স্ত্রীর ভারতীয় শাড়ি ফেলে দিলেন রিজভী, পোড়ালেন নেতাকর্মীরা

3 weeks ago 8

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা এবং আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা প্রতিবাদে ‘ভারতীয় পণ্য বর্জনে’র আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক অনুষ্ঠানে রিজভী নিজের স্ত্রী আরজুমান আরা বেগমের দেওয়া ভারতীয় শাড়ি নিজের হাতে ছুড়ে ফেলে দেন। পরে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সেই শাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যারা আমার দেশের পতাকাকে নেমে ছিড়ে দেয়… আমরা তাদের দেশের পণ্য বর্জন করব। তাদের দেশের যে শাড়ি কিনতো আমাদের মা, বোন, স্ত্রীরা তারা আর ভারতীয় শাড়ি কিনবে না। তারা ভারতের সাবান কিনবে না, তারা ভারতের টুথপেস্ট কিনবে না, তারা ভারতের কোনো কিছু কিনবে না।’

‘আমরা স্বনির্ভর। আমার এখানে পেঁয়াজ হয়… ভারতের পেঁয়াজের চেয়ে আমাদের পেঁয়াজের ঝাঁজ অনেক বেশি। ভারতের মরিচের চেয়ে আমাদের মরিচের ঝাল অনেক বেশি। আমাদের যদি জায়গা না থাকে আমরা ছাদের ওপরে মরিচ লাগাব, আমরা বাড়ির উঠানের মধ্যে পেঁপে গাছ লাগাব। তাই আমরা এদের (ভারত) মুখাপেক্ষী হবো না। আমরা ভারতীয় পণ্য বর্জন করব।’

রিজভী বলেন, ‘একটি পুরোনো শাড়ি আমার বাসায় আমার স্ত্রীর ছিলো। আমার স্ত্রী আমাকে দিয়েছে একটি ইন্ডিয়ান শাড়ি। আমি বলেছি আজকে এটা দিয়ে দাও। সে এটা দিয়ে দিয়েছে। এই সেই ইন্ডিয়ান শাড়ি। আমার স্ত্রী সে নিজেই এই শাড়ি দিয়েছে। এটা আজকে আপনাদের সামনে আমি ছুড়ে ফেললাম।

এরপর সামনে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা ভারতবিরোধী স্লোগান দিয়ে ফেলে দেওয়া শাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন।

তখন রিজভী বলেন, ‘আর কোনো ভারতীয় শাড়ি নয়। আমরা টাঙ্গাইলের শাড়ি পড়ব, আমরা রাজশাহীর সিল্ক পড়ব, আমরা কুমিল্লার খদ্দর পড়ব।’

এ সময়ে নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন, ‘বয়কট বয়কট, ভারতীয় পণ্য’।

বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘দেশীয় পণ্য কিনে হও ধন্য’ ব্যানারে ভারতীয় পণ্য বর্জন ও দেশি পণ্য ব্যবহার উৎসাহিত করতে এই অনুষ্ঠানটি হয়।

‘ভারতের পতাকাকে লাঞ্ছিত করব না’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, ‘আপনারা একটু দেবেন… আপনাদের ওপর মুখাপেক্ষী থাকব এটা ভাবার কারণ নাই। যে আপনারা একটু দেবেন আর বলবেন তা শুনতে হবে… এটা দুই-একজন হাসিনার মতো লোক বলতে পারে। কিন্তু কোটি কোটি বাংলাদেশের মানুষ এটা করবে না।’

‘তবে আমার দেশের জনগণকে বলব, ওরা যে বাংলাদেশকে লুণ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে, ওরা যে বাংলাদেশের পতাকা পুড়িয়েছে, আমাদের মর্যাদাহানি করার চেষ্টা করেছে, আমরা ভারতের পতাকাকে লাঞ্ছিত করব না। আমরা আরেকটা স্বাধীন দেশের মর্যাদাকে ছোট করব না। আমরা প্রত্যেক জাতির যে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সেটিকে অসম্মান করব না, আমরা ওদের মতো ছোটলোকি করব না। আমরা ওদের দেশের পতাকাকে সম্মান করব কিন্তু ওদের পণ্য বর্জন করব।’

ভারতীয়দের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, ‘তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করছো। তোমরা আমাদের পছন্দ করো না। তারপরও তোমাদের জিনিস আমাদের কিনতে হবে?’

