হালিশহরে রেলওয়ের জিএম অফিস ঘেরাও রেলকর্মীদের

13 hours ago 7

চট্টগ্রামের হালিশহর সিজিপিওয়াই এলাকায় ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণের প্রতিবাদে ও লিজ চুক্তি বাতিলের দাবিতে রেল পূর্বাঞ্চলের রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অফিস ঘেরাও করেছেন রেলকর্মীরা।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে কয়েক’শ রেলকর্মী, তাদের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা রেলওয়ের কবরস্থান, মসজিদ, মাজার ও আপদকালীন জলাশয় দখল করে ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণের প্রতিবাদে ও লীজ চুক্তি বাতিলের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করেন।

এর আগে, আন্দোলনকারীরা মিছিলসহ সিআরবিতে পৌঁছালে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ তাদের রেল ভবনে প্রবেশে বাধা দেয়। পরে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা বাধা উপেক্ষা করে রেল ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে ‘লিজ বাতিল করো’, ‘কবরস্থান-মসজিদ-মাজার বাঁচাও’- এমন স্লোগান দেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা রেলের জিএম সুবক্তগীনের অফিসের মূল ফটক বন্ধ করে দেন। পরে বাইরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন রেলকর্মীরা।

বক্তারা অভিযোগ করেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে গিয়ে শতবর্ষী কবরস্থান, ধর্মীয় স্থাপনা ও জলাশয়ের জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে জালিয়াতি করেছে। কবরস্থানটিতে প্রায় ৪৫০টি কবর রয়েছে। সব জেনেও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে লিজ দেওয়া হয়েছে।

তারা বলেন, রেলওয়ের ইতিহাসে কখনো ধর্মীয় স্থাপনা ও কবরস্থান দখল করে প্রকল্প নেওয়া হয়নি। এবার রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগ নিজেই আইন ভঙ্গ করছে।

শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করেন, আন্দোলনের মধ্যেই কৌশলে মসজিদ-মাজার ও কবরস্থান উচ্ছেদের চক্রান্ত চলছে। রেল সচিব ও উপদেষ্টার মৌখিক নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এখনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণের লিখিত আদেশ আসেনি, যা প্রতারণার শামিল। যৌক্তিক দাবি আদায় না হলে সারাদেশে রেল ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হবে। তবুও কবরস্থান-মসজিদ বিক্রি করতে দেওয়া হবে না।

দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানান রেলের মহাব্যবস্থাপক মো. সুবক্তগীন। রেলওয়ে রানিং স্টাফ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল জিএম অফিসের দ্বিতীয় তলায় প্রায় আধাঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে নিচে নেমে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে জিএম সুবক্তগীন বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত আছি। রেলের মহাপরিচালক ও সচিবসহ সবাই বিষয়টি জানেন এবং পরিদর্শনও করেছেন। আপনাদের স্বার্থ অক্ষুণ থাকবে। কবরস্থান, মসজিদ ও মাজার থাকবে। আগামীকাল (বুধবার) গঠিত কমিটি গিয়ে স্থানগুলো ডিমার্কেশন করবে।

আশ্বাসের পর দুপুর ১টার দিকে আন্দোলন স্থগিত করে শ্রমিকরা স্থান ত্যাগ করেন।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ রেলওয়ে জাতীয়তাবাদী রেল শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক এম আর মঞ্জু, রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান, রেলওয়ে কারিগরি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস কে বাড়ি, সিজিপিওয়াই সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হোসেন শহীদ, সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লিগের দপ্তর সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান শিশির।

রেলের চুক্তি অনুযায়ী, হালিশহর এলাকায় ২১ দশমিক ২৯ একর জমি কন্টেইনার টার্মিনালের জন্য সিসিবিএলকে বাণিজ্যিকভাবে লিজ দেওয়া হয়। পরে সিসিবিএল চুক্তি করে বেসরকারি সাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে।

রেলওয়ে কর্মীদের অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন এলাকায় রেলের বিপুল পরিমাণ খালি জমি থাকলেও কবরস্থান ও মসজিদের সংলগ্ন জমিতেই আইসিডি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পাধীন ২১ দশমিক ২৯ একর জমির মধ্যে নাল, মসজিদ, ভিটা, খিলা, পুকুর, কৃষি, কবরস্থান ও রাস্তা শ্রেণির ভূমি রয়েছে। তবে এসব জমির বাস্তব শ্রেণি কিছুটা বা সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়েছে বলে চুক্তিপত্রে উল্লেখ রয়েছে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষার দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন চললেও রেল কর্মকর্তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। গত মার্চে কবরস্থানের গোরখোদকের ঘর উচ্ছেদ করলে এক দফা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

এমডিআইএইচ/এএমএ/এমএস

Read Entire Article