২২ খেলোয়াড়ের মধ্যে নয়নই একমাত্র দুর্ভাগা

2 days ago 8

২০২৪ সালে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের যে সাফল্যগুলো আছে, তার অন্যতম অনূর্ধ্ব-২১ হকি দলের বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন। ২৬ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর ওমানের মাসকাটে বসেছিল হকি জুনিয়র এশিয়া কাপ। ১০ দলের এই টুর্নামেন্ট থেকে পঞ্চম হয়ে বাংলাদেশ জুনিয়র বিশ্বকাপে খেলার টিকিট নিশ্চিত করে। এ বছর নভেম্বরে ভারতে হবে হকির যুবাদের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট বিশ্বকাপ।

হকির যে কোনো পর্যায়ে আগে কখনো বিশ্বকাপ খেলেনি বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক সেই অভিজ্ঞতা হবে এই বছর। এক ঝাঁক যুবক স্টিক-বলের কারুকাজ দিয়ে বাংলাদেশের হকিকে তুলেছেন অনন্য উচ্চতায়। সেই দলের গর্বিত সদস্য গোলরক্ষক মো. নুরুজ্জামান নয়ন

সর্বশেষ প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডানের জার্সিতে খেলা নয়ন দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন জুনিয়র এশিয়া কাপে। ২২ খেলোয়াড়ের মধ্যে নয়নই দুর্ভাগা যিনি দলকে বিশ্বকাপে তুলেও নিজেরই খেলা হবে না।

নভেম্বরে বাংলার যুবারা যখন বিশ্বকাপের মাঠে থাকবেন, তখন নয়ন থাকবেন দর্শক হয়ে। বয়সের কারণে তার খেলা হবে না। বিশ্বকাপ যখন শুরু হবে তার মাস তিনেক আগে নয়ন ২১ পেরিয়ে পা দেবেন ২২-এ। বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন, খেলতে না পারা এবং হকিতে উঠে আসার গল্প নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন দিনাজপুরের এই যুবক।

জাগো নিউজ: বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জনে অনেক বড় অবদান ছিল আপনার। আপনিও এটাও জানেন যে, ঘাম আর শ্রম দিয়ে যে বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করেছেন, সেই বিশ্বকাপে আপনি খেলতে পারবেন না। অনুভূতিটা কতটা তিক্ত?
নুরুজ্জামান নয়ন: রিজিক বলতে একটা কথা আছে। কে কী পাবেন, সেটা আল্লাহই নির্ধারণ করে রাখেন। আমি এটাকে নিয়তি হিসেবেই মেনে নিয়েছি। তাই আমার কোনো আফসোস নেই। মনও খারাপ করছি না।

জাগো নিউজ: নিজে খেলতে পারবেন না। তাহলে সান্ত্বনা খুঁজছেন কীভাবে?
নুরুজ্জামান নয়ন: দেখেন, বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলবে। আমরা সেই যোগ্যতা অর্জন করেছি। সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। আর সেখানে আমার কিছুটা হলেও ভূমিকা ছিল। আরেকটি বিষয় হলো, আমি তো পারফরম্যান্সের জন্য বাদ পড়বো না। বাদ পড়ব বয়সের কারণে। এখানে কিছুই করার নেই।

২২ খেলোয়াড়ের মধ্যে নয়নই একমাত্র দুর্ভাগা

জাগো নিউজ: আপনি তো ওমানে ৬টি ম্যাচই খেলেছেন। আপনার পারফরম্যান্সও ছিলো প্রশংসনীয়। দলের জুনিয়ররা এখন বিশ্বকাপে খেলবেন। তাদের প্রতি আপনার কী বার্তা থাকবে?
নুরুজ্জামান নয়ন: আমরা ২২ জন খেলোয়াড় ছিলাম ওমানে জুনিয়র এশিয়া কাপে। আমি বয়সের কারণে বাদ পড়বো। বাকি ১৭ জনের সবাই বিশ্বকাপ দলে সুযোগ নাও পেতে পারে। পারফরম্যান্সের বিষয় আছে, ইনজুরির বিষয় আছে। অন্য সমস্যায়ও কেউ বাদ পড়তে পারে। আমি ওমানে কেবল থাইল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ৫-৭ মিনিট ছিলাম না। বড় ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পর কোচ আমাকে বসিয়ে জুনিয়র গোলরক্ষককে নামিয়েছিলেন। বিশ্বকাপে জুনিয়র কেউ সুযোগ পাবেন এবং আমি আশা করবো যেই সুযোগ পাবেন দেশের জন্য সবকিছু উজাড় করে দিয়ে খেলবেন।

