ডায়েট ও ব্যায়ামের পরেও অতিরিক্ত ওজন কমছেনা? জানুন কারণ
সানজানা রহমান যুথী অতিরিক্ত ওজনকে আমরা প্রায়ই ‘স্বাস্থ্য ভাল’ বলে থাকি। কিন্তু আদতে অতিরিক্ত ওজন একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা। আর অনেক রোগীই সুশৃঙ্খল ব্যায়াম ও কঠোর ডায়েট চার্ট অনুসরণ করেও এই স্থূলতা কমাতে পারেন না। সব নিয়মকানুন মেনে চলার পরও কেন অতিরিক্ত ওজন থেকে রেহাই পাচ্ছেন না, তা অনেকেই বুঝতে পারেন না। যারা অতিরিক্ত ওজনজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি খুবই চিন্তার বিষয়। তাই ডায়েট ও ব্যায়ামের পরও কেন অতিরিক্ত ওজন কমানো কঠিন হয় — এ বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের পুষ্টিবিদ লিনা আক্তার। ১. কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ডায়েট ও ব্যায়ামের পরও ওজন কমানো কঠিন হওয়ার প্রধান কারণগুলো কী? লিনা আক্তার: সাধারণত অস্বাস্থ্যকর খাবার, অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ ও শারীরিক কার্যকলাপের অভাব হলে ওজন বাড়তে পারে। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ডায়েট ও ব্যায়ামের পরও ওজন কমে না। তাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন কারণ হতে পারে। যেমন, ওবিসোজিনস — এটি এমন ধরনের কেমিক্যাল যা ডিএনএ পরিবর্তন করতে পারে। ফলে ব্যক্তির জিনের বৈশিষ্ট্য ও কোষের কার্যকলাপ বদলে যায়। এতে মানুষের হ
সানজানা রহমান যুথী
অতিরিক্ত ওজনকে আমরা প্রায়ই ‘স্বাস্থ্য ভাল’ বলে থাকি। কিন্তু আদতে অতিরিক্ত ওজন একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা। আর অনেক রোগীই সুশৃঙ্খল ব্যায়াম ও কঠোর ডায়েট চার্ট অনুসরণ করেও এই স্থূলতা কমাতে পারেন না।
সব নিয়মকানুন মেনে চলার পরও কেন অতিরিক্ত ওজন থেকে রেহাই পাচ্ছেন না, তা অনেকেই বুঝতে পারেন না। যারা অতিরিক্ত ওজনজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি খুবই চিন্তার বিষয়।
তাই ডায়েট ও ব্যায়ামের পরও কেন অতিরিক্ত ওজন কমানো কঠিন হয় — এ বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন রাইয়ান হেলথ কেয়ার হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের পুষ্টিবিদ লিনা আক্তার।
১. কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ডায়েট ও ব্যায়ামের পরও ওজন কমানো কঠিন হওয়ার প্রধান কারণগুলো কী?
লিনা আক্তার: সাধারণত অস্বাস্থ্যকর খাবার, অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ ও শারীরিক কার্যকলাপের অভাব হলে ওজন বাড়তে পারে। তবে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে ডায়েট ও ব্যায়ামের পরও ওজন কমে না। তাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন কারণ হতে পারে। যেমন, ওবিসোজিনস — এটি এমন ধরনের কেমিক্যাল যা ডিএনএ পরিবর্তন করতে পারে। ফলে ব্যক্তির জিনের বৈশিষ্ট্য ও কোষের কার্যকলাপ বদলে যায়। এতে মানুষের হজমশক্তি, প্রজনন ও বৃদ্ধি প্রভাবিত হয়।
এছাড়া থাইরয়েড ও পিসিওএস এর মতো হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ, বিষণ্নতা ও ওসিডির মতো মানসিক অসুস্থতা, পারিবারিক ইতিহাস, বিপাকজনিত সমস্যা, ওষুধের প্রভাব, ডায়াবেটিস, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এর মতো রোগ, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, ডায়েট করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত না থাকা, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, এক্সট্রিম ডায়েট করা – এসব কারণেও অনেক সময় অতিরিক্ত ওজন কমতে চায় না।
২. কোন কোন হরমোনের সমস্যা ওজন কমানোকে বাধা দেয়?
