মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর ওপর নির্মিত পেঁচারকান্দা সেতুর আকার বৃদ্ধি এবং সংস্কার কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে ছয় মাসে আগে। তবে এখনো কাজ বাকি আছে ৩৫ শতাংশ। নদী পারাপারে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এ পথে চলাচলকারী সিংজুরী, পয়লা ও বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। জরুরি প্রয়োজনে ঝুঁকি নিয়ে কাঠের মই ব্যবহার করে সেতু পার হচ্ছেন স্থানীয়রা।
ঢুলন্ডি-সিংজুরী আঞ্চলিক পাকা সড়কের পেঁচারকান্দা এলাকায় সেতুটির দক্ষিণ পাশে বালিয়াখোরা উচ্চ বিদ্যালয়, বালিয়াখোরা ইউনিয়ন ভূমি অফিস, পেঁচারকান্দা বাজার এবং সেতুর উত্তর পাশে ধুলন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংজুরি বাজার, বালিয়াবাঁধা উচ্চ বিদ্যালয়, সিংজুরি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ও সিংজুরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। সেতুটির দুপাশে হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেতু সংস্কারের কাজ শুরু হয় গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর। চলতি বছরের ২০ জুলাইয়ের মধ্যে তা বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও কাজ শেষ হয়নি। এ অবস্থায় সেতুর উপকারভোগীদের যানবাহন নিয়ে জেলা সদরে যেতে হচ্ছে কমপক্ষে ১৫ কিলোমিটার ঘুরে। এতে এলাকার শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, কৃষকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এ সড়কে প্রতিদিন সিংজুরী, পয়লা ও বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের মানুষজন যাতায়াত করে থাকেন।
ঘিওর উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানিয়েছে, ২০০৮ সালে এলজিইডির অধীনে পেঁচারকান্দা বাজারসংলগ্ন ধলেশ্বরী নদীর ওপর ১০০ দশমিক ১০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু বন্যার ভাঙনে উত্তর পাশে সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক নদীতে বিলীন হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২ কোটি ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৫ দশমিক ৮ মিটার সেতুর বৃদ্ধি ও সম্পূর্ণ সেতুর সংস্কারকাজ হাতে নেয় এলজিইডি। এ কাজের দায়িত্বে রয়েছে জামালপুর জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিতু ট্রেডার্স।
সরেজমিন দেখা গেছে, আটজন শ্রমিক দিয়ে চলছে সেন্টারিংয়ের কাজ। নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত ছয় মাস অতিবাহিত হলেও এখনো কাজ বাকি আছে এক তৃতীয়াংশ। সেতুর উত্তর পাশে একটি কাঠের পাটাতন পাড়িয়ে ১৪-১৫ ফুট ওপরে সেতুতে উঠতে হচ্ছে চলাচলরত পথচারীদের। এতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজে অবহেলা করছে। প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প শ্রমিক এবং মাঝেমধ্যেই সাইটে কাজ বন্ধ থাকার ঘটনা ঘটেছে হরহামেশাই। কাজের মান নিয়েও রয়েছে স্থানীয়দের মাঝে সংশয়।
সিংজুরি ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নির্মল কুমার বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে ৪০০ শিক্ষার্থী। এর অর্ধেক ছেলেমেয়ে নদীর ওপারের বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসে। দুই বছর সময় ধরে পেঁচারকান্দা সেতুটা অকেজো। শিক্ষার্থীরা মই বেয়ে যাওয়া-আসা করে। এই ঝুঁকিপূর্ণ যাওয়া-আসায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে।’
সিংজুরি ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী গণি মিয়া বলেন, ‘কৃষিপ্রধান এই অঞ্চলের প্রায় পাঁচ হাজার কৃষককে শস্য হাট-বাজারে নিতে অতিরিক্ত ১৫ কিলোমিটার সড়ক ঘুরে উপজেলা সদরে যেতে হচ্ছে। অতিরিক্ত সড়ক পথে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে তাদের। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এই অঞ্চলের কৃষক।’
পেঁচারকান্দা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি ও মুদি ব্যবসায়ী আসলাম মিয়া বলেন, ‘আগে আমাদের বেচাবিক্রি ভালো ছিল কিন্তু এখন নেই। সেসময় লোকজনের যাতায়াত ছিল বেশি। বিকেল বেলায় নদীপাড়ে দূরে থেকেও লোকজন আসতো। এখন ব্যবসা ধরে রেখেছি মাত্র। সেতুটা দ্রুত সচল হলে আমাদের জন্য ভালো।’
জনগণের ভোগান্তি লাগবে সেতুটির কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানান বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান। তিনি বলেন, তিনটি ইউনিয়নের মানুষজনের চলাচলে খুবই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য পরিবহনে দ্বিগুণ অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।
কত সময় নাগাদ কাজ শেষ হতে পারে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি পিন্টু সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘সামনে জানুয়ারি মাসেই কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় নির্বাচন এবং বর্ষা মৌসুমের কারণে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে। শ্রমিক না পাওয়ার কারণেও কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।’
এ ব্যাপারে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমানে সেতুর কাজ চলমান। শিডিউল অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এ কাজে নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ বাস্তবায়নের জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে।’
এসআর/জেআইএম