স্কুল ঘেঁষে ইটভাটা, ধোঁয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা 

6 days ago 8
স্কুলের আঙিনায় ছোট্ট শিশুরা যখন আনন্দের সঙ্গে পা দুলিয়ে দোলনায় দোল খাচ্ছেন ঠিক তখনই স্কুলে ঘেঁষে থাকা দুই ইটভাটা থেকে বের হচ্ছে ক্ষতিকর ধোঁয়া। আর সেই ধোঁয়ায় চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে শিশুশিক্ষার্থীরা। আবার অনেকে অসুস্থও হচ্ছেন। এভাবেই চলছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাদিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২ এর পাশে নির্মিত দুই ইটভাটা। বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরেরও অজানা নয়। তবে পর্যায়ক্রমে অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  এদিকে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) ২০১৯ অনুযায়ী, বিশেষ কোনো স্থাপনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেলপথ, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিংবা অনুরূপ কোনো স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। অথচ নিয়ম না মেনেই স্কুলের সীমানাপ্রাচীরের সঙ্গেই নির্মাণ করা হয়েছে ইটভাটা দুটি।   সরেজমিনে দেখা গেছে, কাদিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০০০ সালে স্থাপিত। সেই স্কুলের সীমানাপ্রাচীরের দুই পাশে নির্মিত হয়েছে মেসার্স এমএস ব্রিকস্ ও এমএইচবি মুন হাওয়া ব্রিকস্। দুটি ইটভাটাই চালু আছে। দিনের বেলায়ও পোড়ানো হচ্ছে ইট। আর স্কুলে সামনের আঙিনায় বসানো আছে শিশুদের দোলনা ও স্লাইডার। সেখানে অবসর সময়ে খেলাধুলা করছিল ছোট্ট শিশুরা। ঠিক তখনই পাশ থেকে ভেসে আসছিল ক্ষতিকর ধোঁয়ার কুণ্ডলী আর ধুলাবালি। স্কুলের ক্লাস রুমগুলোর প্রতিটিরই জানালা বন্ধ। শিক্ষার্থীরা জানালেন তারা কখনোই জানালা খুলে ক্লাস করতে পারে না। জানতে চাইলে স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী হুমাইরা আফরিন বলেন, এখান থেকে ধুলো আসে। অনেক ঘোলা হয়ে যায়। এ কারণে আমাদের হাঁচি হয়, কাশি হয়। পাশের দুটি ভাটার কারণেই আমাদের এমন হয়। আমাদের স্কুল বন্ধ থাকার পর যখন খোলে তখন বেঞ্চগুলো ধুলোয় ভরে যায়। আবু সাঈদ নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, স্কুলের পাশেই ভাটা আছে। এই ভাটায় নোংরা আবর্জনা পুড়ছে। এগুলোর কারণে অনেকেরই কাশি হয়, হাঁচি দেয়। ধুলোর কারণে আমরা জানালা বন্ধ করে রেখেছি। জানালা বন্ধের সময় আমাদেরও শ্বাসকষ্ট হয়। ওই স্কুলের শিক্ষিকা কামরুন নেছা বলেন, আমাদের স্কুলটি প্রত্যন্ত এলাকায়। এখানকার বাচ্চারা অনেক গরিব। বিষাক্ত পরিবেশে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তারা অসুস্থ হলে তাদের পরিবারকেও অনেক কষ্টের মাঝে পড়ে যেতে হয়। তিনি আরও বলেন, আমাদেরও অনেক কষ্ট হয়। এই ধুলাতে আমাদের অফিসের আসবাবসহ অনেক জিনিস নষ্ট হয়ে যায়, ধুলায় মিশে যায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইমাম হোসেন বলেন, আমাদের স্কুলের পাশে যে ভাটাগুলো আছে এগুলো আসলেই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের স্কুলে কোমলমতি শিশুদের জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যঝুঁকির। এগুলো আমাদের শিশুদের ভেতরে যাচ্ছে। তারা অনেক সময় কাশে। আমার চাই শিশুর পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য এগুলো নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করুক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এবিষয়ে জানতে এমএইচবি মুন হাওয়া ব্রিকস মালিক আফজাল হোসেনকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে মেসার্স এমএস ব্রিকস্ এর মালিক ওবাইদুল্লাহ বলেন, স্কুলটি পরে হয়েছে। আমাদের ভাটাটি আগে হয়েছে। ভাটা কত সালে নির্মাণ হয়েছে জানতে চাইলে ‘এখন ব্যস্ত আছি, পরে কথা হবে’ বলে ফোনটি কেটে দেন তিনি। রাজশাহী পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কবির হোসেন বলেন, ওই দুই ভাটা সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। আমরা পর্যায়ক্রমে ভাটাগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।   
Read Entire Article