কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা যেন নতুন মাত্রা পাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়া সীমান্তে এবার এক অভিনব অস্ত্র ব্যবহার করছে উত্তর কোরিয়া। সীমান্তে স্থাপন করা হয়েছে বিশাল সাউন্ডবক্স, যা অনবরত বিকট শব্দ ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না। কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, রাতের ঘুমও হারাম হয়ে গেছে।
‘শব্দ বোমা’র অত্যাচার
মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুসারে, দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তে বসানো এই শব্দযন্ত্র দিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিরক্তিকর শব্দ উৎপাদন করা হচ্ছে। কখনো ভূতুড়ে চিৎকার, কখনো ভেঙে পড়ার বিকট শব্দ, যা স্থানীয়দের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ডাংসান এলাকার বাসিন্দারা একে বলছেন, ‘শব্দ বোমা।’
সীমান্তের গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন, দিন-রাত একনাগাড়ে এই সাউন্ডবক্সগুলো চালানো হচ্ছে। ফলে নিদ্রাহীনতা, মাথাব্যথা এবং মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন অনেকে। কেউ কেউ বলছেন, এটি যেন কোনো গোলাবারুদ ছাড়াই আমাদের ওপর বোমা নিক্ষেপের মতো। এর ভয়াবহতা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
দুই কোরিয়ার সংঘাতের নতুন অধ্যায়
চলতি বছরের জুলাই থেকে উত্তর কোরিয়া সীমান্তের দিকে লাউডস্পিকার বসিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে এই ‘শব্দ যুদ্ধ’ চালিয়ে যাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অভিযোগ, এটি কিম জং উনের একতরফা উসকানি। এর আগে মে মাসে কিমের দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে আবর্জনা ভর্তি বেলুন পাঠিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল।
জবাবে দক্ষিণ কোরিয়া সীমান্তে লাউডস্পিকার স্থাপন করে কোরীয় পপ গান ও পিয়ংইয়ং-বিরোধী খবর সম্প্রচার শুরু করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিম এবার সেই কার্যক্রমের পাল্টা জবাব দিতে ‘শব্দ বোমা’ প্রয়োগ করছে।
উত্তেজনা যুদ্ধের দিকে?
বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্তের এই শব্দযুদ্ধ দুই কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা চরমে নিয়ে গেছে। সীমান্তে এমন পরিস্থিতি যেকোনো সময় বড় আকারের সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে। দুই কোরিয়ার এমন উত্তেজনাপূর্ণ আচরণ শুধু আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলছে না, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
প্রশান্ত মহাসাগরের এই দুই প্রতিবেশী দেশ কি এই উত্তেজনা পেরিয়ে নতুন কোনো সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে? না কি বৈশ্বিক কূটনীতির মাধ্যমে শান্তির পথে ফিরে আসবে—এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই বলে দেবে।