৫ কমিশনে নারী কোথায় কোথায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন : রওনক জাহান

3 days ago 10

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. রওনক জাহান বলেন, নারী কমিশন ছাড়াও অন্যান্য ৫টি কমিশনে নারী কোথায় কোথায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন! এছাড়া  বৈষম্য নিরসনে করণীয় বিষয়ে সুপারিশমালা প্রেরণ করতে হবে। জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে বাতিল হওয়া নারী কোটা ইস্যু, নারীর অধিকার ও সাইবার নিরাপত্তা ও অধিকার  নিশ্চিতে সব নারী সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। অভিন্ন পারিবারিক আইন কার্যকর করতে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশের সংবিধান ও নারী’ বিষয়ক একটি গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. রওনক জাহান এ মন্তব্য করেন।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি  ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম। 

আলোচকরা সমতাপূর্ণ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে প্রচলিত সংবিধান নতুনভাবে রচনার পরিবর্তে সংস্কার ও সংশোধনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। বক্তারা বলেন,  বিচার বিভাগের কর্মপ্রক্রিয়ায় জেন্ডার সংবেদনশীল এবং নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এর পাশাপাশি, অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন, বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইনের সংস্কার, সংবিধানের ৪২নং অনুচ্ছেদ অনুসারে সবার সম্পদে সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, গণহত্যা চলাকালে নারীর প্রতি  সংঘটিত সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের উপর জোর দেওয়াসহ, নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রতিকারে আইনি লড়াইয়ে আইনি সহায়তাপ্রাপ্তি জোরদার, নারীর কর্মজীবনের স্বাধীনতা, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ, মব জাস্টিস দূর করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

অ্যাড. মাসুদা রেহানা ধারণাপত্রে বলেন, আন্তর্জাতিক সিডও সনদের অনুচ্ছেদ-২ এবং ১৬(১)(গ) থেকে সংরক্ষণ প্রত্যাহার করতে হবে। সংবিধানে প্রদত্ত সব মৌলিক অধিকার কার্যকর করতে হবে। অনুকূল আর্থ-সামাজিক পরিবেশ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং রাজনীতিতে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সম্পদ-সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার বা সমঅংশীদারিত্ব নিশ্চিতের উপর জোর দিতে হবে।

অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, মানব পাচার ও পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে নারীবান্ধব বিভিন্ন আইন থাকলেও আইনের প্রয়োগ ও নজরদারি কম। আইন বাস্তবায়নের উপর জোর দিতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদের আলোকে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ বাস্তবায়নে মনিটরিংয়ের উপর জোর দিতে হবে। ভিকটিমের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভিকটিমবান্ধব সাপোর্ট সেন্টার গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

অ্যাড. অমিত দাশগুপ্ত বলেন, সবাই আইনের চোখে সমান বলা হলেও মৌলিক অধিকারের নীতিতে সমতা কেন হলো না। নারী-পুরুষের সমতা কেন অর্জিত হলো না তা পর্যবেক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি হিন্দু পারিবারিক আইন ও মুসলিম পারিবারিক আইনের তুলনামূলক আলোচনা করে বলেন, ধর্মীয় নীতি দ্বারা পরিচালিত পারিবারিক আইনে এখনো বৈষম্য আছে। প্রচলিত আইনে গৃহস্থালির কাজের স্বীকৃতি না থাকায় নারীরা সম্মান পাচ্ছেন না, স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে  সংবিধানে কোনো উল্লেখ নেই। এসব বিষয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

অধ্যাপক ইমরান আজাদ সংবিধান রচনার প্রেক্ষাপট আলোচনা করে বলেন, সংবিধানে পারিবারিক আইন বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। সংবিধান একটি রাজনৈতিক দলিল। সংবিধানের ২৮নং অনুচ্ছেদ অনুসারে নারীর প্রতি সমতা নিশ্চিত করাসহ নারীসহ অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সমতা নিশ্চিতে সংবিধানে থাকা বিধানগুলোর প্রতি রাষ্ট্রকে জোর দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন জাতিসত্তাদেরও সংবিধানে স্বীকৃতি দিতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন,  পরিবর্তিত সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিবেচনায় রেখে সংবিধানের মান উন্নয়নের উপর জোর দিতে হবে। সংস্কার করার ক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিতসহ সব জাতিসত্তাকে অন্তর্ভুক্তিকরণের উপর জোর দিতে হবে। পাশাপাশি সংবিধানের সুরক্ষায়  নারীর ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় অধিকার নিশ্চিত, সংবিধানের আলোকে নারীর অধিকার প্রাপ্তিতে অংশীদারিত্বের স্বীকৃতি দেওয়া, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি এবং অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখার আহ্বান জানান।

স্বাগত বক্তব্যে মালেকা বানু বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সবার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে সংবিধানে। সংবিধান এ দেশের সব মুক্তিকামী মানুষের আত্মমর্যাদার প্রতীক এবং বাংলাদেশের নারী সমাজের জন্য একটি আলোকবর্তিকা। নারী-পুরুষের সমতার কথা সংবিধানে উল্লেখ থাকলেও নারী আন্দোলনের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও সে সমতার লক্ষ্যে আমরা এখনো পৌঁছতে পারিনি। নারী-পুরুষসহ পিছিয়ে পড়া সব জনগোষ্ঠীর সমতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন ।

গোলটেবিল বৈঠকে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী, ব্র্যাকের ড. বিশ্বজিত রায় চৌধুরী, ঢাকা ওয়াইডব্লিউসিএর প্রোগ্রাম ম্যানেজার পূরবী তালুকদার, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়ক ফাল্গুনী ত্রিপুরা, নারীমৈত্রীর লায়লা রীপা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার একে রাশেদুল হক প্রমুখ।

Read Entire Article