হজে যাওয়ার ইচ্ছা পূরণ হলো না ‘জল্লাদ’ শাহজাহানের

পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। পরিচিত ‘জল্লাদ’ শাহজাহান নামে। নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামিসহ ২৬ জনের ফাঁসির দড়ি টানা আলোচিত ব্যক্তি এই শাহজাহান।

দীর্ঘ ৩২ বছর কারাভোগের পর গত বছরের ১৮ জুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ এবং মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান জল্লাদ ছিলেন।

সবশেষ সোমবার (২৪ জুন) সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় ‘জল্লাদ’ শাহজাহানের। তার ইচ্ছা ছিল, জীবনে একবার হলেও হজ করার। তবে তার আগেই মারা গেলেন তিনি।

দীর্ঘ ৩২ বছর পর গত বছর কারাগারের বাইরে প্রথম ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছিলেন শাহজাহান। তখন জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন তৌহিদুজ্জামান তন্ময়।

সে সময় তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল এই বয়সে আপনার ইচ্ছা কী?

উত্তরে শাহজাহান বলেছিলেন, হজে যাওয়ার নিয়ত করেছি। যদি আল্লাহ সুযোগ দেন তাহলে একবার অন্তত কাবা শরিফ নিজ চোখে দেখে দোয়া করে আসবো। এরপর আল্লাহ মৃত্যু দিলে কোনো আপত্তি নেই।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের রেকর্ড অনুযায়ী, দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন শাহজাহান ভূঁইয়া। একটি ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যা মামলা এবং আরেকটি অস্ত্র আইনে মামলা। এই দুই মামলায় ১৯৯১ সালের ১৭ মে থেকে কারাগারে ছিলেন তিনি। দুই মামলায় তার সাজা হয়েছিল ৪২ বছর। ফাঁসি কার্যকর ও অন্যান্য কারণে তার সাজার মেয়াদ কমিয়ে ৩২ বছর করা হয়েছিল। ওই সাজা শেষ হওয়ার পর গত বছরের ১৮ জুন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান শাহজাহান। ৪২ বছরের সাজার মধ্যে প্রতি ফাঁসির জন্য দুই মাস করে কারা রেয়াত পেয়েছিলেন।

কারাবিধি অনুযায়ী, আচার-আচরণ ও অন্যান্য কারণে সব মিলিয়ে ১০ বছর ৫ মাস রেয়াত পেয়েছেন শাহজাহান। সাজা খেটেছেন ৩১ বছর ৬ মাস ২ দিন। শাহজাহানের হাতে কোনো টাকাপয়সা না থাকায় যে ১০ হাজার টাকা তার দণ্ড হয়েছিল, তা কারা কর্তৃপক্ষ মিটিয়ে দেয়।

কারাগারের রেকর্ড অনুযায়ী, নিজ হাতে ২৬ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন শাহজাহান। তবে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি ৬০ জনকে ফাঁসিতে ঝোলানোর দাবি করেছিলেন।

মুক্তি পাওয়ার পর শাহজাহান ভূঁইয়া বলেছিলেন, তার থাকার কোনো জায়গা নেই। বাড়িঘর কিছুই নেই। তাই সরকারের কাছে একটা থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন।

তিনি সাংবাদিকদের আরও বলেছিলেন, প্রধান জল্লাদ হওয়ার পর প্রথম ফাঁসি দেন আলোচিত একটি হত্যা মামলার আসামি হাসানকে। ফাঁসি দিতে প্রধান জল্লাদের সঙ্গে ছয়জন সহযোগী লাগে এবং ফাঁসির রায় কার্যকর করলে প্রত্যেক জল্লাদের দুই মাস চারদিন কারাদণ্ড মওকুফ হয় বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

এছাড়া কারাগারে যারা জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শাহজাহান তাদের প্রশিক্ষণও দিয়েছিলেন।

শাহজাহান ভূঁইয়া ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

কারাগারের নথি অনুসারে, ১৯৯২ সালের ৮ নভেম্বর ডাকাতির জন্য ১২ বছর এবং ১৯৯৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর অপর একটি মামলায় ডাকাতি ও হত্যার জন্য ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। এছাড়া উভয় রায়ে তাকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

টিটি/জেডএইচ/এএসএম