৪৩ বিসিএসে ২৬৭ জনকে বাদ দেওয়া নিয়ে যা বললেন সারজিস

2 days ago 8

৪৩তম বিসিএসের পুনরায় ভ্যারিফিকেশন হয়েছে। এতে মোট ২৬৭ জন বাদ পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।

তিনি লেখেন, ‘সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম ৪৩তম BCS এর পুনরায় ভ্যারিফিকেশন হয়েছে ৷ ১৬৮ জনকে এই ধাপে বাদ দেওয়া হয়েছে ৷ ১ম ও ২য় ভ্যারিফিকেশন মিলে মোট বাদ পড়েছে ২৬৭জন ৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখানো হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার নেগেটিভ রিপোর্ট ৷ অর্থাৎ পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড ৷ কিন্তু এখানে অনেকগুলো প্রশ্ন আছে ৷ আওয়ামীলীগের সময়ে আওয়ামীলীগ পরিবার ব্যতীত অন্যান্য পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা যে কারো জন্য এই প্রথম শ্রেণীর সরকারি ভালো চাকরি পাওয়া কঠিন বিষয় ছিল ৷ একই ধরনের একটি চিত্র যদি এখন দেখা যায় তাহলে পার্থক্যটা কোথায়?

যে চাকুরীপ্রার্থী সে যদি নিজ যোগ্যতায় প্রিলিমিনারী, রিটেন, ভাইভা পাশ করে সুপারিশপ্রাপ্ত হয় এবং তার যদি পূর্বে কোনো অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততা না থাকে তাহলে তার বাবা, চাচা, মামা, নানার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারনে তাকে চাকুরি থেকে বঞ্চিত করা হবে কেন ?

আমি কি করবো সেটা কি আমার চাচা নির্ধারণ করতে পারে ? কিংবা আমার চাচা কি করবে সেটা কি আমি নির্ধারণ করতে পারি ?

একটা সময় পরে সবাইকে ব্যক্তিগত জীবন গুছাতে হয় ৷ ইভেন আমার বাবার রাজনৈতিক মতাদর্শের সাথে আমার চিন্তা ভাবনার মিল নাও থাকতে পারে ৷ তাহলে পরিবারের কোনো একজন সদস্যের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কারনে অন্য একজন সদস্যকে বঞ্চিত করার অধিকার রাষ্ট্র পায় কিনা?

সবচেয়ে বাজে ব্যাপারটা এবার হয়েছে-গোয়েন্দা সংস্থার অনেকে গিয়ে এবার ইউনিয়ন আর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সেক্রেটারির কাছে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত চাকুরীপ্রার্থীদের পরিবারের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা জানতে চেয়েছে !

৪৩ বিসিএসে ২৬৭ জনকে বাদ দেওয়া নিয়ে যা বললেন সারজিস

তার মানে সারাজীবন অধ্যবসায় করা বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট এক মেধাবী তরুণ প্রায় ৩বছর দিনরাত এক করে পড়াশোনা করার পর প্রিলি রিটেন ভাইভা পাশ করে ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর কোন এক ওয়ার্ড সভাপতি সেক্রেটারির মতামতের কাছে জিম্মি হয়ে যাবে ? সে তার কর্ম নির্ধারণ করবে?

তাহলে এতো আয়োজনের কি দরকার ছিল? এই ভ্যারিফিকেশন তো তাহলে প্রিলির আগে হয়ে যাওয়া উচিৎ ৷ তাহলে তার জীবনের গুরুত্বপূর্ন সময়গুলো নষ্ট হতো না ৷

আর কোন যোগ্যতা ভিত্তিতে সে এই মতামত দেয় ? স্থানীয়ভাবে এমনিতেই নেতিবাচক একটা পলিটিক্স দেখা যায়, কে কারে ল্যাং মেরে উঠতে পারে ! যদি একজন চাকুরীপ্রত্যাশী এমন স্থানীয় পলিটিক্সের স্বীকার হয় তাহলে সে দায় সরকার নিবে কিনা ?

আমার অমর একুশে হলের জাকারিয়া ভাই এডমিন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিল ৷ কি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তিনি ! ডিপার্টমেন্ট ফার্স্ট, MS এ CGPA 4.00 out of 4.00 ! ১ম ভ্যারিফিকেশন উতরে গেলেও রি-ভ্যারিফিকেশনে বাদ দেওয়া হয় ! যারা উনাকে চেনেন তাদের সবার আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা ! আমি ভেবেছিলাম আওয়ামী আমলে উনাকে আটকানো হতে পারে ! কারন উনার দাঁড়ি আছে, নুরানী চেহারা, ৫ ওয়াক্ত নামায পড়েন ৷ জামাত-শিবির ট্যাগ দেওয়া সহজ ৷ কিন্তু উনাকে আটকানো হলো এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়ে ! কিন্তু এখন তো নিয়োগের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড প্রক্রিয়া নতুন করে সেট হওয়ার কথা ছিল!

এটা শুধু একটা এক্সামপল, এমন আরো অনেকজনের সাথে কথা হয়েছে ৷

পরে দেখলাম যারা বাদ পড়েছে তাদের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নতুন করে আবেদন করার সুযোগ দিয়েছে ৷ কিন্তু এই ভ্যারিফিকেশন খেলা কেন ? এখানে অনেকেই আছে যারা পূর্বের চাকুরি ছেড়ে এসেছে, অনেকের ছিল জীবনের শেষ চাকুরির পরীক্ষা, অনেকের সামনের জীবন নির্ভর করছে এই চাকুরির উপর ৷

সেখানে যদি এমন রিয়েলিটি সেট করা হয় তবে যে প্রজন্ম আগামীর চাকুরিপ্রার্থী তারা আপনাদের উপর আস্থা রাখতে পারবে না, দোদুল্যমান অবস্থায় না থেকে দেশ ছেড়ে চলে যাবে ৷ অলরেডি এটা নিয়ে কথা শুরু হয়েছে ৷ যেটা কখনোই কাম্য নয় ৷

চাকুরি হবে মেধার ভিত্তিতে ৷ যে মতাদর্শেরই হোক না কেন, যদি পূর্বে ক্ষমতার অপব্যবহার, অন্যায়, অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততা না থাকে তাহলে নাগরিক হিসেবে সরকারি চাকুরি পাওয়া তার সাংবিধানিক অধিকার ৷ কোনো অহেতুক এক্সকিউজে যেটা ক্ষুন্ন করা কখনোই ভালো বার্তা বহন করে না।’

এসএনআর/এমএস

Read Entire Article