উত্তরাঞ্চলের জেলা নীলফামারীকে মানুষ যত চেনে না, তার চেয়ে ঢের চেনে শিল্প-বাণিজ্যে সমৃদ্ধ উপজেলা সৈয়দপুরকে। আয়তনে ছোট হলেও প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের বাস এখানে। প্রতিদিন জেলার অন্যান্য উপজেলাসহ আশপাশের জেলা শহর থেকেও এখানে কয়েক হাজার লোক প্রয়োজনে আসেন। ফলে শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারের সঙ্গে বাড়ছে জনসংখ্যা ও যানবাহন। এসব যানবাহনের যত্রতত্র পার্কিং, ফুটপাত দখলসহ অব্যবস্থাপনায় শহরে যানজট সমস্যা পৌরবাসীর নিত্যদিনের ভোগান্তি কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। ট্রাফিক পুলিশও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সৈয়দপুর-রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারীসহ পাঁচটি সড়কের সংযোগস্থল পাঁচমাথা মোড়। পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ, কার ও মাইক্রোবাসের সঙ্গে চার হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে শহরে। এসব পরিবহন শহরে দাঁড়ানোর নির্ধারিত স্ট্যান্ড নেই। ফলে যত্রতত্র যানবাহন দাঁড় করিয়ে যাত্রী ও পণ্য ওঠানামা করেন চালকরা।
এদিকে শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে রেলওয়ের জায়গায় অসংখ্য বহুতল মার্কেট গড়ে উঠেছে। তবে পার্কিংয়ের জন্য কোনো জায়গা রাখা হয়নি। অথচ মার্কেটগুলোয় ব্যাংক-বীমাসহ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কেনাবেচা চলছে। বাধ্য হয়ে গ্রাহকরা ব্যক্তিগত যানবাহন সড়কে রেখে কেনাকাটা করেন।
শহীদ ডা. শামসুল হক সড়কের দোকানগুলোর সামনে দোকানের ভাড়াটিয়ারাই ফুটপাতটি আরেকজনকে ভাড়া দিয়েছেন। পোস্ট অফিস মোড় ও পুলিশ বক্সের সামনে দোকানগুলো অস্থায়ী অবকাঠামোর হলেও যুগযুগ ধরে রাস্তা দখল করে তারা ব্যবসা করে আসছেন।
জানা যায়, এছাড়া পৌরসভায় প্রায় দুই হাজার রিকশা, ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার লাইসেন্স থাকলেও চার হাজারের বেশি এসব যানবাহন শহরে চলাচল করছে। আবার বাহিরের জেলা থেকেও দুই হাজার মতো অটোরিকশা ঢুকছে। এসব যানবাহনের কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
আতাহার হামিদ, আরিফুল ইসলাম ও ওমর ফারুক নামে কয়েকজন পথচারী বলেন, আগে দেখতাম দিনের বেলায় যানজট থাকতো। এখন রাত ১১টা পর্যন্ত বিএনপি অফিস থেকে পুলিশ বক্স পর্যন্ত যানজট লেগেই থাকে। ৪০০ মিটার সড়ক পার হতে সর্বোচ্চ ৪ মিনিট লাগার কথা, সেখানে ৪০ মিনিট পর্যন্ত লেগে যায়। অথচ পৌর প্রশাসন যানজট নিরসনে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগেই নিচ্ছে না।
বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জানান, বিমানবন্দরের কারণে সৈয়দপুর ছাড়াও আশেপাশের জেলা উপজেলা থেকে প্রতিদিন শতাধিক মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কারসহ অসংখ্য যানবাহন শহরে প্রবেশ করায় যানজটের মাত্রা আরও বেড়ে যায়া। তাই সড়কগুলো প্রশস্ত করাসহ ফুটপাতগুলো উচ্ছেদ করা জরুরি হয়ে গেছে। তা না হলে শহরে বাস করাই কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।
এদিকে জনবল সংকটসহ নানা কারণে যানজটমুক্ত করা যাচ্ছে না বলে জানান ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মাহফুজার আলম। তিনি বলেন, মূলত চারটি কারণে সৈয়দপুর শহরে যানজট বেড়েছে। এগুলো হচ্ছে- অতিরিক্ত অটোরিকশা চলাচল, ফুটপাত দখল করে ফলের দোকান ও কাপড়ের দোকান বসা, যত্রতত্র অটোরিকশা রেখে যাত্রী ওঠানো-নামানো এবং দিনের বেলায় শহরের ভেতর দিয়ে পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ। এসব কারণে শহরের ব্যস্ততম পাঁচমাথা মোড়, মদিনা মোড়, তামান্না সিনেমা হলের সামনে ও পোস্ট অফিস মোড়ে সব সময় যানজট লেগেই থাকে।
সৈয়দপুর পৌর প্রশাসক নুর-ই আলম সিদ্দিকী জাগো নিউজকে বলেন, শহরকে যানজট মুক্ত করতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। ব্যক্তি সচেতনতা তৈরি করতে একটি নাগরিক কমিটিও গঠন করা হবে। কারণ এর স্থায়ী সমাধানের জন্য সচেতনাত বেশি জরুরি। এতে কাজ না হলে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবেন বলে তিনি জানান
আমিরুল হক/এমএন/এমএস