বিপিসির তিন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ও যমুনা অয়েল কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ব্যবসা জ্বালানি তেল বিপণন হলেও তাদের লাভের তিন চতুর্থাংশ আসে ব্যাংক সুদ থেকে। ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপিটরি ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ) হিসেবে লাভের ৫ শতাংশ পান কোম্পানিগুলোর স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
পাশাপাশি আইনি ফাঁকে ওই ফান্ডের ওপর সুদ হিসেবেও কোটি কোটি টাকা ভাগাভাগি হয়। আইন অনুযায়ী তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা শ্রমিক হিসেবে গণ্য হলেও কর্মকর্তারাও পান এ তহবিলের ভাগ।
২০২৩-২৪ পর্যন্ত আগের পাঁচ বছরে দুই খাতে ৪৬৫ কোটি টাকার কাছাকাছি ব্যয় হয়েছে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার। অথচ ওই সময়ে জ্বালানি বিক্রিতে অপারেটিং লাভ হয়েছে ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। বিপিসির সরকারি টাকা নিজেদের হিসাবে রেখে ব্যাংকে স্থায়ী আমানতের মাধ্যমে নন-অপারেটিং মুনাফা করছে তিন বিপণন কোম্পানি। বিষয়টি নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
শ্রম আইনের ২৪০ ধারার ৩ উপধারা অনুযায়ী ডব্লিউপিপিএ তহবিলের সুদের পরিমাণ হিসাবায়ন করা হয়। ফলে এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় অর্থের কোনোরূপ তছরুপ হচ্ছে না বলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মনে করে।- মেঘনা পেট্রোলিয়ামের বোর্ড চেয়ারম্যান ফারজানা মমতাজ
জানা যায়, তিন বিপণনকারী কোম্পানি ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, কেরোসিন, ফার্নেস অয়েল, মেরিন ফুয়েল, জেট ফুয়েল সরাসরি বিপিসি থেকে বাকিতে পায়। এরপর নিজেদের ডিলার ও এজেন্টদের কাছ থেকে আগাম পে-অর্ডার নিয়ে এসব পণ্য বিক্রি করে কোম্পানি তিনটি। নির্ধারিত পেট্রোলিয়াম পণ্য বিক্রির বিপরীতে বিপিসি থেকে লিটারপ্রতি নির্ধারিত হারে কমিশন পায় তারা।
নন-অপারেশনাল খাতে আয় বেশি
তিন কোম্পানির মূল কাজ জ্বালানি অপারেশন ও বিপণন হলেও ব্যবসার আয়ের বড় অংশ আসে নন-অপারেটিং আয় থেকে। নিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ পর্যন্ত বিগত পাঁচ বছরে তিন কোম্পানির (কর পরবর্তী) নিট লাভ হয়েছে চার হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে অপারেশনাল প্রফিট হয়েছে ১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। অবশিষ্ট আয় এসেছে ব্যাংক সুদ থেকে। অভিযোগ আছে, বিপিসির বকেয়া নিয়মিত পরিশোধ না করে জমিয়ে রাখা টাকা ব্যাংকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করে মূল ব্যবসার বাইরে ব্যাংক সুদে বেশি লাভবান হচ্ছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা।
কার কাছে কত এফডিআর
২০২৩-২৪ অর্থবছরের তিন কোম্পানির বার্ষিক ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ৩০ জুন বিভিন্ন ব্যাংকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ডিপোজিটসহ তিন কোম্পানির নগদ ও ব্যাংক স্থিতি ছিল ১৭ হাজার ৩৪ কোটি ৫৯ হাজার ৩৪০ টাকা। এর মধ্যে পদ্মা অয়েলের নগদ ও ব্যাংকে জমা ছিল ৫ হাজার ৪৯০ কোটি ৬৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা, তাতে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংক জমা (এফডিআর) রয়েছে ২২শ ৭৬ কোটি ৯৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। মেঘনা পেট্রোলিয়ামের নগদ ও ব্যাংকে জমা ছিল ৫ হাজার ৪৭৭ কোটি ১৭ লাখ ৯৫ হাজার ৫৫ টাকা, তাতে দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংক জমা (এফডিআর) ২২শ ৭৫ কোটি ৮৫ লাখ ৮২ হাজার ৮২২ টাকা এবং যমুনা অয়েলের নগদ ও ব্যাংকে জমা ছিল ৬ হাজার ৬৬ কোটি ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ২৮৫ টাকা, তাতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যাংক জমা (এসটিডি ও এফডিআর) ২৪শ ৮৯ কোটি টাকা।
