কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) ভুক্তভোগী নিজেই বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। মামলার ১ ও ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে জামায়াত সমর্থক (বহিষ্কৃত) আবুল হাসেম ও অহিদুর রহমানকে।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আক্তার উজ জামান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে আবদুল হাই কানু উল্লেখ করেন, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। গত রোববার, নিজের গ্রাম বাতিসার লুদিয়ারা এসে তিনি জামায়াত সমর্থক আবুল হাশেমসহ অন্য অভিযুক্তদের হাতে আটক হন। এরপর তাকে কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অভিযুক্তরা তাকে মারধর করে এবং গলায় জুতার মালা পরিয়ে তাকে এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়।
এ সময় তারা পুরো ঘটনা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ফলে সামাজিকভাবে তার ১০০ কোটি টাকার মানহানি হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে গত ২২ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার এক মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে থানা পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তার উজ জামান।
আটক অভিযুক্তরা হলেন উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা গ্রামের মজুমদার বাড়ির আব্দুল হক মজুমদারের ছেলে ইসমাইল হোসেন মজুমদার (৪৩), একই বাড়ির মৃত সুলতান আহম্মেদ মজুমদারের ছেলে জামাল উদ্দিন মজুমদার (৫৮), কুলিয়ারা ভূঁইয়া বাড়ির মৃত এছাক ভূঁইয়ার ছেলে ইলিয়াছ ভূঁইয়া (৫৮), পাশের নাঙ্গলকোট থানাধীন রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের রায়কোট গ্রামের মৃত ছিদ্দিকুর রহমানের ছেলে এবং কুলিয়ারা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম আবুল কালাম আজাদ (৪৮) ও চাঁদপুর জেলার সদর থানার মইশাদী গ্রামের মো. জাকির হোসেনের ছেলে ইমতিয়াজ আব্দুল্লাহ্ সাজ্জাদ (১৯)।
মঙ্গলবার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তার উজ জামান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোববার দুপুরের পর থেকে স্থানীয় একজন মুক্তিযোদ্ধাকে বিক্ষুব্ধ জনতা হেনস্তা করছে, এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। পরে ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে উনাকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিই। কিন্তু তিনি অপারগতা প্রকাশ করায় বিষয়টি নিয়ে এগোতে পারিনি। তবে ভিডিও দেখে অভিযুক্তদের শনাক্তের চেষ্টা করে পুলিশ। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রাতেই বিশেষ অভিযান চালিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে আটক করা হয়। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মঙ্গলবার দুপুরে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, আব্দুল হাই ভূঁইয়া কানু একজন রাজনীতিবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার নিজ এলাকার একটি স্কুল ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচন ও স্থানীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। সে সময় তিনি এলাকার কয়েকজন সম্মানিত সামাজিক ব্যক্তিকে অপমান-অপদস্ত ও হয়রানি করেন বলেও জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, তথ্য-প্রযুক্তি, মারামারি ও রাজনৈতিক মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তিনি বিভিন্ন মামলায় একাধিকবার গ্রেপ্তার হন এবং জেল খাটেন। বহুদিন নিজ এলাকায় না এসে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।
গত ৫ আগস্টের পর দেশের পটভূমি পাল্টে গেলেও তিনি নিজ এলাকায় আসেননি। রোববার দুপুরে স্থানীয়রা তাকে এলাকায় দেখতে পেয়ে পাতড্ডা বাজার থেকে নিয়ে কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নিয়ে গ্রাম ছাড়ার হুমকি ও সবার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেন। এ সময় উত্তেজিত জনতা তাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন বলে জানান ওসি।