ভোলায় দৌলতখানে একটি সড়কের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তিন ইউনিয়নের তিন গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ। বর্ষা মৌসুমে কাঁচা রাস্তায় কাঁদা, গর্ত ও পানি জমে মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি।
উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাবলু মাঝির দোকান থেকে বোরহানউদ্দিন উপজেলার কুতুবার ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট মানিকা ফাজিল মাদরাসা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়কে এ বেহাল দশা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সড়কটিতে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। র্দীঘদিনের দাবি থাকলেও সড়কটি পাঁকা না হওয়ায় কাদাযুক্ত রাস্তায় সম্প্রতি ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, সড়কটি দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ জয়নগর গ্রাম, বোহানউদ্দিন কুতুবা ইউনিয়নের ছোট মানিকা, গঙ্গাপুর ইউনিয়নের খায়েরহাট গ্রামের ৩০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। কাঁচা রাস্তাটি দিয়ে দৈনিক বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করেন। স্বাভাবিক সময়ে কাঁচা সড়কটিতে মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, বোরাক ও নসিমন চলাচল করে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটির কোথাও কোথাও কাঁদা মাটিতে পরিপূর্ণ, কোথায় বড় বড় গর্তে কাঁদাপানি আবার কোথাও পানি জমে থাকে। এতে এ রাস্তায় চলা দায় হয়ে ওঠে। এসময় যানবাহন চলাচল করে না বললেই চলে। দুয়েকটি যানবাহন চলাচল করলেও সেগুলোও মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এতে হেঁটে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিতে হয় স্থানীয়দের।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. বজলুল রহমান ও রকিবুল ইসলাম রিপন জানান, বহু বছর ধরে এই সড়কটিতে মানুষের দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বর্ষাকালে কাঁদা, বড় গর্ত, পানি জমে থাকে। তাই বর্ষাকালে চলাচলের পুরো অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কিন্তু বিকল্প সড়ক না থাকায় বাধ্য হয়েই এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়।
তারা বলেন, বিগত দিনে রাস্তাটি পাকা করতে অনেকে আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা এবার বাস্তবায়ন চাই।
স্থানীয় মো. পারভেজ, সোহেল ও মিরাজ হোসেন জানান, এই রাস্তা দিয়ে দক্ষিণ জয়নগর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ জয়নগর গ্রাম, কুতুবা ইউনিয়নের ছোট মানিকা ও গঙ্গাপুর ইউনিয়নের খায়েরহাট গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। কিন্তু রাস্তার অবস্থা এতটাই বেহাল যে এই তিন গ্রামের কোনো মানুষ যদি অসুস্থ হয় তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায় না। অ্যাম্বুলেন্স চালকদের অনুরোধ করলেও তারা আসেন না।
তারা আরও জানান, বর্ষাকালে যদি কোনো বাড়িতে আগুন লাগে তাহলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এসে আগুন নেভাতে পারবে না। কারণ রাস্তার বেহাল দশায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির আসবে না। তাই বর্ষাকালে তিন গ্রামের আমরা সবাই চরম ঝুঁকিতে থাকি।
মো. নূর উদ্দিন জানান, রাস্তার অবস্থা অনেক বেহাল, মোটরসাইকেল নিয়ে যাতায়াত করা যায় না। বাধ্য হয়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হয়। কাঁদায় মোটরসাইকেলের চাকা আটকে যায়। লোকজন দিয়ে ঠেলে উঠাতে হয়। প্যান্ট ও জুতায় কাদামাটিতে ভরে যায়। অনেক সময় কাঁদার মধ্যে স্লিপ কেটে পড়ে যায়।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক মো. করিম ও ইউসুফ জানান, এই রাস্তায় দৈনিক শতশত মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, বোরাক, নসিমনসহ বিভিন্ন ছোট যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু বর্ষার মৌসুমে রাস্তাটি কাঁদা ও পানির কারণে দৈনিক এখন ৪-৫ টির বেশি যানবাহন চলাচল করে না।
তারা আরও জানান, বৃষ্টি হলেই রাস্তাটি মরণফাঁদে পরিণত হয়। গাড়ি চালানোর সময় কাঁদার মধ্যে আটকে যায়। অনেক সময় যাত্রী নিয়ে গাড়ি রাস্তার বাইরে বা পুকুরেও পড়ে যায়। এতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
মো. আমির হোসেন ও মো. রিয়াজ হোসেন জানান, প্রতি বছরই বর্ষার মৌসুম এলে আমাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রাস্তায় যানবাহন চলাচল করে না তেমন। তাই বাধ্য হয়ে চালের বস্তা ও মালামাল নিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে বাড়ি যেতে হয়।
স্কুল শিক্ষার্থী মো. রুমা আক্তার ও মো. জহির ইসলাম জানান, বর্ষাকালে কাঁদা পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। অনেক সময় কাঁদার মধ্যেই পরে গিয়ে ওই পোশাকেই স্কুলে যাই। আবার রাস্তায় পানি জমলে ওই পানিতে ভিজেই স্কুলে যেতে হয়।
এদিকে সম্প্রতি রাস্তায় কাদামাটিতে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম রাস্তায় ধানের চারা লাগিয়ে প্রতিবাদ করেছেন।
তিনি জানান, দীর্ঘদিন আমরা দাবি করে করেও কোনো ফলাফল আসেনি। রাস্তাটি ধানক্ষেতের মত কাঁদা তাই রাস্তায় ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদ জানিয়েছি।
পাকা সড়ক নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধনকারীদের মধ্যে মো. নুরুল করিম জানান, র্দীঘদিনের দাবির পরেও রাস্তাটি পাকা না হওয়ায় স্থানীয়রা বাসিন্দারা মিলে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। মানববন্ধনে তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিন ইউনিয়নের তিন গ্রামের ৩০ হাজার মানুষের কষ্ট দূর করতে রাস্তাটি পাকা করার দাবি করেন।
তিনি আরও জানান, এলাকাবাসীর দাবি দ্রুত পূরণ না হলে আগামীতে তারা বড় ধরনের কর্মসূচি পালন করবেন।
বোরহানউদ্দিন উপজেলার এলজিইডির প্রকৌশলী মো. মাইদুল ইসলাম খান জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ দূর করতে কাঁচা সড়কটিকে উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুতই পাকা করতে চেষ্টা করবেন। এই ক্ষেত্রে যদি সড়কটি তাদের তালিকায় থাকে তাহলে দ্রুতই উন্নয়ন প্রকল্পে নেবেন। যদি তালিকায় না থাকে তাহলে তালিকা তৈরি করে তারপর এটিকে উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পাকা সড়কে রূপান্তর করা হবে।
জুয়েল সাহা বিকাশ/এমএন/এএসএম