জেলে বসেই অনার্সে ফার্স্ট, ১২ বছর পর মাস্টার্সেও প্রথম স্থান—কে এই শিবির নেতা?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম জেলে বসে স্নাতকে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হওয়ার ফলাফল পান। কিন্তু শিক্ষকদের অন্তঃকোন্দল এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ এনে ওই শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। এতে তিনি আর মাস্টার্সের জন্য বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারিনি। এরপর ছাত্রত্ব বাতিলের শাস্তি মাথায় নিয়ে দেশ ছাড়েন রফিকুল। পরবর্তীতে চীনে গিয়ে শেষ করেন মাস্টার্স। বর্তমানে তিনি সৌদির কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলামের ছাত্রত্ব বাতিলের ঘটনায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল হককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রত্ব বাতিল বিষয়ে গঠিত রিভিউ কমিটির সদস্যদের প্রতিবেদনের আলোকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৬তম সিন্ডিকেট সভায় রফিকুল ইসলামের ছাত্রত্ব পুনর্বহাল ও তার পরীক্ষার অপ্রকাশিত ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একযুগ পরে বুধবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় প্রকাশিত হয়েছে তার মাস্টার্

জেলে বসেই অনার্সে ফার্স্ট, ১২ বছর পর মাস্টার্সেও প্রথম স্থান—কে এই শিবির নেতা?
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম জেলে বসে স্নাতকে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হওয়ার ফলাফল পান। কিন্তু শিক্ষকদের অন্তঃকোন্দল এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ এনে ওই শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। এতে তিনি আর মাস্টার্সের জন্য বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারিনি। এরপর ছাত্রত্ব বাতিলের শাস্তি মাথায় নিয়ে দেশ ছাড়েন রফিকুল। পরবর্তীতে চীনে গিয়ে শেষ করেন মাস্টার্স। বর্তমানে তিনি সৌদির কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলামের ছাত্রত্ব বাতিলের ঘটনায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল হককে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছাত্রত্ব বাতিল বিষয়ে গঠিত রিভিউ কমিটির সদস্যদের প্রতিবেদনের আলোকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৬তম সিন্ডিকেট সভায় রফিকুল ইসলামের ছাত্রত্ব পুনর্বহাল ও তার পরীক্ষার অপ্রকাশিত ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একযুগ পরে বুধবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় প্রকাশিত হয়েছে তার মাস্টার্সের ফল। এতে তিনি বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন এবং সিজিপিএ-৪ অর্জন করেছেন। রফিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের ২০০৭-০৮ বর্ষের শিক্ষার্থী। ছাত্রজীবনে তিনি রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. হাসনাত কবীর স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রার্থী এমএসসি (থিসিস গ্রুপ) পরীক্ষা, ২০১২ (যা অনুষ্ঠিত হয়েছিল আগস্ট-নভেম্বর, ২০১৩ এবং সেপ্টেম্বর-নভেম্বর, ২০২৫ মাসে)’তে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হলো। তিনি ফলাফলে সিজিপিএ-৪ (আউট অব-৪) পেয়েছেন। এটি অস্থায়ীভাবে প্রকাশ করা হয়েছে এবং সিন্ডিকেটে প্রতিবেদন সাপেক্ষে কার্যকর হবে। কোনো অসংগতি দেখা দিলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফলাফল সংশোধন বা বাতিল করার অধিকার সংরক্ষণ করে। ফলাফল প্রকাশের পরে রফিকুল ইসলাম উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি ছিলাম আমার পরিবারের একমাত্র ছেলে। নিম্ন আয়ের আমার পরিবারের প্রথম প্রয়োজন ছিল আমার একটি ভালো ক্যারিয়ার। কিন্তু মাস্টার্সে শিক্ষকদের অন্তঃকোন্দল এবং আমার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে আমার ওপর থিসিস জালিয়াতির অভিযোগ এনে ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়। এতে আমার পরিবার বড় ধরনের ধাক্কা খায়। আমি এই ঘটনার পরে দীর্ঘদিন ট্রমার (যন্ত্রণা) ভেতর ছিলাম। একযুগ পরে আমার ফল প্রকাশ পাওয়া আমার জীবনের অন্যতম আনন্দঘন সংবাদ। আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া।’ শিক্ষা জীবন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘২০১৫ সালের শেষের দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উইকেন্ড প্রোগ্রামে মাস্টার্স সম্পন্ন করি এবং সেখানেও আমার সিজিপিএ-৪ আসে। এরপর আমি মানারাতে কিছুদিন কাটাই এবং পরে চীনে গিয়ে মাস্টার্স করি। সেখানে পিএইচডি শুরু করার পর দেশে ফেরত আসি। জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের মধ্যে হাসিনার পতনের পর আমি দেশে থেকে যাই। পরে চায়নাতে পিএইচডি ত্যাগ করে এখন আমি সৌদি আরবে কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছি।’ এদিকে তার ফল প্রকাশে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) ভিপি ও শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। তিনি ফেসবুকের এক পোস্টে লিখেন, ‘রফিকুল ইসলাম ভাই রাজশাহী মহানগর ছাত্রশিবিরের সাবেক শিক্ষা সম্পাদক। তার ওপর করা ফ্যাসিবাদী জুলুমের যুগাবসান ঘটল আজ। জেলে থেকে পরীক্ষা। অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। মাস্টার্সেও ৪.০০ পেয়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। এত ভালো ফলাফল। তাই জেলে ভরেও শান্তি হলো না। আটকে রাখা হলো ফলাফল। একদিন দুদিন নয় ১২ বছর।’ তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে ছাত্রশিবির কত ভাই যে শুধু একাডেমিক হ্যারাসমেন্ট এর শিকার হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে গেছে কিন্তু সার্টিফিকেট উঠাতে দেয়নি এরকম ভাইয়ের সংখ্যা ভূরি ভূরি। ছাত্রশিবিরের ত্যাগ-তিতিক্ষার শেকড় এই ক্যাম্পাসে অনেক গভীর। আমাদের বিজয় তাদের স্যাক্রিফাইসের ওপর দাঁড়িয়ে।’  

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow