হাটে লোক আসে, দেখে, দাম জেনে চলে যায়

3 months ago 6

পিরোজপুরের জমে উঠেছে পশুর হাট। তবে পশুর হাটে উপচে পড়া ভিড় থাকলেও কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা নেই। দামও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ বিক্রেতাদের। এতদিন ধরে কষ্ট করে বড় করা পশু কম দামে বিক্রি করে লোকসানে পড়ার আশঙ্কা অনেক খামারির।

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দীঘিরজান পশুর হাটে সরজমিনে দেখা যায়, পশুর হাটটি জমে উঠেছে। হাটের কানায় কানায় পরিপূর্ণ ক্রেতা বিক্রেতা। জেলার সব থেকে বড় হাট হওয়ায় অধিকাংশ ক্রেতা এই হাট থেকে পশু কিনে থাকেন। হাটে জেলার আশপাশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকেও ট্রাক ভরে গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারী ও খামারিরা। ছোট বড় সব ধরনের কোরবানির পশুর পসরা সাজিয়ে ক্রেতাদের অপেক্ষায় আছেন বিক্রেতারা। পশুর সারি, উচ্চস্বরে হাঁক-ডাক সব মিলিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ। কিন্তু এতসব আয়োজনের মাঝেও নেই কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা। ফলে দিন শেষে বিক্রি কম এবং ক্রেতারা পশুর দাম কম বলায় দুশ্চিন্তায় খামারি ও ব্যবাসায়ীরা। তবে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে প্রশাসন।

‎খামারিদের অভিযোগ, বছরজুড়ে কষ্ট করে বড় করেছি কোরবানির গরু। খাবার, চিকিৎসা, পরিচর্যা সব কিছুতেই প্রচুর খরচ হয়েছে। কিন্তু এখন হাটে গরুর প্রকৃত দাম পাচ্ছি না। লোক আসে, দেখে, দাম জেনে চলে যায়।

এদিকে ক্রেতারা বলছেন, তারা এখনো বাজার যাচাই করছেন। ঈদের আরও দু’দিন বাকি থাকায় অনেকে অপেক্ষায় আছেন, দাম আরও কিছুটা কমে গেলে পশু কিনবেন।

হাটে লোক আসে, দেখে, দাম জেনে চলে যায়

পিরোজপুর জেলায় ছোট ও মাঝারি ধরনের গরুর চাহিদা বেশি থাকায় দুশ্চিন্তায় আছে বড় গরুর বিক্রেতারা। দরদামে না মেলায় পরের হাটের জন্য অপেক্ষা করছেন অনেক খামারি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।‎

‎মৌসুমি গরু ব্যবসায়ী কেরামত আলী বলেন, আমি বাগেরহাট চিতলমারী থেকে দশটি গরু এনেছি। এ বছর কোরবানিতে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসায় নেমেছি। কিন্তু গরুর দাম কম হওয়ায় অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হব। গত বছর যে মানুষগুলো কোরবানি দিয়েছে এ বছর তার ৫০ শতাংশ লোক কোরবানি দিবে বলে মনে হয় না। হাটে দশটি গরু নিয়ে এলেও এখন পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি।

গরু ব্যবসায়ী লিটন কাজী বলেন, যে কয়টা গরু নিয়ে এসেছি একটিও বিক্রি করতে পারিনি, কাঙ্ক্ষিত দাম বলছে না ক্রেতারা। ক্রেতারা দাম জিজ্ঞেস করে চলে যায়, কিন্তু কেউ গরু কেনে না। এই বাজারে যদি বিক্রি করতে না পারি তাহলে পিরোজপুরের পাঁচপাড়া বাজারে নিয়ে যাব।

দিঘিরজান বাজারে গরু কিনতে আসে মসজিদের ইমাম জুবায়ের ইসলাম বলেন, পিরোজপুরের ভেতরে এটা সব থেকে বড় হাট। বেশ কয়েকটি গরু পছন্দ হয়েছে, দাম বলেছি কিন্তু বিক্রেতা বিক্রি করেনি। তবে এ বছর দাম মধ্যম পর্যায়ে রয়েছে।

হাটে লোক আসে, দেখে, দাম জেনে চলে যায়

দিঘিরজান বাজারের ইজারাদার মিজানুর রহমান শরিফ জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর এই হাটে প্রচুর গরুর আমদানি হয়েছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় দাম কম। এখন পর্যন্ত অনেক গরু বিক্রি হয়েছে। প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে পশুর জন্য হেল্প সেন্টার রাখা হয়েছে। যাতে কোনো পশু অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত চিকিৎসা করা যায়। হাটে ক্রেতা বিক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা এড়াতে নিয়মিত নজরদারি ও জাল টাকা নির্ণয়ে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে।

পিরোজপুর জেলায় ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৫৩ হাজার খামারে কোরবানির জন্য উৎপাদন হয়েছে ৪৬৭১৭টি বিভিন্ন জাতের পশু। জেলায় কোরবানিযোগ্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৪০২৫৭টি।

মো. তরিকুল ইসলাম/এফএ/এএসএম

Read Entire Article