মানুষের জীবনে স্মৃতিশক্তি একটি অনন্য নেয়ামত। পড়াশোনা, কাজকর্ম, ইবাদত—সব ক্ষেত্রেই শক্তিশালী স্মৃতি কাজে লাগে। অনেক সময় আমাদের স্মৃতি দুর্বল হয়ে যায়। ভুলে যাওয়া, মনোযোগ হারিয়ে ফেলা কিংবা মুখস্থ না রাখতে পারা ইত্যাদি আমাদের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় মুমিনের জন্য শ্রেষ্ঠ আশ্রয় হলো মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা। কারণ তিনিই জ্ঞানদাতা এবং তার হাতেই মানুষের মন ও মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণ।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য আমরা কোরআনে বর্ণিত এই সহজ দোয়াটি পড়তে পারি,
رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا
উচ্চারণ: রাব্বি জিদনি ইলমা।
অর্থ: হে আমার রব! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন। (সুরা ত্বহা: ১১৪)
আল্লাহর রাসুলের (সা.) কাছে জিবরাইল (আ.) যখন ওহি নিয়ে আসতেন, তিনি তাড়াহুড়া করে জিবরাইলের (আ.) সঙ্গে ওহি পড়ার ও মুখস্ত করার চেষ্টা করতেন, তখন আল্লাহ তাআলা তাকে তাড়াহুড়া করতে নিষেধ করেন এবং এ দোয়াটি পড়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, তোমার প্রতি ওহি সম্পূর্ণ হওয়ার আগে তুমি কোরআন পাঠে তাড়াহুড়া করো না এবং বল, হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন। (সুরা ত্বহা: ১১৪)
আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করুন
আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা, প্রার্থনা করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। দোয়ার মাধ্যমে যেমন আল্লাহর আনুগত্য ও রহমত লাভ করা যায়, আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচা যায়, শয়তানের ধোঁকা ও দুনিয়াবি বিপদ-আপদ থেকে বেঁচে থাকা যায়, একইভাবে দোয়ার মাধ্যমে ঈমানও প্রকাশ পায়। আল্লাহর প্রতি বান্দার ভরসা ও নির্ভরতা প্রকাশ পায়। বান্দার বিনয় ও অহংকারহীনতা প্রকাশ পায়।
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত হতে বিমুখ তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে। (সুরা গাফির: ৬০)
এ আয়াতে স্পষ্টভাবেই ইবাদতকেই দোয়া বলা হয়েছে। বিভিন্ন হাদিসেও এ বক্তব্যের অনুরণন আছে। নোমান ইবনে বশির থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দোয়াই হলো ইবাদত। (সুনানে আবু দাউদ)
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, দোয়া হলো ইবাদতের মগজ বা মূলবস্তু। (সুনানে তিরমিজি)
ইমাম শাওকানি (রহ.) বলেন, ওপরের আয়াত স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, দোয়া অন্যতম ইবাদত। দোয়া না করা আল্লাহর সঙ্গে অহংকার করার শামিল। এ অহংকারের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো অহংকার হতে পারে না। কীভাবে মানুষ আল্লাহর সঙ্গে অহংকার করতে পারে যে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে সব ধরনের জীবনোপকরণ দিয়েছেন, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান এবং ভাল-মন্দের প্রতিদান দিয়ে থাকেন! (তুহফাতুজ জাকিরীন)
ওএফএফ/জেআইএম