আমাদের কোম্পানিগুলোতে ডব্লিউপিপিএফ খাতে ব্যয়ের অংশটা অনেক বেশি। এটি নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও প্রশ্ন তুলেছেন। বিষয়টি শ্রম আইন সংশ্লিষ্ট। যে কারণে আইন সংশোধনের বিষয়ে আমরা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। পাশাপাশি গত অর্থবছর (২০২৪-২৫) থেকেই এ ডব্লিউপিপিএফে ব্যয় আমরা পুরোপুরি বন্ধ রাখতে বলেছি।- জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম
তিন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিপিসির পাওনা
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বিপিসির নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৬০ জুন তারিখে তিন কোম্পানি থেকে বিপিসির পাওনা ছিল ২৪ হাজার ৫৭৯ হাজার ৬৪ লাখ ৯৮ হাজার ৪২১ টাকা। এর মধ্যে পদ্মা অয়েল থেকে ৯ হাজার ৩৬৯ কোটি ৫৮ লাখ ২৯ হাজার ৯৬৪ টাকা, মেঘনা পেট্রোলিয়াম থেকে ৭ হাজার ২৩৩ কোটি ৯ লাখ ৫১ হাজার ৩৬৫ টাকা এবং যমুনা অয়েল থেকে ৭ হাজার ৯৭৬ কোটি ৯৭ লাখ ১৭ হাজার ৯২ টাকা বিপিসির পাওনা ছিল।
তিন কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশ
২০২৩-২৪ অর্থবছরে পদ্মা অয়েল ১৪০ শতাংশ, মেঘনা পেট্রোলিয়ামে ১৭০ শতাংশ এবং যমুনা অয়েল কোম্পানি ১৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশে লাভের ওপর ডাবল লাভ
২০২৩-২৪ পর্যন্ত আগের পাঁচ বছরে পদ্মা, মেঘনা, যমুনার লাভের ৫ শতাংশ হিসেবে ডব্লিউপিপিএফে ব্যয়িত হয়েছে ৩২০ কোটি ৮০ লাখ ৯ হাজার ৯০ টাকা। একই সময়ে ওই বরাদ্দ তহবিলের ওপর শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে সুদ হিসেবে দিতে হয়েছে ১৪৩ কোটি ৯৯ লাখ ৪০ হাজার ৪৩৩ টাকা। সবমিলিয়ে এ দুই খাতে ব্যয় হয়েছে ৪৬৪ কোটি ৭৯ লাখ ৪৯ হাজার ৫২৩ টাকা। এ যেন লাভের ওপর ডাবল লাভ। তিন কোম্পানির স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শুধু এক (২০২৩-২৪) অর্থবছরে এ তহবিলের ভাগ থেকে জনপ্রতি পাঁচ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকা পেয়েছেন।
- আরও পড়ুন
তেলের চেয়ে সুদে লাভ পদ্মা-মেঘনা-যমুনার
বেসরকারিতে ঝুঁকছে জ্বালানি খাত, একক নিয়ন্ত্রণ হারাবে বিপিসি
‘আলেজ’ সংকটে দেড় লাখ ডলার ক্ষতির মুখে বিপিসি
কর্ণফুলীতে বিপিসির ‘তেল চুরির’ সত্যতা মিলেছে, বন্ধে ১২ সুপারিশ
সবশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই বছরে পদ্মা অয়েল কোম্পানির মুনাফার ৫ শতাংশ হিসেবে ডব্লিউপিপিএফে জমা হয়েছে ২৬ কোটি ৮৯ লাখ ২১ হাজার টাকা। একই অর্থবছরে আগের বছরের বরাদ্দ তহবিলের সুদ হিসেবে ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি ৪০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। পাঁচ বছরে ডব্লিউপিপিএফ খাতে ১০০ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার এবং বরাদ্দ তহবিলের সুদ হিসেবে ৪২ কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে।
একইভাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মেঘনা পেট্রোলিয়ামে কোম্পানির মুনাফার ৫ শতাংশ হিসেবে ডব্লিউপিপিএফে ব্যয় হয়েছে ৩৬ কোটি ৫৯ লাখ ৫২ হাজার ৭৯ টাকা। একই অর্থবছরে বরাদ্দ তহবিলের সুদ হিসেবে ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি ২৭ হাজার ৮শ টাকা। সবমিলিয়ে পাঁচ বছরে ডব্লিউপিপিএফ খাতে ১২৮ কোটি ৬৩ লাখ ৯৪ হাজার ৯১৮ এবং বরাদ্দ তহবিলের সুদ হিসেবে ৬৪ কোটি ৮৮ লাখ ৪৭ হাজার ২৬৭ টাকা ব্যয় হয়েছে।
তাছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যমুনা অয়েল কোম্পানির মুনাফার ৫ শতাংশ হিসেবে ডব্লিউপিপিএফে ব্যয় হয়েছে ২৯ কোটি ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৫ টাকা। একই অর্থবছরে বরাদ্দ তহবিলের সুদ হিসেবে ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি ১৩ লাখ ৯৪ হাজার ১৭৫ টাকা। সবমিলিয়ে পাঁচ বছরে ডব্লিউপিপিএফ খাতে ৯২ কোটি ১ লাখ ৭৪ হাজার ১৭২ এবং বরাদ্দ তহবিলের সুদ হিসেবে ৩৬ কোটি ৯২ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৬ টাকা ব্যয় হয়েছে।
আইনে কী বলে?