‘বাংলাদেশের মানুষ তো মাথানত করার মানুষ না। আমরা এক বেলা খেয়ে থাকব। তারপরও আমরা মাথানত করবো না’

‘আপনারা কি বিনা পয়সায় চিকিৎসা দেন’

রিজভী বলেন, ‘ভারতের অনেক সাংবাদিক, অনেক রাজনৈতিক নেতা বলেন যে, তাদের (ভারতে) ওখানে না গেলে আমাদের (বাংলাদেশের মানুষের) চিকিৎসা হয় না। আমি প্রশ্ন করি, আরে আপনারা কি বিনা পয়সায় চিকিৎসা দেন? আপনারা কি বিনা টাকায় এক কাপ চা খাওয়ান? এই নজির তো নাই আপনাদের।’

‘বাংলাদেশের লোক ডলার খরচ করে ওখানে গিয়ে। এখন কলকাতার নিউ মার্কেট বন্ধ, দোকানপাট বন্ধ সেখানে, আর কোনো খরিদদার নাই। আমাদের ডলারে বাজার-সদাই কেনা হতো।’

রিজভী বলেন, ‘ওখানের একজন ডাক্তার নাকি বলেছেন, এবার বাংলাদেশের রোগী এলে সেখানে ভারতীয় পতাকা এমনভাবে রাখা হবে যেন তারা মাথা নিচু করে ঢুকে। আপনারা বাংলাদেশের মানুষকে চিনেন না। আপনারা অনেক জাতিকে সেখানে (ভারতে) পদানত করে রেখেছেন যারা স্বাধীনতা চায়। এগুলো আপনাদের বিষয়। আমরা কিছু বলতে চাই না।’

‘কিন্তু বাংলাদেশের মানুষকে চিনেন না। ওই পশ্চিমা পাকিস্তানি পাঞ্জাবিরাও কিন্তু এদেশের মানুষকে… লুঙ্গি পরা মানুষ হাতে স্টান গান নিয়ে নদী সাঁতারে ওই পাকিস্তানিদের পরাভূত করেছে। নদীনালার দেশ, খাল-বিলের দেশ, বন্যা-খরার দেশ, কী করে এই অবস্থায় শত্রুদের প্রতিরোধ করতে হয় সেটা আমরা জানি।’

‘তারা নিষ্ঠুর হাসিনাকে পছন্দ করে, বাংলাদেশকে নয়’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘তারা (ভারত) নিষ্ঠুর হাসিনাকে পছন্দ করে, বাংলাদেশের মানুষকে পছন্দ করে না। বাংলাদেশ টিকে থাকুক এটা তারা চায় না। আজকে তারা নানা ধরনের উসকানি দিচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে, বাংলাদেশের ভেতরে।”

‘কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তাদের উসকানিতে পা দেয়নি। দুই-একটা গোষ্ঠী থাকতে পারে, তারা চিহ্নিত হয়ে গেছে, তারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে উন্মোচিত হয়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ যে আমাদের এখানে উসকানি দিতে পারে এটা গোটা জাতি ধরে ফেলেছে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর যে ঐক্য এটা ইস্পাত কঠিন ঐক্য। এই ঐক্যকে কেউ ভাঙতে পারবে না।’

আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, ‘সেখানে একটি উগ্রবাদী মানুষ জোরপূর্বক বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে আমাদের কর্মচারীকে আঘাত করেছে। আমাদের জাতীয় পতাকা যেটা পত পত করে উড়ছিলো সেটার স্ট্যান্ড ভেঙে আমাদের পতাকাকে তারা ছিড়েছে। কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনে গিয়ে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আজে-বাজে বলেছে। বোম্বের ডেপুটি হাইকমিশনে গিয়ে তারা বলেছে…। আমরা তাদের নানাবিধ বাংলাদেশবিরোধী প্রচার দেখছি। বাংলাদেশ সরকার আগরতলায় ভিসা বন্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটা সঠিক সিদ্ধান্ত।’

ভারতীয় পণ্য বর্জনের এই অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বাস্থ্য সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জাহিদুল কবির, জাহাঙ্গীর আলম, তৌহিদুর রহমান আউয়ালও বক্তব্য দেন।

কেএইচ/এমএমএআর/জিকেএস

Read Entire Article