১৮ কোটি বই ছাপা বাকি, এবারও উৎসব ফিকে হওয়ার ‘শঙ্কা’

বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা বাস্তবায়নে কয়েক বছর ধরেই ব্যর্থ হচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষেও মাধ্যমিকের চার শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে জানুয়ারিতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না। ফলে বছরের প্রথমদিন ১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া ‘বই উৎসব’ ফিকে হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং বই ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে ফিরে যেতে হতে পারে। পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্র বলছে, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ৩০ কোটি বই ছাপাতে হবে। সরকার ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বই ছাপা শেষ করার রূপরেখা ও সেগুলো দেশের উপজেলা শিক্ষা অফিসে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। অথচ ২০ নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ১১ কোটির মতো বই ছাপা হয়েছে, যার অধিকাংশই প্রাথমিকের। বাকি ১৮ কোটিরও বেশি বই ছাপানো এখনো বাকি। এরমধ্যে রয়েছে ষষ্ঠ থেকে নবম— এ চার শ্রেণির বই। বই ছাপানোয় পিছিয়ে থাকা পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা যে রোডম্যাপ করেছিলেন, তা মেনে কাজ করেছেন। কিন্তু ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের দরপত্র এক দফা বাতিল করায় এ সংক

১৮ কোটি বই ছাপা বাকি, এবারও উৎসব ফিকে হওয়ার ‘শঙ্কা’

বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়ার ঘোষণা বাস্তবায়নে কয়েক বছর ধরেই ব্যর্থ হচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষেও মাধ্যমিকের চার শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে জানুয়ারিতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না। ফলে বছরের প্রথমদিন ১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া ‘বই উৎসব’ ফিকে হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এবং বই ছাড়া অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে স্কুল থেকে ফিরে যেতে হতে পারে।

পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সূত্র বলছে, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ৩০ কোটি বই ছাপাতে হবে। সরকার ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বই ছাপা শেষ করার রূপরেখা ও সেগুলো দেশের উপজেলা শিক্ষা অফিসে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। অথচ ২০ নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র সাড়ে ১১ কোটির মতো বই ছাপা হয়েছে, যার অধিকাংশই প্রাথমিকের। বাকি ১৮ কোটিরও বেশি বই ছাপানো এখনো বাকি। এরমধ্যে রয়েছে ষষ্ঠ থেকে নবম— এ চার শ্রেণির বই।

বই ছাপানোয় পিছিয়ে থাকা পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা যে রোডম্যাপ করেছিলেন, তা মেনে কাজ করেছেন। কিন্তু ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের দরপত্র এক দফা বাতিল করায় এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে ছাপাখানা মালিকদের সঙ্গে চুক্তিসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করতে সময় লেগেছে। এতে বই ছাপায় অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে এনসিটিবি।

পাঠ্যবই ছাপা ও বিতরণে প্রতিবছর এনসিটিবির এমন ‘দীর্ঘসূত্রতা’ ও ‘অনিশ্চয়তায়’ ক্ষোভ জানিয়েছেন অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, দেরিতে বই হাতে পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্লাসও শুরু হচ্ছে দেরিতে। অথচ পরীক্ষাগুলো যথাসময়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে শিখন ঘাটতি নিয়ে পরবর্তী ক্লাসে উঠে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বই ছাপা-বিতরণ এবং শিক্ষাপঞ্জি তৈরির ক্ষেত্রে সমন্বয় করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

এখনো ১৮ কোটি বই ছাপা বাকি

এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ২৯ কোটি ৮০ লাখ ১১ হাজার ৫৬৬ কপি বই ছাপানোর কাজ করছে এনসিটিবি। এর মধ্যে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ছাপা হয়েছে ১১ কোটি ৭০ লাখ ৯১ হাজার ২৯৯ কপি। এখনো বাকি ১৮ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার ২৬৭টি বই।

‘চুক্তি অনুযায়ী কিছু ছাপাখানা কাজ শুরু করেছে। আরও চুক্তি বাকি রয়েছে। আশা করছি, সব চুক্তি দ্রুত শেষ হলে ছাপা ও বাঁধাইয়ের কাজ পুরোদমে চলবে এবং ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাবে।’— এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মতিউর রহমান খান পাঠান