২০০৬ সালের শ্রম আইনের ২৩২ ধারা অনুযায়ী- ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন ধারা নিবন্ধিত কোনো যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠানের হিসাব বছরের শেষ দিনে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ অন্যূন এক কোটি টাকা এবং স্থায়ী সম্পদের মূল্য অন্যূন দুই কোটি টাকা সেসব কোম্পানির মুনাফায় শ্রমিকের অংশগ্রহণ তৈরি হয়।
শ্রম আইনের ২৩৪ ধারা অনুযায়ী- প্রত্যেক বছর শেষ হওয়ার অন্যূন নয় মাসের মধ্যে পূর্ববর্তী বছরের নিট মুনাফার ৫ শতাংশ অর্থ ৮০: ১০: ১০ অনুপাতে যথাক্রমে অংশগ্রহণ তহবিল, কল্যাণ তহবিল এবং বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে দেবে।
অন্যদিকে শ্রম আইনের ২৪০ ধারার উপধারা-১ মোতাবেক শ্রমিকের অংশগ্রহণ তহবিলে (ডব্লিউপিপিএফ) বরাদ্দ অথবা জমা সব অর্থ কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনার কাজে লাগাতে পারে। উপধারা-১১ মোতাবেক অংশগ্রহণ তহবিলের অর্থ সরকারি মালিকানাধীন বিনিয়োগযোগ্য কোনো লাভে বিনিয়োগ করা যাবে এবং উপধারা-৩ মোতাবেক কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনার কাজে নিয়োজিত অংশগ্রহণ তহবিলের কোনো অর্থের ওপর কোম্পানি ব্যাংক হারের আড়াই শতাংশ অধিক হারে অথবা এর সাধারণ শেয়ারের জন্য ঘোষিত মুনাফার হারের ৭৫ শতাংশ হারে, যা অধিক হবে, সুদ দেবে।
কীভাবে সরকারি এসব অর্থের ব্যয় কমানো যাবে?