জাগো নিউজ: গ্রুপ পর্বে মালয়েশিয়া ও চীনের বিপক্ষে ম্যাচ দুইটি কঠিন ছিল। দুই ম্যাচ ড্রয়ের পেছনে আপনার দারুণ পারফরম্যান্স ভূমিকা রেখেছিল। ওই দুই ম্যাচ নিয়ে কিছু বলুন।
নুরুজ্জামান নয়ন: হ্যাঁ, মালয়েশিয়া ও চীনের বিপক্ষে ড্র করে আমরা গুরুত্বপূর্ণ দুই পয়েন্ট নিয়েছিলাম। ম্যাচ দুটি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের ছিল। আমি মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলাম।

জাগো নিউজ: হকিতে কীভাবে আসলেন?
নুরুজ্জামান নয়ন: আমার জেলা দিনাজপুর। ছোট বয়সে স্কেটিং করতাম। মশিউর নামে আমার এক মামা হকি খেলতেন। তাকে বলেছিলাম, আমাকে খেলাধুলা শেখাও। মামা বলেছিলেন, ‘আমি তো খেলাধুলা ভালোভাবে করতে পারলাম না। তোকে বিকেএসপিতে ভর্তির চেষ্টা করবো।’ তিনি আমাকে বিকেএসপিতে ভর্তি করে দিলেন। দুই বছর অনুশীলনের পর বিকেএসপির মূল দলে খেলার সুযোগ পাই। ২০১৬ সালে ভর্তি হয়ে ২০২২ সালে আমি বিকেএসপি অধ্যায় শেষ করি।

জাগো নিউজ: এখন কোথায় পড়াশুনা করেন?
নুরুজ্জামান নয়ন: এখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগে পড়াশোনা করছি। কিছুদিন আগে শেষ হওয়া বিজয় দিবস হকিতে আমি হকি খেলোয়াড় কল্যাণ ঐক্য পরিষদের হয়ে খেলেছিলাম।

জাগো নিউজ: আপনি কি শুরু থেকেই গোলরক্ষক হিসেবে খেলে আসছেন?
নুরুজ্জামান নয়ন: আমি রক্ষণে খেলতে পছন্দ করতাম। তবে আমার কোচ কাওসার স্যার বলেছিলেন, ‘তোমার উচ্চতা (৬ ফুট) ভালো। গোলরক্ষক হিসেবে খেলো। তারপর থেকেই আমি এই পজিশনে খেলে আসছি।’

জাগো নিউজ: আপনার পরিবারে কে কে আছেন? অন্য কেউ খেলাধুলা করেন?
নুরুজ্জামান নয়ন: বাবা-মা এবং আমরা দুই ভাই দুই বোন। বাবা ব্যবসা করেন, মা গৃহিনী। ভাই-বোনদের মধ্যে আমি বড়। অন্য কেউ খেলাধুলা করে না। ছোট ভাই আবু বকর সিদ্দিক ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তার হকি খেলায় আগ্রহ আছে। আমি তাকে হকি খেলোয়াড় বানাতে চাই।

জাগো নিউজ: বাংলাদেশ জুনিয়র এশিয়া কাপে যোগ্যতা অর্জন করেছিল এএইচএফ কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে। আপনি সিঙ্গাপুরের সেই টুর্নামেন্ট মিস করেছিলেন। কেন?
নুরুজ্জামান নয়ন: লিগে আবাহনীর বিপক্ষে আমাদের ম্যাচে ঝামেলা হয়েছিল। ফেডারেশন তখন বেশ কয়েকজনকে নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন শাস্তি দিয়েছিল। আমিও নিষিদ্ধের মধ্যে ছিলাম। দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ফেডারেশন। তাতেই আমি ওমানে জুনিয়র এশিয়া কাপ খেলতে পেরেছিলাম।

জাগো নিউজ: আপনার ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার সম্পর্কে কিছু বলেন।
নুরুজ্জামান নয়ন: মোহামেডানের আগে আমি আবাহনীতে খেলেছিলাম। আমি প্রথম জাতীয় দলে খেলি গত এশিয়ান গেমসে। আমি দুইবার জুনিয়র এএইচএফ কাপে খেলেছি।

জাগো নিউজ: ধন্যবাদ।
নুরুজ্জামান নয়ন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

আরআই/এমএমআর/এমএস

Read Entire Article