পুনরায় দরপত্র আহ্বান করায় ছাপায় কিছুটা পিছিয়ে থাকার কথা স্বীকার করলেও বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী এনসিটিবির সচিব অধ্যাপক মো. সাহতাব উদ্দিন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ভালো ছিল। কিন্তু অনিবার্য কারণে এক দফায় দরপত্র বাতিল করতে হয়েছিল। সেজন্য কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি। তবে এখন যেভাবে কাজ চলছে, তাতে জানুয়ারি মাসে সব বই বিতরণের ব্যাপারে আশাবাদী।’

আরও পড়ুন
মাধ্যমিকে ৩ শ্রেণির সাড়ে ১২ কোটি বই ছাপানো হবে, ব্যয় ৪৪৫ কোটি
বই ছাপা নিয়ে এবারও ‘ঘোর সংকট’
পুরান ঢাকা থেকে এনসিটিবির নকল বই ছাপানো চক্রের ৫ জন আটক

মাধ্যমিকের চার শ্রেণির বই ঘিরে বড় ‘সংকট’

মাধ্যমিকের (সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি) ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণির বই ছাপানোর বিষয়টি দেখভাল করে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বিতরণ নিয়ন্ত্রণ শাখা। পাশাপাশি এ শাখা থেকে মাদরাসার ইবতেদায়ির বই ছাপার বিষয়টিও সমন্বয় করা হয়।

বিতরণ নিয়ন্ত্রণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার মাধ্যমিক, দাখিল ও কারিগরির ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ১২ কোটি ৫৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৭১ কপি বই ছাপা হবে। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য চার কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৫০৯ কপি, সপ্তম শ্রেণির জন্য চার কোটি ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯২ কপি এবং অষ্টম শ্রেণির জন্য চার কোটি দুই লাখ ৩৪ হাজার ৬৯৮ কপি বই ছাপা হবে। এ তিন শ্রেণির বই ছাপা ও বিতরণে প্রথম দফা দরপত্র বাতিলের পর পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়। গত ২২ অক্টোবর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এসব বইয়ের ক্রয়াদেশের অনুমোদন দেওয়া হয়।

১৮ কোটি বই ছাপা বাকি, এবারও উৎসব ফিকে হওয়ার ‘শঙ্কা’

নিয়ম অনুযায়ী, ক্রয়াদেশ পাওয়ার পর ছাপাখানা মালিকদের সঙ্গে বই ছাপানোর চুক্তি করা শুরু করে এনসিটিবি। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির কিছু লটের বই ছাপাতে চুক্তি হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির অধিকাংশ লটের বইয়ের চুক্তিই এখনো হয়নি। চুক্তি হওয়া ছাপাখানাগুলোতে ষষ্ঠ ও সপ্তমের বই ছাপার কাজ চলছে।

ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা চার কোটি ৪৩ লাখ ১৭ হাজার ৫০৯ কপি। ২০ নভেম্বর পর্যন্ত এ শ্রেণির মাত্র ১৪ শতাংশ বা ৬০ লাখ চার হাজার ৪৫১ কপি বই ছাপা হয়েছে। সপ্তম শ্রেণিতে মোট বই চার কোটি ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯২ কপি। ছাপা হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশের মতো (২০ লাখ ৭৯ হাজার ২৩৫ কপি)। এছাড়া অষ্টম শ্রেণিতে ৩ শতাংশের মতো বই। সংখ্যা যা ১২ লাখ কপির কাছাকাছি। অথচ অষ্টম শ্রেণিতে মোট বই চার কোটি দুই লাখ ৩৪ হাজার ৬৯৮ কপি।

এদিকে, নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার ক্রয়াদেশের অনুমোদন পেতেও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। গত ১৪ অক্টোবর ক্রয়াদেশ অনুমোদন পাওয়ার পর ছাপাখানার সঙ্গে নবম-দশমের বই ছাপানোর চুক্তি শুরু করে এনসিটিবি। নবম-দশমের পাঁচ কোটি ৫৪ লাখ ৯০ হাজার ৮৬৯ কপি বইয়ের মধ্যে ছাপা হয়েছে মাত্র ৮৮ লাখ ৭৮ হাজার ৫৩৯ কপি। শতাংশের হিসাবে যা মাত্র ১৬ শতাংশ।

‘প্রাথমিকের ৯০ শতাংশের বেশি বই ছাপা শেষ এবং নভেম্বরের মধ্যেই সব বই ছাপা, বাঁধাই ও কাটিং শেষ হবে। আশা করছি, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেশের সব উপজেলায় বই পৌঁছে যাবে। ১ জানুয়ারি নতুন বই হাতে ক্লাসে বসতে পারবে প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা।’— এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক আবু নাসের টুকু

পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বিতরণ নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মতিউর রহমান খান পাঠান জাগো নিউজকে বলেন, ‘কিছু ছাপাখানার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। তারা ছাপার কাজ শুরু করেছেন। আরও চুক্তি বাকি রয়েছে। সেগুলোও দ্রুত শেষ হবে। পুরোদমে ছাপা ও বাঁধাইয়ের কাজ করলে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে (১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত) ভালো অগ্রগতি হবে বলে আশা করছি।’

আরও পড়ুন
বই ছাপায় ‘সাফল্য’, ৩৫ ছাপাখানাকে সংবর্ধনা দিলো এনসিটিবি
ভোটের আগে নতুন বই পাবে না মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা
এক বছরে পাঠ্যবইয়ের চাহিদা কমেছে ১০ কোটি

প্রাথমিক-ইবতেদায়ির বই ছাপা শেষের পথে

মাধ্যমিকের বই ছাপা-বিতরণ নিয়ে সংকট দেখা দিলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শেষের পথে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি। প্রাথমিকের বই ছাপা-বিতরণ দেখভাল করে উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ শাখা।

এ শাখা সূত্র জানায়, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট বইয়ের সংখ্যা ৮ কোটি ৫৯ লাখ ২৫ হাজার ৩৭৯ কপি। এরমধ্যে ৯০ দশমিক ৩৬ শতাংশ বা ৭ কোটি ৭৬ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭৩ কপি বই ছাপা ও বাঁধাইয়ের কাজ শেষ। কাটিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে ৮৯ দশমিক ৯০ শতাংশ।

এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে পাঠানোর আগে যে পিডিআই (সরবরাহ-পূর্ব পরিদর্শন) করা হয়, তা সম্পন্ন হয়েছে ৮৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ (৭ কোটি ৩৪ লাখ ১১ হাজার ২০৯) বইয়ের। সব কাজ শেষে উপজেলা পর্যায়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ৬ কোটি ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার ৭০৩ কপি, যা শতাংশের হিসাবে ৮০ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক আবু নাসের টুকু জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রাথমিকের ৯০ শতাংশের বেশি বই ছাপা শেষ। নভেম্বরের মধ্যেই সব বই ছাপা, বাঁধাই, কাটিং শেষ হয়ে যাবে। আশা করছি, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সব উপজেলায় বই পৌঁছে যাবে। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা ১ জানুয়ারি নতুন বই হাতে ক্লাসে বসতে পারবে।’

এদিকে, ইবতেদায়ির (মাদরাসার প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি) শিক্ষার্থীদের জন্য এবার তিন কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার ৩৪৭ কপি বই ছাপানো হচ্ছে। ২০ নভেম্বর পর্যন্ত ৮২ শতাংশ ইবতেদায়ির বই ছাপানো শেষ হয়েছে। সেই হিসাবে দুই কোটি ৫৫ লাখ ১৭ হাজার ৮৬৫ কপি বই ছাপানো শেষ। নভেম্বরের বাকি ১০ দিনে অবশিষ্ট ১৮ শতাংশ বই ছাপা শেষ হবে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইবতেদায়ির বইও উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। ফলে ইবতেদায়ির শিক্ষার্থীরাও বছরের শুরুতে বই পাবে।

বই বিতরণে দীর্ঘসূত্রতা, শিক্ষাপঞ্জিতে সমন্বয়ের দাবি

খাতা-কলমে শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় ১ জানুয়ারি, আর শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বছরে তিনটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিক। দেরিতে বই হাতে পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা দেরিতে ক্লাসে বসে। অথচ পরীক্ষার সূচি নির্ধারিতই থাকে। এতে শিখন ঘাটতি নিয়ে পরবর্তী ক্লাসে উঠছে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘমেয়াদে এমন শিখন ঘাটতিতে শিক্ষার মানে বড় বিপর্যয় ঘটাতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা।

তাদের ভাষ্যমতে, সরকারকে অবশ্যই জানুয়ারির শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দিতে হবে। যদি বিশেষ পরিস্থিতিতে তা পিছিয়ে যায়, বই বিতরণে দেরি হয়, তখন শিক্ষাপঞ্জি তৈরিতে ক্লাস শুরুর বিষয়টি সমন্বয় করতে হবে।

