের সমস্যা হয়৷ আবার ভৌগোলিক বাদ দিলে এক রকম সমস্যা হয়৷ কাজেই সবকিছুই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
গাজীপুরে বাড়লো, বাগেরহাটে কমলো কেনো- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ভোটার সংখ্যারভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি ছিল গাজীপুরে, কম বাগেরহাটে। ৪ লাখ ২০ হাজার ছিল গড়। এটাও ধরলে বাগেরহাটে কমই থাকে৷ এক্ষেত্র বিশেষে ভোটার সংখ্যা আমলে নেওয়া হয়েছে। আমরা বিব্রত নই। শতভাগ ত্রুটিমুক্ত করার চেষ্টা করেছি।
কোথাও আনন্দ আবার কোথাও বিক্ষোভ চলছে এ বিষয়ে আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আইনের ভাষায় কোনো লাভ আছে বলে মনে হয় না।
সীমানা নির্ধারণ প্রসঙ্গে এই কমিশনার আরও বলেন, ভোটের ফিগার, প্রশাসনিক এলাকা ও ভৌগোলিক অবস্থা নিয়ে সীমানা পরিবর্তন করেছি। ৬৪ জেলার এই ভোটারের সংখ্যা এভারেজ সংখ্যা টোটাল সংখ্যা এগুলোর ওপর একটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কাজটি করা হয়। এখন আন্দোলন কারা করছে এটা আপনারা ভালো জানেন। তারা কী বলতে চাচ্ছে, এটা তো আমরা জানি না। আমাদের কাছে ওইভাবে এখনো কেউ আসেনি, আমরা জানি না।
তিনি বলেন, আমি তো শুরুতেই বলেছি- কমিশন সর্বোচ্চ সতর্কতা, নিরপেক্ষতা এবং যৌক্তিক বিষয় বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং এই গ্যাজেট প্রকাশ করেছে।
এমওএস/এনএইচআর/জেআইএম