২৫ মণের ‘রাজা’ বিক্রি হবে ১০ লাখে

3 months ago 47

কোরবানির পশুর হাটে বিশাল দেহের একমাত্র গরুটির নাম ‘রাজা’। খামারি দাম হেঁকেছেন ১০ লাখ টাকা। তবে এখনো ক্রেতা মেলেনি। পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটির বড় পশুর হাট মাইনীমূখ বাজারে রাজাকে বিক্রি করতে আনেন জালাল উদ্দিন।

গায়ের রং হালকা খয়েরি। ২৫ মণ হবে দেহের ওজন। তবে ক্রেতারা নাকি সর্বোচ্চ সাত লাখ বলেছেন। রাজার সঠিক মূল্য এখনো মেলেনি তাই বিক্রিও হয়নি।

রাজার মালিক জালাল উদ্দিন বলেন, ‘গতবার ঈদের বাজারে দাম উঠেছিল আট লাখ টাকা। তবে রাজাকে পৌঁছে দিতে হবে সুদূর চট্টগ্রাম শহরে। এতদূরে যাওয়া রিস্ক হবে ভেবে আর বিক্রি করিনি। এ বছর বাজারে ক্রেতা কম, দামও কম। সামনে কি হয় চিন্তায় আছি। তবে উপযুক্ত ক্রেতা পেলে বড় ধরনের ছাড় দিব।’

রাজাকে পাঁচ বছর আগে দেড় লাখ টাকায় কিনেছিলেন জালাল উদ্দিন। ছোট রাজাকে গত পাঁচ বছর ধরে লালন পালন করে একটু লাভের আশায় কোরবানির হাটে বিক্রির চেষ্টা ছিল তার। ২০২০ সালে চারিদিকে যখন করোনার মহামারিতে সব কাজকর্ম বন্ধ, তখন ঘরে বসে কিছু করার ভাবনা থেকে দেশি গরুর পাশাপাশি বিদেশি গরু পালনের উদ্যোগ নেন তিনি। রাজাকে নিয়ে শুরু হয় স্বপ্ন দেখার নতুন পথ।

২৫ মণের ‘রাজা’ বিক্রি হবে ১০ লাখে

শাহীওয়াল জাতের বীজ থেকে ফিজিয়ান মায়ের গর্ভে রাজার জন্ম। রাজাকে শুকনো খড়, কাঁচা ঘাস, ধানের কুড়া ও লবণ দিয়ে ভাতের মাড় খেতে দিতে হয় প্রতিদিন। রাজার খাবারের পেছনে খরচ আছে প্রতিদিন দুইশ টাকা। গত পাঁচ বছরে রাজার পেছনে খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি। কেনার মূল্যসহ রাজার পেছনে বিনিয়োগ হয়েছে মোট পাঁচ লাখ টাকা।

খামারি জালাল উদ্দিনের বাড়ি রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার দুর্গম কালাপাকুজ্যা ইউনিয়নে। উপজেলার সঙ্গে আর নেই সড়ক যোগাযোগ। কাপ্তাই লেক পাড়ি দিয়ে যেতে হয় উপজেলার হাট বাজারে। শুষ্ক মৌসুমে হ্রদ শুকিয়ে গেলে পায়ে হাঁটা ছাড়া বিকল্প থাকে না। রাজাকে নিয়ে উপজেলার মাইনীমূখ বাজারে যেতে সময় লেগেছে আড়াই ঘণ্টা। এবার তো আসা হলো বাজারে কিন্তু রাজার বিক্রি না হওয়াতে ফিরে যাওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন জালাল উদ্দিন। ফিরে যাওয়ার ভাবনা বাদ দিয়ে রাজাকে বাজারের আশপাশে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন। যত দিন বিক্রি না হবে ততদিন বাড়িতে ফিরবেন না জালাল উদ্দিন এমন প্রতিজ্ঞাই করেছিলেন সেদিন।

জালাল উদ্দিন বলেন, ‘ভাই সেই কষ্টের কথা আর কি বলবো। মে মাসের ১৭ তারিখ শনিবার রাজাকে নিয়ে বাজারে এলাম। কিন্তু দাম ঠিকমতো পেলাম না, তাই বিক্রিও করিনি। পরে বাজারের কাছে একটি মাদরাসার বারান্দায় ত্রিপল দিয়ে রাজার থাকার ব্যবস্থা করলাম। আমি ও আমার ভাইসহ দিনরাত সেই বারান্দাতেই কাটিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবারও রাজার ন্যায্য মূল্য বলেনি কেউ। সবশেষ গত শনিবার বাজারে দাম কমতে কমতে দাঁড়ালো সাত লাখে। পরে আর বিক্রি করিনি। বাড়িতে ফেরত নিয়ে আসছি। এখন যদি কেউ বাড়িতে কিনতে আসে তাহলে সাত লাখেই বিক্রি করে দিব।’

আরমান খান/আরএইচ/এমএস

Read Entire Article