মুসলমানদের পরস্পরে অভিবাদন ও সম্ভাষণ জানানোর সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো সালাম। সালামের মূল অর্থ হলো শান্তি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের গুণবাচক নামগুলোর একটি হলো সালাম। ইসলাম শান্তির ধর্ম, এ কথার মূল উৎপত্তি সালাম শব্দ থেকেই। শান্তির প্রতীক সালামের সূচনা হয়েছে জান্নাতে হজরত আদম (আ.) ও ফেরেশতাদের পরস্পর সালাম আদান-প্রদানের মাধ্যমে। আবার মানুষ যখন পরকালে জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন ফেরেশতারা তাদের সালাম দিয়ে অভিবাদন ও সম্ভাষণ জানাবে। এমনকি জান্নাতের একটি নাম হলো দারুস সালাম। জান্নাতিরাও পরস্পরকে সালামের মাধ্যমে অভিবাদন জানাবে। আর মহান আল্লাহ নিজেই জান্নাতিদের সালাম জানিয়ে বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করবেন।
সালাম হালকা ও স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়, বরং এটি হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। তাই সালামকে দোয়ার নিয়তে বলা ও শোনা উচিত। এটি নিছক সামাজিক রীতি, সৌজন্য বা সংস্কৃতিক আচার-আচরণ নয়। বরং এটি ইসলামী সংস্কৃতির একটি অন্যতম স্তম্ভ। এটি এমন এক স্তম্ভ, যার দ্বারা মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে পার্থক্য হয়ে দাঁড়ায়। তাই বলা যায়, মুসলিমদের এক অন্যতম নিদর্শন হলো সালাম। সালাম মানুষকে অহংকার থেকেও মুক্তি দেয়। সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে আদব হলো ছোটরা বড়দের সালাম দেবে। তবে বড়রা ছোটদের সালাম দেওয়াও সুন্নত। রাসুল (সা.) ছোটদের সালাম দিতেন। (বুখারি: ৬২৪৭)
ইসলামে সালামের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা মুমিন হবে। আর তোমরা মুমিন হতে পারবে না, যে পর্যন্ত না পরস্পরকে মহব্বত করবে। আমি কি তোমাদের এমন কাজের কথা বলব না, যে কাজ করলে তোমরা একে অন্যকে মহব্বত করবে? তা হলো তোমরা নিজেদের মাঝে সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটাবে। (মুসলিম: ৫৪; তিরমিজি: ২৬৮৯)।
আলোচিত হাদিস থেকে বুঝে আসে মুসলমানদের মধ্যে পরস্পরে মহব্বত তৈরি করে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনতে এবং পরকালে জান্নাতের অধিকারী হতে সালামের ব্যাপক প্রসার আবশ্যক। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, হে লোক সকল! তোমরা ব্যাপকভাবে সালামের প্রসার ঘটাও এবং অভাবীদের আহার করাও, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করো এবং মানুষ যখন গভীর রাতে ঘুমিয়ে থাকে তখন তোমরা নামাজ পড়ো, তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি: ২৪৮৫)
সালাম নেকি অর্জনেরও মাধ্যম। সালাম দেওয়ার দ্বারা নেকি পাওয়া যায়। হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) বর্ণনা করেন, এক লোক নবীজির (সা.) কাছে এসে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সালাম দিলে তিনি উত্তর দেন। এরপর লোকটি বসে পড়ল। নবীজি (সা.) বললেন, দশ নেকি। কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম দিল। নবীজি জবাব দিলেন। এরপর লোকটি বসে গেলে নবীজ বললেন—বিশ নেকি। কিছুক্ষণ পর তৃতীয় আরেকজন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’ বলে সালাম দিল। নবীজি জবাব দিলেন। এরপর সে বসার পর বললেন—ত্রিশ নেকি। (তিরমিজি: ২৬৮৯; আবু দাউদ: ৫১৯৫)। আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে।’ (বুখারি: ৬২৩৬; মুসলিম: ৩৯)।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সালামের ব্যাপক প্রসার ঘটানোর তওফিক দান করুন।
লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক

5 hours ago
8









English (US) ·