হোনাইনের ময়দানে নবিজির (সা.) মুজিজা

2 days ago 6

নবিজির (সা.) যুগে মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী একটি জায়গার নাম ছিল হোনাইন যা মক্কা থেকে পূর্ব দিকে ত্রিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমানে জায়গাটিকে ‘আশ-শারায়ে’ বলা হয়। এ জায়গায় নবিজির (সা.) নেতৃত্বে মুসলমানদের সাথে আরবের মুশরিক গোত্র হাওয়াজেনের সাথে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল যা হোনাইনের যুদ্ধ নামে খ্যাত। অষ্টম হিজরীর রমজান মাসে যখন মক্কা বিজিত হয় আর মক্কার কুরাইশরা অস্ত্র সমর্পণ করে, তখন আরবের বিখ্যাত ধনী ও যুদ্ধবাজ হাওয়াজেন গোত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে। কারণ তারা অনুমান করতে পেরেছিল যে মক্কা বিজয়ের পর তায়েফও মুসলমানদের আক্রমণের মুখে পড়তে যাচ্ছে।

নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের যুদ্ধ প্রস্তুতির কথা জানতে পেরে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেন। ৮ম হিজরীর ৬ই শাওয়াল শুক্রবার নবিজি প্রায় চৌদ্দ হাজার সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে নবিজি (সা.) যুদ্ধযাত্রা করেন। এই সেনাদলের বারো হাজার সৈন্য ছিলেন নবিজির (সা.) সাথে মক্কা আক্রমণ করতে আসা সাহাবি, দুই হাজার ছিলেন মক্কা বিজয়ের পর মুসলমান হওয়া নতুন সাহাবি।

ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকে মুশরিকদের সাথে নবিজি ও সাহাবিদের অন্যান্য যুদ্ধে সাধারণত শত্রুদের তুলনায় মুসলমানদের সংখ্যা কম হতো। এরপরও বেশিরভাগ যুদ্ধে আল্লাহর সাহায্যে মুসলমানরাই বিজয়ী হয়েছেন। হোনাইনের যুদ্ধে মুসলমানদের সৈন্য সংখ্যা ছিল শত্রু সৈন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। তাই সাহাবিদের মধ্যে কিছুটা গর্ব ও অতি-আত্মবিশ্বাস কাজ করছিলো যে, এবার তো মুসলমানদের পরাজয়ের কোনো সম্ভাবনাই নেই। ফলে যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে মুশরিকরা অতর্কিত আক্রমণ করলে মুসলমানরা কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন।

কোরআনে হোনাইন যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে মুসলমানদের বিপর্যয় ও পিছু হটার কথা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন,

لَقَدۡ نَصَرَكُمُ اللّٰهُ فِیۡ مَوَاطِنَ كَثِیۡرَۃٍ وَّ یَوۡمَ حُنَیۡنٍ اِذۡ اَعۡجَبَتۡكُمۡ كَثۡرَتُكُمۡ فَلَمۡ تُغۡنِ عَنۡكُمۡ شَیۡئًا وَّ ضَاقَتۡ عَلَیۡكُمُ الۡاَرۡضُ بِمَا رَحُبَتۡ ثُمَّ وَلَّیۡتُمۡ مُّدۡبِرِیۡنَ ثُمَّ اَنۡزَلَ اللّٰهُ سَكِیۡنَتَهٗ عَلٰی رَسُوۡلِهٖ وَ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ اَنۡزَلَ جُنُوۡدًا لَّمۡ تَرَوۡهَا وَ عَذَّبَ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا وَ ذٰلِكَ جَزَآءُ الۡكٰفِرِیۡنَ ثُمَّ یَتُوۡبُ اللّٰهُ مِنۡۢ بَعۡدِ ذٰلِكَ عَلٰی مَنۡ یَّشَآءُ وَ اللّٰهُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ

অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন বহু জায়গায় এবং হুনাইনের দিনে যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিল, অথচ তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি। জমিন প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। তোমরা পিঠ দেখিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলে। তারপর আল্লাহ তার পক্ষ থেকে প্রশান্তি নাজিল করলেন তার রাসুলের ওপর ও মুমিনদের ওপর এবং নাজিল করলেন এমন সৈন্যবাহিনী যাদেরকে তোমরা দেখনি, আর কাফিরদেরকে আজাব দিলেন। এটা কাফেরদের কর্মফল। এরপর আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দিলেন। আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা তওবা: ২৫-২৭)

হুনায়নের ময়দানে মুসলমান সেনাবাহিনী যখন বিপর্যস্ত, অনেকে পিছু হটছে, তখন মুশরিকদের একটি দল নবিজিকে (সা.) ঘিরে ফেলেছিল। এই অবস্থায় নবিজি এক মুষ্টি বালু কাফেরদের দিকে ছুড়ে দেন যা কাফের সেনাদলের সবার চোখে গিয়ে ঢুকেছিল। এটা ছিল নবিজির (সা.) মুজিজা।

সালামাহ ইবনে আকওয়া (রা.) বলেন, হোনাইনের যুদ্ধে আমরা আল্লাহর রাসুলের (সা.) সাথে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আল্লাহর রাসুলের কয়েকজন সাহাবি যখন কাফেরদের মোকাবেলায় পিছু হটলেন, তখন কাফেররা আল্লাহর রাসুলকে (সা.) চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলল। এই অবস্থায় নবিজি (সা.) খচ্চরের পিঠ থেকে নিচে নামলেন এবং জমিন থেকে এক মুষ্টি মাটি তুলে নিলেন। তারপর কাফিরদের দিকে ‘শাহাতিল উজুহ’ অর্থাৎ ‘তোমাদের মুখ বিবর্ণ হোক’ এ অভিশাপ বাক্যটি উচ্চারণ করে তা নিক্ষেপ করলেন।

ওই এক মুষ্টি মাটি দিয়ে কাফের সেনাদলের প্রত্যেকের দুই চোখ ভরে গেল। তারা ময়দান ছেড়ে পালানো শুরু করলো। এভাবে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে পরাজিত করলেন। (সহিহ মুসলিম: ১৭৭৭)

এ যুদ্ধে কাফেরদের অতর্কিত আক্রমণের মুখে প্রাথমিক পর্যায়ে মুসলমানরা কিছুটা বিপর্যস্ত ও ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লেও নবিজি (সা.) যুদ্ধের ময়দানে অবিচল ছিলেন। দ্রুতই মুসলমানরা নিজেদের অবস্থা সামলে নিয়ে নবিজিকে (সা.) কেন্দ্র করে আবার সমবেত হন এবং যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। মুশরিকরা পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায়।

ওএফএফ/এএসএম

Read Entire Article