সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চসমূহে কাগজমুক্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হবে

1 day ago 4

চলতি বছরে পর্যায়ক্রমে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চসমূহে কাগজমুক্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চে কাগজমুক্ত বিচারকাজ গতকাল রোববার (০৫ জানুয়ারি) শুরু হয়েছে।

কাগজমুক্ত বিচারকাজ শুরু হওয়ায় হাইকোর্ট বেঞ্চের বিচারপতি বিষয়টিকে নতুন যুগে প্রবেশ বলে মন্তব্য করেছেন। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও একটি নতুন অধ্যায় শুরু হলো বলে আইনজীবীরা জানান।

বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্টের একক কোম্পানি বেঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম এই ধরনের বিচারকাজ শুরু হলো।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ ঘোষিত রোডম্যাপের সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিচার সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য বিভিন্নমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের কোম্পানিসংক্রান্ত একটি বেঞ্চে সম্পূর্ণ কাগজমুক্ত বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হলো।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব তত্ত্বাবধায়ন ও উদ্ভাবনে ওই বেঞ্চের সকল কাগজাদি অনলাইনে জমা প্রদানের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুত করা হয়। চলতি ২০২৫ সালে পর্যায়ক্রমে সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বেঞ্চসমূহেও পেপার ফ্রি কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা প্রধান বিচারপতি রয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে দেশের জেলা আদালতসমূহেও সম্পূর্ণ পেপার ফ্রি বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আশা প্রকাশ করেন।

বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্টের একক কোম্পানি বেঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম এই ধরনের বিচারকাজ শুরু হলো। প্রথম দিন দুটি মামলার আবেদন অনলাইনে জমা পড়েছে বলে এজলাসে বসে বিচারপতি আইনজীবীদের জানান। যে দুটি আবেদন জমা পড়েছে তার একটির আইনজীবী হলেন মো. জামিল খান। তিনি বলেন, অনলাইনে একটি ম্যানশন স্লিপ জমা দিয়েছেন তিনি। আরও কয়েকটি আবেদন প্রস্তুত আছে জমা দেওয়ার জন্য।

শুনানি করার সময় আইনজীবীদের উদ্দেশে বিচারপতি আহমেদ সোহেল অনলাইনে মামলা ফাইল করার পরামর্শ দেন। এরপর তালিকায় থাকা মামলাগুলোর স্বাভাবিক শুনানি করা হয়। তিনি আইনজীবীদের বলেন, সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এই বিষয়ে একটি ভিডিও দেওয়া আছে। এতে কীভাবে ফাইল করতে হবে তা বলা হয়েছে। সকলে এতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন বলে বিচারপতি বলেন।

করোনার সময় অনলাইনে শুনানির বিষয় স্মরণ করিয়ে বিচারপতি বলেন, তখন প্রথম প্রথম ঝামেলা মনে হলেও পরে আইনজীবীরা এতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। 

আদালত তখন বলেন, এখন তো সব অনলাইন, আমরা নতুন যুগে প্রবেশ করলাম।

মামলা করার ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার বিষয়ে অ্যাডভোকেট মো. জামিল খান বলেন, সংশ্লিষ্ট সেকশন থেকে প্রথমে একটি পাসওয়ার্ড নিতে হবে। এরপর নিজের একটি আইডি খুলতে হবে। কোনো মামলা ফাইল করার সময় আবেদনের অংশটি পিডিএফ করে নিজের আইডি দিয়ে সংশ্লিষ্ট সেকশনে ঢুকে আপলোড করতে হবে। এরপর ওই পাতার প্রিন্ট কপি নিয়ে আবেদনের অন্যান্য কাগজসহ এফিডেভিট করতে হবে। পরে সেই এফিডেভিট করার ফাইল নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোর্টে শুনানি করতে হবে। শুনানি এখন এজলাসে হবে। পরে অনলাইনে করার ব্যবস্থা হলে করা যাবে বলেও তিনি বলেন।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এডভোকেট ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, সকল কাগজাদি অনলাইনে জমা প্রদানের অনলাইন প্লাটফর্ম প্রস্তুত করে পেপার ফ্রী বিচারিক কার্যক্রম শুরু একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বিচার বিভাগকে যুগোপযোগী, জনগণের হয়রানি লাঘবসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং বিচার বিভাগকে প্রভাবমুক্ত করতে রোডম্যাপ ঘোষণা নজিরবিহীন উদ্যোগ। রোডম্যাপের আলোকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন অগ্রগতি আইনজীবী সমাজসহ জনগণের মাঝে নতুন আসার সঞ্চার হয়েছে।

গত ৩১ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নতুন বছর কাগজমুক্ত বিচারকাজ শুরু করার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের প্রত্যাশার কথা জানানো হয়।

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ১১ আগস্ট শপথ গ্রহণ করেন। প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বচ্ছতা ও প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষতা আনয়নের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রয়াস হিসেবে তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। বিগত ২১ সেপ্টেম্বর ঘোষিত ওই রোডম্যাপে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের অর্থপূর্ণ সংস্কার নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ঘোষিত হয়। পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বাধীন কাউন্সিল গঠন, অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদায়ন নীতিমালা প্রণয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ ঘোষিত রোডম্যাপের আলোকে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী অন্যান্য পরিকল্পনাসমূহও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বিশেষ করে, ই-জুডিসিয়ারি বাস্তবায়নে প্রধান বিচারপতি বদ্ধপরিকর। দেশের উচ্চ আদালত ও জেলা আদালতসমূহের বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে ই-জুডিসিয়ারির আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

Read Entire Article