বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষায় কক্সবাজারে সফলভাবে শুরু হওয়া দক্ষতাকেন্দ্রিক সাক্ষরতা ‘স্কিলফো’ প্রকল্প এখন সারাদেশে চালু করছে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ১৬ জেলায় লাখেরও বেশি কিশোর-কিশোরী প্রাথমিক সাক্ষরতা এবং চাকরির বাজারের চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পাবে।
শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীতে ‘বিদ্যালয় বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের জন্য স্কিলফো পাইলট প্রকল্পের সফল সমাপ্তি উদযাপন করা হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ইউনিসেফ।
এতে বলা হয়, এ প্রকল্পের মাধ্যমে এরই মধ্যে প্রায় সাত হাজার কিশোর-কিশোরী উপকৃত হয়েছে। এবার দেশের ১৬ জেলায় সম্প্রসারণের ফলে এক লাখের বেশি বিদ্যালয়বহির্ভূত ও এনইইটি (নট ইন এডুকেশন, এমপ্লয়মেন্ট অর ট্রেনিং) কিশোর-কিশোরী প্রাথমিক সাক্ষরতা এবং বাজারের চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পাবে।
প্রকল্পের এলাকা নির্বাচন করা হয়েছে- যুব জনসংখ্যা, স্থানীয় পর্যায়ে দক্ষতার চাহিদা এবং চাকরির বাজারের সম্ভাবনা বিবেচনায়। স্কিলফো মডেলের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীরা কার্যকর সাক্ষরতা, গণনাদক্ষতা, কারিগরি ও ডিজিটাল সাক্ষরতা অর্জন করছে, যা বাংলাদেশ জাতীয় যোগ্যতা কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার জানান, স্কিলফো মডেল সামান্য পরিবর্তন করে দেশের ৬৪ জেলাতেই বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি শিক্ষার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনবে এবং দক্ষতাকেন্দ্রিক শিক্ষা নেতৃত্বের জায়গায় চলে আসবে।’
ইউনিসেফের কারিগরি সহায়তা ও গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশন অ্যাকসেলারেটেড ফান্ডের অর্থায়নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো (বিএনএফই) স্কিলফো মডেল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে। প্রতি বছর শ্রমবাজারে প্রবেশ করা ২২ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ১ দশমিক ৯ শতাংশ আনুষ্ঠানিক দক্ষতা প্রশিক্ষণ পায়। এ প্রেক্ষাপটে স্কিলফো মডেল দক্ষতার ঘাটতি পূরণে অবদান রাখছে।
বাংলাদেশে নবনিযুক্ত ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘স্কিলফো প্রমাণ করেছে যে, সঠিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি এবং সহায়তার মাধ্যমে বিদ্যালয়বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের ক্ষমতায়ন সম্ভব। এখন এটি জাতীয় পর্যায়ে সম্প্রসারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক করার সময় এসেছে।’
বিশ্বজুড়ে ইউনিসেফের দক্ষতা কর্মসূচির সহায়তায় স্কিলফো কিশোর-কিশোরীদের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করে কর্মসংস্থানের পথে এগিয়ে নিচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রকল্পে কিশোরীদের (৮৩ দশমিক ১ শতাংশ) তুলনায় ছেলেদের (৮১ দশমিক ৩ শতাংশ) কিছুটা বেশি চাকরিপ্রাপ্তির হার লক্ষ্য করা গেছে।
প্রকল্পের সাফল্যের কারণে স্কিলফো মডেলকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে প্রতিটি কিশোর-কিশোরীর দক্ষতা অর্জন ও উৎপাদনশীল অবদান নিশ্চিতের পথে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জেপিআই/এমএএইচ/জেআইএম