আরও পড়ুন
পাঠ্যবইয়ে নিম্নমানের কাগজ আর নয়, বাধ্যতামূলক হচ্ছে জলছাপ
‘মাদরাসার শিক্ষার্থীদের কোয়ালিটি আছে, সেটা স্বীকার করা উচিত’
প্রাথমিকে ধর্ম শিক্ষকের বিষয়ে কী ভাবছে সরকার
বদলিতে ‘একক ক্ষমতা’ নিলো মন্ত্রণালয়, শিক্ষা ক্যাডারে ক্ষোভ

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক মারজান আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এনসিটিবি কোনো বছরেই জানুয়ারি মাসের মধ্যে বই বিতরণ শেষ করতে পারছে না। জানুয়ারি মাস অনেকটা ক্লাস ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পার করতে হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চে রমজান-ঈদের দীর্ঘ ছুটি। এপ্রিলে কিছুদিন ক্লাসের পর মে-জুনে আবার গ্রীষ্মকালীন অবকাশ। এরপর ঈদুল আজহা, শীতকালীন অবকাশসহ নানা ছুটি রয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিক্ষকদের আন্দোলনে ক্লাস হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘বই দেরিতে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষাপঞ্জিতে ঠিকই জুলাইয়ে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ বা ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে। ক্লাস হোক না হোক পরীক্ষাটা হচ্ছে। এতে সবই হচ্ছে শুধু শিক্ষার্থীদের পড়ালেখাটা হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে একটি প্রজন্ম মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, জানুয়ারির শুরুতে বই দিতে হবে। কোনো কারণে তাতে দেরি হলে অবশ্যই শিক্ষাপঞ্জি বা পরীক্ষার সূচি সমন্বয় করে পিছিয়ে দিতে হবে। যাতে ক্লাসগুলো ঠিকমতো হয়।’

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে ধারাবাহিক শিখন ঘাটতি একটি জাতিকে পঙ্গু করে দিতে পারে। সময়মতো বই ও ক্লাস না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অথচ পরীক্ষায় ভালো ফল করছে— যার ফলে তারা ধাপে ধাপে উচ্চশিক্ষায় গেলেও ভেতরটা অন্তঃসারশূন্য।

দীর্ঘমেয়াদে শিখন ঘাটতিতে শিক্ষায় বিপর্যয়ের শঙ্কা

দীর্ঘমেয়াদে ধারাবাহিক শিখন ঘাটতি একটি জাতি বা রাষ্ট্রকেই পঙ্গু করে দিতে পারে বলে মনে করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। পাশাপাশি তাদের সব ধরনের জ্ঞান অন্বেষণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু সময়মতো বই পেলো না, ক্লাস হলো না, কিছুই পড়তে পারলো না, কিন্তু পরীক্ষাটা ঠিক হয়ে গেলো। এভাবে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক উতরে উচ্চশিক্ষাও নিয়ে ফেলছে শিক্ষার্থীরা, বিভিন্ন ফন্দি-ফিকির করে ভালো জিপিএ পেয়ে যাচ্ছে তারা। কিন্তু ভেতরটা অন্তঃসারশূন্য।’

অধ্যাপক মনজুর আহমেদ বলেন, ‘এতে ক্ষতিটা কার? ওই শিক্ষার্থীর তো অবশ্যই। বড় ক্ষতি রাষ্ট্রের। কারণে তারাই একদিন এ রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেবে, পরিচালনা করবে। কিন্তু তাদের দক্ষতা তো শূন্যের কোঠায়! এজন্য শিক্ষাখাত নিয়ে হেলাফেলা করাটা মোটেও উচিত হবে না। ছাত্রছাত্রীর হাতে বই তুলে দেওয়া, ক্লাসে পড়ানো, দীর্ঘমেয়াদে ভালো শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা জরুরি।’

জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আশা করছি, যথাসময়ে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই হাতে পাবে। যদি কোনো কারণে কিছু বই পেতে দেরি হয়, সেটার ঘাটতি পূরণে অবশ্যই মন্ত্রণালয় ও মাউশি ব্যবস্থা নেবে। আমরাও চাই না যে, শিক্ষার্থীরা শিখন ঘাটতি নিয়ে পরবর্তী ক্লাসে উঠুক।’

এএএইচ/এমএএইচ/এমএফএ/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow