প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির চক্রের বিষয়ে তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে সোমবার (১৮ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ নাভিলা কাশফি।
এর আগে গত ২৪ অক্টোবর প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগ উঠায় গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ২৪ জন শিক্ষার্থীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ নাভিলা কাশফি এ রিট দায়ের করেন।
রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পিএসসির চেয়ারম্যান, জনপ্রশাসন সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে। ওই রিটের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন আদালত। প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বাতিল চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
২৪ জন শিক্ষার্থীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহ নাভিলা কাশফি এ নোটিশ পাঠান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পিএসসির চেয়ারম্যান, জনপ্রশাসন সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিবসহ ১৪ জনকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা বাতিলের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। লিগ্যাল নোটিশের পরও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এই রিট দায়ের করা করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবী।
প্রশ্নফাঁস সংক্রান্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নোটিশে রেফারেন্স হিসেবে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষায় ১৭ জনকে প্রশ্ন দেন সাজেদুল'-শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কথা বলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলামের ১৭ জন প্রার্থী ছিল। প্রশ্ন সরবরাহের বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে ১৩ জন পাস করেছেন। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
পিএসসির প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গত ৭ জুলাই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিষ্ঠানটির অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলামসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর মধ্যে সাজেদুলসহ ছয়জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
কোন প্রক্রিয়ায় কোথা থেকে, কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়, পরীক্ষার্থী সংগ্রহ ও তাদের কীভাবে প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করানো হয়-সেসব বিষয়ে স্বীকার করেছেন তারা। একইসঙ্গে এ চক্রে জড়িত অন্য সদস্যদের বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন তারা। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছে সিআইডি। পাশাপাশি তদন্তে নাম আসা পিএসসির বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
সাজেদুল ২০ বছর ধরে পিএসসির অফিস সহায়ক হিসেবে চাকরি করেছেন। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়ার পর সাময়িক বরখাস্ত করা হয় তাকে। তিনি এখন কারাগারে।
চাকরিতে প্রবেশের কিছুদিন পর সাজেদুল জানতে পারেন, পিএসসির সে সময়ের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী বিজি প্রেসের কর্মচারী আতিকুল ইসলামের মাধ্যমে পিএসসির বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করেন। প্রশ্নফাঁস করে অল্প সময়ে অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার জন্য ওই চক্রে ঢোকার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এর পর আবেদ আলীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। প্রথমদিকে পিএসসির অধীনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষায় আবেদ আলীকে অন্তত তিনজন প্রার্থী সংগ্রহ করে দিতেন সাজেদুল। বিনিময়ে পেতেন মোটা অঙ্কের টাকা। পরে বাড়াতে থাকেন প্রার্থীর সংখ্যা।
একপর্যায়ে সাজেদুল প্রশ্নফাঁস চক্রের অন্যতম একজন হয়ে ওঠেন। নিজেই প্রশ্নফাঁস করতেন। চক্রের অন্য সদস্যদের কাছে সেই প্রশ্ন বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিতেন।
এফএইচ/এসআইটি/এমএস