হিমাগার ভাড়া বৃদ্ধির খবরে দুঃশ্চিন্তায় আলু চাষিরা

2 weeks ago 18

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার নওগাঁয় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে আলুর দাম কম থাকায় কৃষকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। এছাড়াও আকস্মিক হিমাগার ভাড়া বাড়ানোর ফলে লোকসানের আশঙ্কায় পড়েছেন চাষিরা।

একাধিক কৃষক জানান, গত বছর হিমাগারে আলু রাখতে প্রতি বস্তায় ৩০০-৩৫০ টাকা নেওয়া হতো। এক বস্তায় ৮০ কেজি পর্যন্ত আলু রাখা যেতো। এ বছর হিমাগার মালিকরা বস্তায় ৫০ কেজির বেশি আলু রাখতে দিবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। মাত্র ৫০ কেজি আলু রাখতেই ৪০০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছেন তারা। এ ভাড়া গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে নওগাঁর ১১ উপজেলায় ২৫ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, লাল পাপড়ি, সাদা পাপড়িসহ অন্তত ১০-১৫টি দেশি-বিদেশি জাতের আলুর আবাদ হয়েছে। এ পরিমাণ জমি থেকে এবার চার লাখ ৮৮ হাজার ৩৮০ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ইতোমধ্যে ৪৫ শতাংশ জমি থেকে আলু উত্তোলন শেষ হয়েছে। যা চলবে মার্চ মাস পর্যন্ত। এবার জেলায় সবচেয়ে বেশি আলুর আবাদ হয়েছে মান্দা উপজেলায়। এখানে চার হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়।

সোহেল রানা নামে সদর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের চকরামকানু গ্রামের এক কৃষক বলেন, তিনবিঘা জমিতে দেশি জাতের আলুর আবাদ করে ৭৫ মণ ফলন পেয়েছি। ক্ষেত থেকে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করেছি ১৩ টাকা দরে। অথচ প্রতি কেজি আলু আবাদে গড়ে খরচ হয়েছে ১৪-১৫ টাকা। অবশিষ্ট আলু কোল্ডস্টোরেজে রেখে বছরের মাঝামাঝি সময়ে দাম বাড়লে বিক্রি করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এরমধ্যে হুট করে কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিল। বাড়তি ভাড়ায় সংরক্ষণ করতে গেলে লাভতো দূরের কথা কৃষকের লোকসান ছাড়া উপায় থাকবে না।

আরও পড়ুন

মান্দা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, গত বছর হিমাগার মালিকরা উৎপাদন মৌসুমে অযৌক্তিক কারণ দেখিয়ে ভাড়া বাড়াতো। ভেবেছিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে এবার সে সিন্ডিকেট ভাঙবে। এখন দেখছি সিন্ডিকেট ভাঙাতো দূরের কথা, আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠল। এ বছর ভাড়া বাড়ানো নিয়ে আমাদের যতোটা আপত্তি, এরচেয়ে বেশি আপত্তি কেজি হিসেবে ভাড়া দেওয়া। কারণ আগে কখনো কেজি হিসেবে হিমাগারে আলু রাখা হতো না। প্রতি বস্তায় সর্বোচ্চ ৮০ কেজি আলু রাখার সুযোগ ছিল।

ইউনুস আর রহমান নামের বদলগাছীর আরেক কৃষক বলেন, হিমাগার মালিকদের এ ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর হলে কৃষকরা ন্যায্য দাম না পেলেও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট আরও সক্রিয় হয়ে উঠবে। কারণে অকারণে আলুর দাম নিয়ে তেলেসমাতি চলবে। এতে কৃষকদের পাশাপাশি ভোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই প্রশাসন এখনই হিমাগার মালিকদের বিরুদ্ধে অবস্থা না নিলে আগামীতে বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হবে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শহরের ইস্টার্ন প্রডিউস কোল্ড স্টোরেজের পরিচালক অসীম কুমার বসাক বলেন, গত বছর স্থানীয় কৃষকদের থেকে প্রতি বস্তা (৭০ কেজি) আলু সংরক্ষণে ৩৫০ টাকা এবং ব্যবসায়ীদের থেকে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। এবার অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাঠানো এক চিঠিতে স্পষ্টভাবে প্রতি বস্তায় ৫০ কেজির বেশি আলু না নেয়াসহ ৪০০ টাকার কম না নিতে কড়াকড়ি নির্দেশনা এসেছে। সে মোতাবেক এ বছর কৃষক ও ব্যবসায়ীদের থেকে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণে আট টাকা করে নেওয়া হবে।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, উত্তরাঞ্চলে বগুড়া জেলার হিমাগার মালিকদের বরাবর আধিপত্য রয়েছে। মূলত তারাই এ অঞ্চলে আলু সংরক্ষণে প্রতি বছরের ভাড়া নির্ধারণে ভূমিকা রাখেন। কৃষকদের স্বার্থে আলু সংরক্ষণে হিমাগারের ভাড়া কমানোর বিষয়ে কৃষি উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। এ সংকট সমাধানে ইতোমধ্যে বগুড়ার জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছেন কৃষি উপদেষ্টা। আশা করছি হিমাগার মালিকদের সঙ্গে দ্রুতই একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হবে।

আরএইচ/এমএস

Read Entire Article