বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের ৩৮তম সাক্ষী মো. সোহেল মাহমুদ।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই জবানবন্দি পেশ করেন তিনি।
জবানবন্দিতে সোহেল মাহমুদ জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সকালে তিনি তার বাড়ির কাছে শরীফ মেডিকেলের সামনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। সেদিন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি চলছিল। দুপুরে তিনি বাড়িতে ফিরে জানতে পারেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়েছেন। এরপর তিনি আবার শরীফ ও মেডিকেলের সামনে ফিরে আসেন এবং দেখেন হাজার হাজার মানুষ বিজয় মিছিল করছে।
তিনি বলেন, এসময় উল্টোদিক থেকে পুলিশ এই মিছিলকে লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও গুলি ছুড়লে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আমি আমার চাচাতো ভাইয়ের বাড়ির ছাদে আশ্রয় নেই। সেখান থেকে আমি দেখতে পাই, কয়েকজন পুলিশ সদস্য আমার ভগ্নিপতি হাফিজুর রহমান তপনের রিকশা গ্যারেজ থেকে একজনকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর তাকে আমার বাড়ির সামনের কবরস্থানের কাছে নিয়ে গুলি করলে সে ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
এরপর পুলিশ মরদেহটি থানার দিকে নিয়ে যায়। পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ওসি আশরাফ এবং ডিবির এসি ছিল। পরে জানতে পারি যে, যে গুলি করেছে তার নাম কনস্টেবল আকরাম। আর যাকে গুলি করেছে তার নাম হৃদয়। পরের দিন সকালে জানতে পারি, পুলিশ লাশ নিয়ে পালিয়ে গেছে।
মো. সোহেল মাহমুদ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, অন্যান্য মন্ত্রীগণ এবং স্থানীয় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দায়ী করেছেন। তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
প্রসঙ্গত, বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় কোনাবাড়ী সড়ক এলাকায় গত ৫ আগস্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দাবিতে স্লোগান দেন হৃদয়। এ সময় কয়েকজন পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে হৃদয় রাস্তার পাশে অবস্থান নেন। ওই সময় শিল্প পুলিশে কর্মরত কিছু পুলিশ সদস্য কোনাবাড়ী এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন। তারা হৃদয়কে রাস্তার পাশ থেকে ধরে নিয়ে চড়-থাপ্পড় মারেন। একপর্যায়ে পুলিশ কনস্টেবল আকরাম অতি উৎসাহী হয়ে তার পেছন দিক থেকে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই হৃদয়ের মৃত্যু হয়।
এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, ছয়জন পুলিশ সদস্য হৃদয়কে ধরে একটি গলিতে নিয়ে যান। একজন পুলিশ সদস্য তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং এরপর কনস্টেবল আকরাম তার পেটে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেন। হৃদয় ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন এবং তার চারপাশে রক্ত ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে কিছু সময় পর মরদেহ সরিয়ে নিয়ে যায়।
এফএইচ/কেএইচকে/জেআইএম