স্থপতি মেরিনা তাবাশ্যুমের অনন্য অর্জন

2 days ago 7

মেরিনা তাবাশ্যুম বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান স্থপতি। তিনি ‘মেরিনা তাবাশ্যুম আর্কিটেক্টস’র প্রধান স্থপতি। ২০১৬ সালে স্থাপত্যের জন্য প্রথম ‘আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার’ লাভ করেন। ঢাকার উত্তরে দক্ষিণখান এলাকায় নিজের দাদির দেওয়া জমিতে ‘বায়তুর রউফ মসজিদের’ স্থাপত্যের জন্য এ পুরস্কার পান। এর আগে ২০০৪ সালে প্রথমবার এ পুরস্কারের জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন।

আনন্দের খবর হলো, দ্বিতীয় দফায় স্থাপত্যের সম্মানজনক স্বীকৃতি হিসেবে আগা খান পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নকশা করা ‘খুদি বাড়ি’ প্রকল্প ‘আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার–২০২৫’র জন্য মনোনীত হয়েছে। ২ সেপ্টেম্বর কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে এ পুরস্কারের জন্য মেরিনা তাবাশ্যুমসহ সাত বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক প্রতি তিন বছরে একবার এ পুরস্কার দিয়ে থাকে।

মেরিনা তাবাশ্যুম ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন ক্যানসার চিকিৎসক। ১৯৪৭ সালে তার পরিবার বঙ্গভঙ্গের সময় ভারত থেকে বাংলাদেশের ঢাকায় পাড়ি জমান। তিনি হলি ক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এবং কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৯৫ সালে স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরীর সঙ্গে ঢাকা শহরভিত্তিক একটি স্থাপত্য ফার্ম আরবানা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্থপতি মেরিনা তাবাশ্যুম। ফার্মটি প্রায় দশ বছর ধরে বেশ কয়েকটি প্রকল্প নকশা করে। ২০০৫ সালে তার নিজস্ব ফার্ম ‘মেরিনা তাবাশ্যুম আর্কিটেক্টস’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এর প্রধান স্থপতি হিসেবে কাজ শুরু করেন।

এ ছাড়া ২০০৫ সাল থেকে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পরিদর্শন অধ্যাপক হিসেবে সেখানে সমসাময়িক দক্ষিণ এশিয়ার স্থাপত্যের ওপর পড়িয়েছেন। এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্টুডিওগুলোও পরিচালনা করেন। বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সম্মেলনে বক্তৃতা ও উপস্থাপনা উপহার দিয়েছেন। ২০১৫ সাল থেকে স্থাপত্য, ভূদৃশ্য এবং বসতিগুলোর জন্য বেঙ্গল ইনস্টিটিউটে একাডেমিক প্রোগ্রামের পরিচালক ছিলেন।

শুধু তা-ই নয়, মেরিনা তাবাশ্যুম ঢাকায় অবস্থিত বায়তুর রউফ মসজিদের স্থপতি ছিলেন, যা ২০১২ সালে বানানো শেষ হয়। ২০১৬ সালে প্রকল্পটি আগা খান স্থাপত্য পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। ২০২০ সালে ব্রিটিশ সাময়িকী প্রসপেক্ট’র ৫০ চিন্তাবিদের মধ্যে শীর্ষ ১০ জনে স্থান করে নেন তিনি। মার্কিন সাময়িকী টাইমের ২০২৪ সালের বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় স্থান পান মেরিনা তাবাশ্যুম। উদ্ভাবক ক্যাটাগরিতে তিনি এ তালিকায় স্থান পান। ২০২৪ সালের ১৭ এপ্রিল প্রভাবশালী ব্যক্তিদের এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।

ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মিত ভূগর্ভস্থ স্বাধীনতা জাদুঘরের দু’জন নকশাবিদের একজন তিনি। অন্যজন হলেন স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। মেরিনা তাবাশ্যুম ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’র প্রধান পরামর্শক। তার উল্লেখযোগ্য কাজসমূহ—‘স্বাধীনতা জাদুঘর’, ‘এ৫ বাসভবন’, ‘কমফোর্ট রিভেরি’, ‘ফরিদাবাদের অবকাশ বাড়ি’, ‘বায়তুর রউফ মসজিদ’, ‘পানিগ্রাম ইকো রিসোর্ট ও স্পা’, ‘খুদি বাড়ি, বাংলাদেশের উপকূলবর্তী চরসমূহ’। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ‘মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্টস’ নামে প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। স্বাধীনতা স্তম্ভ এবং স্বাধীনতা জাদুঘরের নকশার জন্য ১৯৯৭ সালে প্রথম স্থান অর্জন করেন। এরপর বর্ষসেরা স্থপতি পুরস্কার, অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার, এ৫ বাসভবনের জন্য আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার পুরস্কারের জন্য ফাইনালিস্ট, নিসর্গ স্থাপত্য প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানার্স-আপ, আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার, আর্নল্ড ডাব্লিও. ব্রুনার স্মৃতি পুরস্কার, সোয়ান মেডেল, আজীবন সম্মাননা পদক লাভ করেন।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন মেরিনা তাবাশ্যুম প্রথম বাংলাদেশি স্থপতি, যিনি দ্বিতীয়বার এ পুরস্কার পেলেন। ১৫ সেপ্টেম্বর কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে এক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। এ পুরস্কারের অর্থমূল্য ১০ লাখ ডলার, যা বিজয়ীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে।

এসইউ/এএসএম

Read Entire Article