কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে বিষমুক্ত টমেটো। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ কৃষকদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে। ফলে হাওরে দিন দিন এ সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।
জানা গেছে, ধানের পাশাপাশি অনেক কৃষক ঝুঁকছেন টমেটো তথা সবজি চাষে। এবার হাওরে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রাথমিকভাবে বাজারে আসা টমেটো দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। দাম ও উৎপাদন দেখে উদ্বুদ্ধ হাওরের কৃষকরা। এ ছাড়া ধানের চেয়ে টমেটোতে বেশি লাভ ও ঝুঁকি কম থাকায় কৃষকদের উৎপাদন ও চাষে উদ্বুদ্ধ করছে সংশ্লিষ্টরাও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জমিতে সারি সারি টমেটোর গাছে ফলন ধরেছে। কৃষকরা পরিচর্যায় ব্যস্ত। কেউ আবার বিক্রির জন্য গাছ থেকে টমেটো সংগ্রহ করছেন।
অষ্টগ্রাম উপজেলা সদর ইউনিয়নের পশ্চিম অষ্টগ্রামের কৃষক লেখন মিয়া বলেন, গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করে আমি লাভবান হচ্ছি। শীত শুরু হওয়ার আগে থেকেই এ টমেটো বিক্রি করা শুরু করেছি। বর্তমানে প্রতি কেজি টমেটো ১৫০ টাকা দরে জমি থেকেই পাইকারি বিক্রয় করা যাচ্ছে। গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ দেখতে আসে স্থানীয় কৃষকরা। বাজারে চাহিদাও বেশ। অনেক কৃষক এরই মধ্যে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছে।
জানা যায়, টমেটোর গ্রাফটিং পদ্ধতির জন্য আগস্ট মাসের শুরুতে একসঙ্গে তিত বেগুন এবং টমেটোর বীজতলা করা হয়। চারাগুলোর এক মাস বয়স হলে তিত বেগুনের চারার উপরের অংশ কেটে ফেলে দেওয়া হয়। পরে টমেটোর চারার নিচের অংশ কেটে ফেলে দিয়ে তিত বেগুনের চারার নিচের অংশে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে জোড়া লাগিয়ে জমিতে রোপণ করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে জমিতে রোপণ করলে নভেম্বর মাস থেকে ফলন দেওয়া শুরু হয়ে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ফলন দেয় গ্রাফটিং পদ্ধতির এ গাছগুলো। রোপণের সময় প্রতিটি চারা এক ফুট দূরত্বে লাগাতে হয়। চারার প্রতিটি সারি দুই ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। প্রতিটি গাছে ৫ থেকে ৬ কেজি টমেটোর ফলন হয়ে থাকে।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে অষ্টগ্রাম উপজেলার হাওরে ২৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের টমেটো আবাদ হয়েছে। গ্রাফটিং করা টমেটোর চাড়াগুলো মূলত মালচিং পদ্ধতিতে জমিতে রোপণ করা হয়ে থাকে। এতে করে আগাছা হয় না বললেই চলে। যদিও হয় খুব সহজেই নিড়ানি দেওয়া যায়। তাছাড়া সেচ দিতে খুবই সুবিধা এ পদ্ধতির জমিতে। গ্রাফটিং পদ্ধতির টমেটো চাষে শুধু জৈবসার ব্যবহার করা হয়। এতে করে এসব টমেটো সম্পূর্ণ বিষমুক্ত হয়ে থাকে।
সম্প্রতি টানা বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে অষ্টগ্রামের কোটি টাকার টমেটো নষ্ট হয়ে যায় কৃষকদের। সেই বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষকের টমেটো ক্ষেত ও চারা। ফলে লোকসানে পড়েন অষ্টগ্রামের প্রায় ৪ শতাধিক কৃষক। তবে বন্যার সেই ক্ষতি পুষিয়ে আবারও টমেটো চাষে ঘুরে দাঁড়ালেন অষ্টগ্রামের কৃষকরা। এবারে সবজির বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় খুশি কৃষক।
মালচিং হলো এমন একটি আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি, যে পদ্ধতির চাষাবাদে জমি রোগ-বালাই থেকে মুক্ত থাকে। এতে পানি, সার, ওষুধ খরচ সাশ্রয়ী হওয়ায় উৎপাদন খরচ বহুলাংশে কমে যায়। ফলন হয় বেশি এবং গাছের জীবন দীর্ঘ হয়। তাই মুনাফা হয় কয়েকগুণ।
অষ্টগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অভিজিৎ সরকার জানান, গ্রাফটিং করা টমেটোর চাড়াগুলো মূলত মালচিং পদ্ধতিতে জমিতে রোপণ করা হয়ে থাকে। এতে করে আগাছা হয় না বললেই চলে। যদিও হয় খুব সহজেই নিড়ানি দেওয়া যায়। তাছাড়া সেচ দিতে খুবই সুবিধা এ পদ্ধতির জমিতে। খরচের দিকে কম এবং ঝুঁকিপূর্ণ না হওয়ায় এ পদ্ধতিতে আগ্রহী হচ্ছেন হাওরের চাষিরা।