স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার মূল ১০ সাধারণ কারণ
বিয়ের পর দুজন মানুষ একসঙ্গে জীবন কাটানোর অঙ্গীকার করেন। কিন্তু একসঙ্গে থাকতে গেলে সব সময় সব কিছু মসৃণভাবে চলে না। ছোট ছোট ভুল বোঝাবুঝি, অভিমান, মতের অমিল থেকেই অনেক সময় শুরু হয় ঝগড়া। এসব ঝগড়া যদি সময়মতো বুঝে না সামলানো যায়, তাহলে সম্পর্কের মধ্যেই তৈরি হয় দূরত্ব।
আরও পড়ুন : ভালোবাসা টিকিয়ে রাখতে সম্পর্কের যত্ন নিন
আরও পড়ুন : যেসব কারণে রাগ নিয়ন্ত্রণ জরুরি
এই লেখায় আমরা সহজ ভাষায় জানব, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বেশি হওয়ার ১০টি সাধারণ কারণ—যেগুলো সময়মতো বুঝে নিলে অনেক সমস্যাই এড়ানো সম্ভব।
১. বোঝাপড়ার ঘাটতি
অনেক সময় আমরা ভাবি, সঙ্গী নিশ্চয়ই বুঝে যাবে আমি কী চাই। কিন্তু সেটা না বললে তো সে জানবেই না! যেমন, স্ত্রীর আশা থাকে, স্বামী তাকে জিজ্ঞেস করবে তার দিন কেমন গেল। কিন্তু স্বামী হয়তো ভাবেন, স্ত্রীর একা থাকতে ভালো লাগছে। এই ভুল বোঝাবুঝি থেকেই শুরু হয় ক্ষোভ।
২. টাকার হিসাব নিয়ে টানাপোড়েন
দুজনের আয়-ব্যয়ের অভ্যাস যদি খুব আলাদা হয়, তাহলে সেটা নিয়ে সমস্যা হতেই পারে। কেউ হয়তো খরচ করতে ভালোবাসেন, কেউ আবার সঞ্চয়ের পক্ষে। আবার কে কী খাতে খরচ করবেন, সেটা নিয়েও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। একপক্ষ বারবার ছাড় দিলে, সেটা একসময় বড় রাগে পরিণত হতে পারে।
৩. সময় না দেওয়া
ব্যস্ততা থাকবেই। কিন্তু সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে একে অপরের জন্য সময় বের করাটা খুব দরকার। প্রতিদিন অন্তত কিছুটা সময় শুধু একে অপরের সঙ্গে কাটাতে পারলে সম্পর্ক অনেক মজবুত হয়।
৪. সন্দেহ আর ঈর্ষা
সঙ্গীর সাফল্যে খুশি না হয়ে যদি ঈর্ষা বা প্রতিযোগিতা তৈরি হয়, তাহলে সেটা ভালো লক্ষণ নয়। আবার, বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুকে নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ থেকে দূরত্ব, অবিশ্বাস আর মানসিক চাপ বাড়তে থাকে।
৫. শারীরিক দূরত্ব
দাম্পত্য জীবনে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি একজন আগ্রহী থাকেন; কিন্তু অন্যজন মানসিক চাপ বা ক্লান্তির কারণে দূরে থাকেন, তাহলে ধীরে ধীরে সেই সম্পর্কেও ফাঁক তৈরি হয়। সময়ের সঙ্গে এই দূরত্ব বাড়তে থাকে।
৬. দায়িত্ব ভাগাভাগিতে অসাম্য
একজন সব সময় বাড়ির কাজ করছেন, আরেকজন শুধু দেখছেন—এভাবে চলতে থাকলে সমস্যা হবেই। আবার, সংসার চালানোর দায়িত্ব যদি একতরফা হয়, তাহলে সেটাও দাম্পত্যে ভারসাম্য নষ্ট করে। কাজ হোক বা সিদ্ধান্ত, সব কিছুতেই একে অন্যকে সাপোর্ট করা জরুরি।
৭. ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় মতের অমিল
কখন সন্তান নেবেন, কোথায় থাকবেন, ক্যারিয়ার নিয়ে কী করবেন—এইসব ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে মত না মিললে সেটা নিয়ে অশান্তি তৈরি হয়। একে অপরকে বোঝার চেষ্টা না করলে সম্পর্কের দূরত্ব বাড়ে।
৮. বাইরের লোকের হস্তক্ষেপ
বাড়ির লোক বা বন্ধুদের পরামর্শ সব সময়ই ঠিক হয় না। দাম্পত্য জীবনের সমস্যা দুজনেই মিলে সমাধান করা সবচেয়ে ভালো। তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ অনেক সময় সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে।
৯. ব্যক্তিত্বের পার্থক্য
একজন অন্তর্মুখী, অন্যজন প্রাণচঞ্চল—এমনটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু একে অপরকে সম্মান না করলে বা বদলাতে চাপ দিলে সেখান থেকেই শুরু হয় দ্বন্দ্ব। ভিন্নতা থাকলেও পারস্পরিক সম্মান থাকাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
১০. পুরোনো ঝগড়ার রেশ
আগের ঝগড়াগুলোর সমাধান না হলে ক্ষোভ জমতে থাকে। সময়মতো মিটিয়ে না নেওয়া হলে ছোট ব্যাপারেও বড় ঝামেলা হয়ে যেতে পারে। তাই ঝগড়া হলে সেটা যত দ্রুত সম্ভব মিটিয়ে ফেলা উচিত।
আরও পড়ুন : অতিরিক্ত চিন্তা করছেন? জেনে নিন মুক্তির সহজ ৪ উপায়
আরও পড়ুন : সম্পর্ক মধুর রাখতে বিশেষজ্ঞদের ৭ পরামর্শ
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু কেন ঝগড়া হচ্ছে, সেটা বুঝে ফেলা সবচেয়ে জরুরি। বুঝে নিতে পারলে সমাধানও পাওয়া সম্ভব। সম্পর্ক মানেই শুধু ভালো সময় নয়, খারাপ সময়েও একসঙ্গে থাকার অঙ্গীকার।