জয়পুরহাট জেলার গ্রামীণ এলাকাগুলোর পতিত জলাভূমি ও আমন মৌসুমে ডুবে থাকা নিচু জমিতে এখন ব্যতিক্রম এক চাষাবাদ চলছে। ডুবে থাকা এসব জমিতে চাষ হচ্ছে পুষ্টিগুণে ভরপুর প্রাকৃতিক ফল ‘পানিফল’।
জেলার গতনশহর, পারইল, মীর্জাপুর, ধরঞ্জিসহ আশপাশের এলাকায় এ ফল চাষ হচ্ছে। জলাশয়ে ভাসমান সবুজ পাতার নিচে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে বাদামি কিংবা কালচে বর্ণের এই ফল। খরচ কম, ফলন ভালো, বাজারে চাহিদাও বাড়ছে। সব মিলিয়ে পানিফল এখন জয়পুরহাটের কৃষকের নতুন আশার নাম।
মাত্র তিন মাস সময়কালের এই ফল চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, নিচু জমিতে আমন মৌসুমে পানি জমে থাকায় তারা এ বিকল্প চাষ বেছে নিয়েছেন। বিঘা প্রতি মাত্র ৫-৬ হাজার টাকা খরচ করে ৪৫ থেকে ৫০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৬০ হাজার টাকা।

গতনশহর গ্রামের চাষি বাবুল হোসেন বলেন, এবার প্রায় ২ বিঘা জমিতে পানিফলের চাষ করেছি। আগে এই জমিগুলো জলাবদ্ধ অবস্থায় ফাঁকা পড়ে থাকতো। এখন পানিফলের চাষ করে প্রতিদিন বাজারে ৫০-৬০ কেজি বিক্রি করছি। প্রতি কেজির পাইকারি দাম ২৫-৩০ টাকা, খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। এটি চাষে তেমন সার-কীটনাশক লাগে না, শুধু জলাশয় ও যত্ন থাকলেই ফলন ভালো হয়।
পানিফল চাষে শুধু পুরুষ নয়, অনেক নারী উদ্যোক্তাও এগিয়ে আসছেন। রোকসানা বেগম বলেন, সকালবেলা পুকুরে নেমে ফল তুলি, বিকেলে বাজারে বিক্রি করি। এতে সংসারের খরচ কিছুটা হলেও চালাতে পারছি।
স্থানীয় যুবক মেহেদী হাসান জানান, আমার আবাদযোগ্য জমি না থাকলেও এখান থেকে পাইকারি কিনে খুচরা বিক্রি করি। তাতে দিনে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা লাভ করি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এ কে এম সাদিকুল ইসলাম জানান, জয়পুরহাট জেলায় প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে পানিফলের চাষ করা হয়েছে। এখনো সীমিত পরিসরে হলেও এর সম্ভাবনা বিশাল। আমরা সরকারি সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার যথাযথ উদ্যোগ নিয়েছি। চাষিদের সময়মতো পরামর্শ দিচ্ছি।
পানিফল শুধু চাষিদের জীবিকা নয়, একইসঙ্গে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আল মামুন জানান, পানিফল শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে, টক্সিন দূর করে, হজম শক্তি বাড়ায়। এতে রয়েছে- ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন- সি ও বি ১২ ও আয়রন। যা হাড় ও রক্তে পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং পেটের গ্যাস-অম্বল দূর করে।
এফএ/এএসএম

2 hours ago
4









English (US) ·