দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিনই ট্রাকে ট্রাকে দেশে আসছে ভারতীয় চাল। শেষ ১২ দিনে ৫১টি ভারতীয় ট্রাকে মোট এক হাজার ৭৮৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে এই স্থলবন্দর দিয়ে। এতে কেজিতে অন্তত ৫-৬ টাকা কমেছে চালের দাম।
বন্দরের চাল আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, চাল আমদানিতে সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তারা আমদানি অব্যাহত রেখেছেন। যার কারণে বেনাপোলসহ বিভিন্ন বন্দর দিয়ে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণে চাল দেশে ঢুকছে। তবে এই মুহূর্তে তারা লাভের মুখ দেখছেন না।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, গেল এক মাস আগে ইরি-বোরো মৌসুম শেষ হয়েছে। কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত ধানের আবাদ হলেও দেশের বাজারে হঠাৎ চালের দাম বাড়তে থাকে। তাই দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই সরকার বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নাগালের মধ্যে রাখতে চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই অবস্থায় গত ১২ আগস্ট আমদানিকারকদের নামে বরাদ্দ ইস্যু করে চাল আমদানি করার জন্য অনুমতি দেয়। এরপর ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়েছে।
প্রসিদ্ধ চাল আমদানিকারক গনি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ জানান, তার প্রতিষ্ঠানের নামে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে চাল আমদানি করা হচ্ছে। ভারত থেকে চাল আসা শুরু হওয়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম কমেছে। আমদানি অব্যাহত থাকলে আরও দাম কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি সরকারের কাছে চাল আমদানি অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছেন।
আরেক আমদানিকারক শামীম আহমেদ জানান, বন্দরের মোকামে আমদানি করা চালের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণা, সম্পা কাটারি, রত্নাসহ মিনিকেট জাতের চাল। সম্পা কাটারি জাতের চাল কেজিতে ৫ টাকা কমে ৬৭ টাকা, স্বর্ণা জাতের চাল কেজিতে ৩ টাকা কমে ৫২ টাকায় এবং আঠাশ জাতের চাল কেজিতে ৪ টাকা কমে ৫৩ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। চাল আমদানি করে লাভ হচ্ছে না।
কারণ হিসেবে তিনি জানান, দেশে চাল আমদানি শুরু হওয়ার আগেই ভারতের ব্যবসায়ীরা কেজিতে ৩-৪ টাকা করে দাম বাড়িয়েছে। দাম না বাড়ালে দেশে চালের দাম আরও কমে আসতো।
বেনাপোল বাজারের খুচরা বিক্রেতা হাজি স্টোরের হাফিজুর রহমান জানান, বর্তমানে চালের দাম নিয়ে কিছুটা হলেও ভোক্তাদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। গত ১০-১২ দিন আগে সম্পা কাটারি ৭২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এখন কেজিতে ৫ টাকা কমে ৬৭-৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য চাল কেজিতে ৩-৪ টাকা করে কমেছে।
আরও পড়ুন:
ক্রেতা হাবিুবুল্লাহ ও রাসেল হোসেন জানান, আগের চেয়ে দাম কেজিতে ৪-৫ টাকা করে কমেছে। আমরা দিনমজুরি করি। যত কমবে আমাদের জন্য তত ভালো। ভারত থেকে চাল আসার কারণে মনে হচ্ছে কমেছে। আগে দাম বেশি ছিল। হিসেব অনুযায়ী আরও কমার কথা। এক মাস আগে ইরি-বোরা মৌসুম গেলো। সেই চাল বাজারে থাকার কথা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা মজুদ করার কারণে সরকারকে আমদানি করতে হচ্ছে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, চার মাস বন্ধ থাকার পর এবার বেনাপোল বন্দরে চাল আমদানি পুনরায় শুরু হওয়ায় বন্দরটিতে আবার কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, গত ৭ দিনে ৫১টি ট্রাকে এক হাজার ৭৮৫ মেট্রিক টন চাল ভারত থেকে আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ২১ আগস্ট ৯টি ট্রাকে ৩১৫ মেট্রিক টন, ২৪ আগস্ট ৬টি ট্রাকে ২১০ মেট্রিক টন, ২৭ আগস্ট দুটি চালানে ১২ ট্রাকে ৪২০ মেট্রিক টন, ২৮ আগস্ট ৩ ট্রাকে ১০৫ মেট্রিক টন, ৩০ আগস্ট ৬ ট্রাকে ২১০ মেট্রিক টন, রোববার (৩১ আগস্ট) ৬টি ট্রাকে ২১০ মেট্রিক টন, সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) ৯টি ট্রাকে ৩১৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমদানিকৃত চাল দ্রুত ছাড়করণের জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল এই বন্দর দিয়ে সর্বশেষ চাল আমদানি হয়েছিল।
এদিকে কাস্টমস হাউজের রাজস্ব কর্মকর্তা (আরও) রেজাউল ইসলাম জানান, আমদানিকারকরা ২ শতাংশ এআইটি ডিউটি দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি করছেন। এর আগে চালের উপর ৬৩ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ ছিল। সরকার চাল আমদানিতে অনুমতি দেওয়ায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পূর্বের ৬৩ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। ফলে আমদানিকারকরা কম শুল্কে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণে চাল আমদানি করছেন। আমদানিকৃত চাল দ্রুত খালাসে আমদানিকারকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
মো. জামাল হোসেন/এমএন/এমএস