ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য এবার অন্তত ৪৬টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) ইসি সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত ৩০০ আসনের পুনর্নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকার চূড়ান্ত তালিকার গেজেট প্রকাশ করা হয়।
সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ২৫৪টি সীমানা বহাল রাখা হয়েছে, বাকিগুলোয় পরিবর্তন এসেছে।
এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন ইসি ৩০ জুলাই ৩০০ আসনের খসড়া প্রকাশ করেছিল। এরপর দাবি-আপত্তি শুনানি শেষে তা নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানান, এবার গাজীপুরে গতবারের চেয়ে একটি আসন বাড়িয়ে ৬টি করা হয়েছে। বাগেরহাটের একটি আসন কমিয়ে ৩টি আসন করা হয়েছে।
চূড়ান্ত সীমানা নিয়ে আর কোনোভাবে আদালতের শরণাপন্ন হওয়ার সুযোগ নেই আর।
‘এবার খুব সুচারুভাবে ও বিশেষায়িত কমিটি দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরা সীমানা নির্ধারণ করেছি। এখন নির্বাচন প্রস্তুতির অন্যান্য কাজ খুব দ্রুত শেষ হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল কাজটি শেষ হওয়ায় ইসির কাজের অগ্রগতি দৃশ্যমান হলো’ বলেন এ নির্বাচন কমিশনার।
সংসদীয় এলাকা চূড়ান্ত হওয়ায় সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নিজেদের দ্রুত গুছিয়ে নিতে পারবেন।
যেসব আসনের পরিবর্তন এলো
>> পঞ্চগড়-১ ও ২;
>>রংপুর-১ ও ৩;
>>সিরাজগঞ্জ-১ ও ২;
>>পাবনা-১ ও ২;
>>বাগেরহাট-১, ২ ও ৩;
>>সাতক্ষীরা-২, ৩ ও ৪;
>>মানিকগঞ্জ-২ ও ৩;
>>ঢাকা-২, ৪, ৫, ৭, ১০ ও ১৪;
>>গাজীপুর-১, ২, ৩, ৫ ও ৬;
>>নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪ ও ৫;
>> ফরিদপুর-২ ও ৪;
>>শরীয়তপুর-২ ও ৩;
>> ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩;
>>কুমিল্লা-১, ২, ৬ ও ১০;
>>নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫ এবং চট্টগ্রাম-৭ ও ৮।
গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় এবার সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন বেশি এসেছে। এবার অন্তত ৪৬টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এলো।
যদিও গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন ৩৯টি আসনের সীমানা পরিবর্তন করে খসড়া তালিকা প্রকাশ করে। এর মধ্যে ঢাকা-৩, কুমিল্লা-৯, ঢাকা-১৯, সিলেট-১ আগের অবস্থায় ফিরেছে এবং সেই সঙ্গে আরও কিছু আসনে দাবি-আপত্তি আসায় পরিবর্তন এসেছে।
আরও পড়ুন
খসড়া নিয়ে ৮৪টি আসনের আপত্তি এবং সুপারিশ আবেদন জমা হয় ১ হাজার ৮৯৩টি। গত ২৪ থেকে ২৭ আগস্ট টানা চার দিন ওইসব আবেদনের শুনানির পর চূড়ান্ত এই তালিকা প্রকাশ করে ইসি। এতে দেখা যাচ্ছে, ওই খসড়া তালিকায় যেসব আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়েছিল, সেগুলো আবারও পরিবর্তন করে চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করলো নির্বাচন কমিশন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল আগামী ডিসেম্বরে এবং আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটগ্রহণের কথা রয়েছে।
গত চার নির্বাচনে সীমানায় যত পরিবর্তন
এর আগে ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালের পর ২০০৮ সালে সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। ওই বছর নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৩৩ আসনে সীমানা পরিবর্তনের প্রস্তাব করে ইসি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ১২টি আসনে পরিবর্তন: সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ৩৮টি আসনে দাবি-আপত্তির আবেদন এলেও ১০-১২টি আসনের বিষয়ে যুক্তিতর্ক ও বিশ্লেষণই বেশি আমলে নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়।
এক ডজন আসনে সামান্য পরিবর্তন এনে গেজেট হয় ২০২৩ সালের ৩ জুন।
একাদশে ২৫টিতে: একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে খসড়া প্রকাশ করে দাবি-আপত্তি ও নিষ্পত্তি শেষে ৩০ এপ্রিল ৩০০ আসনের গেজেট হয়।
খসড়ায় ৪০ আসনে পরিবর্তনের প্রস্তাব করে; পরে ২৫টি আসনে ছোটোখাটো পরিবর্তন আনা হয়।
দশমে অর্ধশত আসনে: দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ৮৭টি সংসদীয় আসনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করে ইসি। এ খসড়া প্রস্তাবের ওপর দাবি-আপত্তি শুনানি শেষ হয় এপ্রিলে।
সব বিষয় পর্যালোচনা করে ৫০টি আসনে ছোটোখাটো পরিবর্তন করে ২০১৩ সালের ৩ জুলাই সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়।
নবম সংসদে শতাধিক আসনে পরিবর্তন: ২০০৮ সালে সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। ওই বছর নবম সংসদ নির্বাচনের জন্য ১৩৩ আসনে সীমানা পরিবর্তনের প্রস্তাব করে ইসি।
এমওএস/এমআইএইচএস