পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত দখল করে গড়ে ওঠা একটি মার্কেটকে পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের জন্য ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে সাইনবোর্ড দিয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষ। অথচ সেই মার্কেটটি বর্ধিতকরণের কাজ শুরু হয়েছে।
‘সরদার মার্কেট’ নামের মার্কেটটি টাইলস্ মার্কেট নামেই বেশি পরিচিত। এটি নির্মাণ করা হয়েছে কাঠ, টিন ও লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে। এখন এটির দ্বিতীয় তলায় কাঠের মাচার ওপর ইট-সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট। এতে মার্কেটটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মার্কেটটির নিচতলায় ৪০-৫০টি দোকান রয়েছে। সারাবছরই পর্যটকরা এসব দোকানে কেনাকাটা করেন। গত বছর নভেম্বরে মার্কেটটির পাশে সাইনবোর্ড দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে কুয়াকাটা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘এই স্থাপনাটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ, যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সম্মানিত পর্যটকবৃন্দ ও ব্যবসায়ীগণকে সাবধানতা অবলম্বন করার অনুরোধ করা হলো।’
এরপরও মার্কেটটিকে বর্ধিত করছেন এর মালিক দাবি করা সাজেদুল ইসলাম হিরু। তবে সৈকতের মালিকানা সরকারের, এখানে মার্কেট করার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
সম্প্রতি কুয়াকাটা সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতের জিরো পয়েন্টে প্রায় দুইশো ফুট দৈর্ঘ্যের মার্কেটটির পশ্চিমপাশ পুরোপুরি সৈকতের ভেতরে। জোয়ারের পানি সবসময় এই মার্কেটে এসে আছড়ে পড়ে। স্থাপনাটিকে আরও প্রায় ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যে বর্ধিত করা হচ্ছে। এ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে সৈকতের বালু। স্থাপনাটি বর্ধিত করায় মার্কেটের অর্ধশত ব্যবসায়ীও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কেটের এক দোকানি জানান, সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ায় মার্কেটটি ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকির মধ্যে আছেন। মার্কেটটি বর্ধিত করলে আরও বেশি ঝুঁকি তৈরি হবে। ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ব্যবসায়ীরা গরিব বলে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেন না। বললে তাদের উঠিয়ে দেওয়া হবে। ব্যবসা না করলে তারা খাবেন কী?
কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে. এম বাচ্চু বলেন, কুয়াকাটায় স্থায়ী কোনো মার্কেট না থাকায় এই মার্কেটটি কিছুটা হলেও পর্যটকদের প্রসাধনীসহ বিভিন্ন পণ্য কেনার গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে বিবেচিত। তবে সমুদ্র সৈকতে মার্কেট নির্মাণ করায় এটি ধসে যেতে পারে। তাই পৌরসভা এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সাইনবোর্ড দিয়েছে।
তবে পুরোপুরি সৈকতের মধ্যে গড়ে ওঠা মার্কেটটিকে কীভাবে বর্ধিত করা হচ্ছে তা তার জানা নেই। এখানে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে শত শত পর্যটকের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সৈকত দখল করার কারণে সৈকতের সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে মার্কেটের মালিক সাজেদুল ইসলাম হিরু মার্কটের জমি নিজের দাবি করে জানান, এই জমির মালিক তিনি। তার জমির অনেকাংশ সমুদ্রের মধ্যে রয়েছে। এটা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বারবার বৈঠক হয়েছে, আবারও হবে। এই স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। প্রকৌশলীর পরামর্শ নিয়ে এ স্থাপনার কাজ করা হয়েছে।
কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসীন সাদেক বলেন, এ বিষয়ে শিগগির আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমুদ্র সৈকতের মালিক একমাত্র সরকার। এখানে ব্যক্তি মালিকানার কোনো সুযোগ নেই। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এফএ/এমএস