আইন বিশেষজ্ঞ জ্বালানি খাতের অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অয়েল কোম্পানি যৌথ মূলধনী নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের লাভের নির্ধারিত অংশ শেয়ারহোল্ডার এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ভাগ দিতে হয়। কিন্তু পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অয়েল থেকে পাওনা সঙ্গে সঙ্গে আদায় করে বিপিসি ওই টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত রাখলে সুদ থেকে হওয়া লাভের অংশ কাউকে ভাগ দিতে হবে না। এতে শতভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটবে এবং জনগণের রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ও কমবে। আবার আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রের বড় অঙ্কের এ ব্যয় কমানো সম্ভব হবে।
আইনবিদরা বলছেন, পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অয়েলে যে লাভ নির্ধারিত হচ্ছে, তা অপারেটিং এবং নন-অপারেটিং সব আয় রয়েছে। ‘অপারেটিং প্রফিটের মধ্যে শ্রমিকের অংশগ্রহণ থাকবে’- শ্রম আইনে এমন সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হলে সরকারি অর্থের সাশ্রয় হবে। শ্রম বৈষম্য দূর হবে। আবার তহবিলের সুদের বিষয়ে আইনের ২৪০ ধারার ১১ উপধারায় ‘ঘোষিত লভ্যাংশের ৭৫ শতাংশ হারে, যেটি অধিক হবে’ কথাটি রয়েছে, তাতে, অধিকের স্থলে ‘যেটি কম হবে’ শব্দটি পুনঃস্থাপন করে আইন সংশোধন করা হলে ওই খাতে ব্যয় অনেক কমে যাবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট কবীর চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রাইভেট ও রাষ্ট্রীয় যতগুলো কোম্পানি রয়েছে এর মধ্যে জ্বালানি তেল কোম্পানিগুলোতে শ্রমিকের অংশগ্রহণ তহবিলে (ডব্লিউপিপিএফ) লাভের অংশ বেশি পান। শুনেছি বিপিসির একটি কোম্পানির এক কর্মচারী বছরে ১২ লাখ টাকা ডব্লিউপিপিএফের টাকা পেয়েছেন। আইনি সুযোগ কাজে লাগিয়ে এসব টাকা ভাগাভাগি হচ্ছে। আবার এসব টাকা স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পান। দেখা যায়, কোম্পানিগুলোতে স্থায়ী জনবলের চেয়ে অস্থায়ী জনবল বেশি। এখানেও একটি বৈষম্য তৈরি হয়েছে।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘শুধু জ্বালানি কোম্পানিগুলোর চাকরিই কি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ? মূলত বিগত সময়ের সরকারগুলো ও তাদের আমলারা নিজেদের সুবিধার জন্য আইন তৈরি করেছেন। আইনেও বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা তছরুপ হচ্ছে, ভাগাভাগি হচ্ছে।’
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
ডব্লিউপিপিএফ এবং এ তহবিলে বরাদ্দ অর্থের ওপর সুদ হিসেবে ব্যয়িত অর্থ তছরুপ হচ্ছে কি না?- এমন প্রশ্ন করা হয় পদ্মা অয়েল কোম্পানির চেয়ারম্যান সাবেক সচিব এ কে এম জাফর উল্লা খান, মেঘনা পেট্রোলিয়ামের চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা মমতাজ এবং যমুনা অয়েলের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদের কাছে।
এর মধ্যে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের বোর্ড চেয়ারম্যান ফারজানা মমতাজ ব্যক্তিগত সহকারীর মাধ্যমে লিখিত বক্তব্যে জাগো নিউজকে বলেন, ‘শ্রম আইনের ২৪০ ধারার ৩ উপধারা অনুযায়ী ডব্লিউপিপিএ তহবিলের সুদের পরিমাণ হিসাবায়ন করা হয়। ফলে এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় অর্থের কোনোরূপ তছরুপ হচ্ছে না বলে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মনে করে।’
পদ্মা অয়েলের চেয়ারম্যানের নির্দেশ অনুসারে তার পক্ষে কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (হিসাব ও অর্থ) কাঞ্চন চন্দ্র সোম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডব্লিউপিপিএফে বরাদ্দ অর্থ বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) অনুমোদন হওয়ার পর দেওয়া হয়। এজিএম ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে করার বিষয়ে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্দেশনা রয়েছে। তবে তা কিছুটা বিলম্ব হয়। এই সময়ের জন্য ডব্লিউপিপিএফে বরাদ্দ টাকাগুলো ‘ডিমড ইনভেস্টমেন্ট’ হিসেবে গণ্য করে আইন মোতাবেক সুদ দেওয়া হয়।’
যমুনা অয়েলের বোর্ড চেয়ারম্যানের নির্দেশনা থাকলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুস্তফা কুদরুত-ই ইলাহী কোনো বক্তব্য দেননি।
এ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কোম্পানিগুলোতে ডব্লিউপিপিএফ খাতে ব্যয়ের অংশটা অনেক বেশি। এটি নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও প্রশ্ন তুলেছেন। বিষয়টি শ্রম আইন সংশ্লিষ্ট। যে কারণে আইন সংশোধনের বিষয়ে আমরা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। পাশাপাশি গত অর্থবছর (২০২৪-২৫) থেকেই এ ডব্লিউপিপিএফে ব্যয় আমরা পুরোপুরি বন্ধ রাখতে বলেছি।’
এমডিআইএইচ/এএসএ/এমএফএ/জেআইএম