অনিয়ম, লুটপাট ও অব্যবস্থাপনায় নিমজ্জিত ব্যাংকবহির্ভূত ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে না পারা, উচ্চ খেলাপি ঋণ এবং মূলধন ঘাটতি—এই তিন সূচককে ভিত্তি ধরে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘অব্যবহারযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) এসব ব্যাংকগুলোর বিষয় নিয়ে গভর্নরের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সেখানে গভর্নরের অনুমোদন নিয়ে ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ (অবসায়ন) করার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘জনগণ যাতে তাদের সঞ্চয় নিরাপদে পুনরুদ্ধার করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।’
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে— পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, আভিভা ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি এবং প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানায়, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এতে সরকারের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেজুলেশন ডিপার্টমেন্ট এরই মধ্যে গভর্নরের সম্মতি নিয়ে অবসায়নের প্রস্তুতি নিতে কাজ শুরু করেছে।
অবসায়নের প্রক্রিয়ার শুরুতে ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন ২০২৩ অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিল করা হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য ব্যাংকের রেজুলেশন বিভাগে পাঠানো হয়েছে। অবসায়নের সময় ক্ষুদ্র আমানতকারীরা যেন তাদের জমা টাকা ফেরত পান, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি যেসব কর্মী এখন এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন, তারা চাকরিবিধি অনুযায়ী সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন বলেও জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘আমরা এটা করছি শুধু আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য। তাদের স্বার্থই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।'
লিকুইডেশন হবে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এ জন্য লিকুইডেটর (প্রতিষ্ঠান বন্ধের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি/সংস্থা) নিয়োগ করবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর।
তিনি আরও জানান, শেষ পর্যন্ত ৯টির বেশি ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বন্ধ হয়ে যেতে পারে।