স্থানীয়দের মাথাব্যথা সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

1 month ago 6

গাজীপুরের ভোগড়া থেকে মদনপুর পর্যন্ত ৪৮ কিলোমিটার চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

এই প্রকল্পে থাকছে ৪০টি আন্ডারপাস, ৩টি ব্রিজ, ১টি ইন্টারসেকশন এবং ১টি ফ্লাইওভার। যার বেশিরভাগই এখন দৃশ্যমান। ট্রায়াল চলছে টোল প্লাজারও। 

পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চীনের এসআরবিজি। এক্সপ্রেসওয়ের গাজীপুর অংশের ১৮ কিলোমিটার ঘুরে দেখা যায়, পূর্ব তালুটিয়া এলাকায় ১ কিলোমিটার জায়গায় এখনো নির্মাণ হয়নি সার্ভিস রোড বা পার্শ্ব রাস্তা।

ওই এলাকার বাসিন্দা জালাল উদ্দিন জানান, হাজার কোটি টাকার রাস্তার পাশে আমরা রয়েছি মহাবিপদে। রাস্তা না থাকায় বন্ধ রয়েছে আমাদের দোকানপাট, বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন ভাড়াটিয়ারা। দুর্বিষহ জীবনযাপন করছি আমরা। 

শামসুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, অধিগ্রহণ করা জায়গার পুরোটাতেই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করার কারণে পাশে কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। ঝোপঝাড়ের মধ্য দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। রাতে চোর-ছিনতাকারীদের ভয় তো আছেই।

এদিকে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই সড়ক বিভাজকের (রোড ডিভাইডার) উপরে বসানো প্লেট ভেঙে নাট খুলে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। সরেজমিনে দেখা যায় অনেক জায়গায় নেই প্লেট, কোথাও ভেঙে পড়ে আছে নিচে। আবার কোথাও প্লেট খুলে নিয়ে জায়গা দিয়ে পারাপার হচ্ছেন পথচারীরা। 

এক্সপ্রেসওয়ের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চললেও ভোগরা ফ্লাইওভারের নিচ থেকে টোল প্লাজা পর্যন্ত সড়কে খানাখন্দে বেহাল দশা। এই এক কিলোমিটার সংযোগ সড়ক মেরামত না করলে সুফল থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, রাতে এসব লোহা খুলে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে দিচ্ছে কিছু যুবক।

এ বিষয়ে জানতে সড়ক নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের চাইনিজ কর্মকর্তা প্রথমে রাজী হলেও পরে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক কর্মকর্তা বলেন, সড়কে চুরির বিষয়টি আমরা জেনেছি। এ জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও সার্বক্ষণিক টহলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

একাধিকবার কল করা হলে পাওয়া যায়নি প্রকল্প পরিচালক সুমন সিংহকে।

চীনা প্রযুক্তির আধুনিক নির্মাণশৈলীতে তৈরি এই এক্সপ্রেসওয়েতে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে সেমি—রিজিড পেভমেন্ট প্রযুক্তি। যেখানে কোনো ইটের ব্যবহার নেই। ফলে প্রচলিত পিচঢালা সড়কের তুলনায় এটি হবে অধিক টেকসই এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কমবে অনেকটা। জলাবদ্ধতা বা বৃষ্টির কারণে রাস্তার ক্ষতির সম্ভাবনাও থাকবে না। এই সড়কটি চালু হলে উত্তরবঙ্গের যানবাহন ঢাকার ভেতর না ঢুকে কম সময়ে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে যেতে পারবে।

৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি উত্তরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও দক্ষিণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে সংযুক্ত করবে। ভুলতায় ঢাকা-সিলেট ও ভোগরায় সংযোগ ঘটাবে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের।

Read Entire Article