লিনা আক্তার: ওজন কমানোর ক্ষেত্রে হরমোনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেমন ঘ্রেলিন ও লেপটিন হরমোন ক্ষুধা লাগা এবং ক্ষুধা নিবারণের সংকেত দেয়। এই দুটি হরমোনের অনিয়ম হলে ওজন কমানো বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া ইনসুলিন, অ্যাডিপোনেকটিন, গ্লুকাগন, এপিনেফ্রিন, কর্টিসল, থাইরয়েড, ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন — এই হরমোনগুলোর ভারসাম্যহীনতা বা কাজের ব্যাঘাতও ওজন কমাতে বাধা দেয়।
৩. জিনগত ফ্যাক্টরের কারণে কি ওজন কমানো কঠিন হতে পারে?
লিনা আক্তার: হ্যাঁ, জিনগত কারণ কিছু মানুষের ওজন কমানো কঠিন করে তোলে। যেমন জিনগত কারণে কারও কারও স্থূলতার প্রবণতা বেশি থাকে। এছাড়া জিনগত কারণে বিপাক হার কম থাকে, যেখানে কম ক্যালরি পোড়ানো হয় — যা ওজন কমাতে কঠিন করে তোলে। পাশাপাশি মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস হরমোন এবং নিউরনের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করে, যেখানে জিনগত প্রভাব থাকে। ফলে এগুলো ওজন কমানোর বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।
৪. অতিরিক্ত ওজন কমাতে কোন ধরনের ডায়েট প্যাটার্ন বেশি কার্যকর?
লিনা আক্তার: কোনো ভাইরাল কঠিন ডায়েট নয়, অতিরিক্ত ওজন কমাতে সবচেয়ে কার্যকর ডায়েট হলো সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা - যেখানে খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন, শাকসবজি, ফলমূল ও হোল গ্রেইন খাবার থাকবে। এবং অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।
৫. কোনো ওষুধ কি ওজন কমানোকে কঠিন করে তুলতে পারে?
লিনা আক্তার: হ্যাঁ, কিছু ওষুধ আছে যা ওজন কমানো কঠিন করে তুলতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, কর্টিকোস্টেরয়েড, গর্ভনিরোধক ওষুধ, কিছু অ্যান্টিহিস্টামিন, ডায়াবেটিসের ওষুধ ইত্যাদি। এই ধরনের ওষুধগুলো বিপাকক্রিয়া ধীর করে দিতে পারে, ক্ষুধা বাড়াতে পারে, যা শরীরে ফ্যাট জমার প্রবণতা বাড়ায়। এর ফলে ওজন কমানো কঠিন হয়ে যায়।
৬. ওজন কমানো ধীর হলে একজন ব্যক্তি কীভাবে তা পর্যবেক্ষণ ও সমাধান করতে পারে?
লিনা আক্তার: ওজন কমানো ধীর হলে প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে যে আসলেই আপনার ওজন কমার হার কমে গেছে কিনা। তারপর খাদ্যাভ্যাসের নোট রাখুন এবং ব্যায়াম পর্যবেক্ষণ করুন। হতে পারে আপনার শরীর এখন একই পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, তাই তা আর কাজ করছে না।
এছাড়া মানসিক চাপ, ওষুধের প্রভাব বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার কারণে বাধা হচ্ছে কি না, তা দেখুন। এরপর কারণ বের করে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, জীবনযাত্রার পরিবর্তন করে সমাধানে আসতে হবে। প্রয়োজনে একজন পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সর্বোপরি ধৈর্য ধরুন এবং শরীরকে সময় দিন।
এএমপি/জেআইএম
What's Your Reaction?