২০২৬ সালে ফ্যাশন শিল্পের মূল চ্যালেঞ্জ শুল্ক
২০২৬ সালে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে বৈশ্বিক ফ্যাশন শিল্প। মার্কিন শুল্ক ও বাণিজ্য উত্তেজনা পরিবর্তন এনেছে সরবরাহ চেইনে। ভোক্তারা এখন ক্রমবর্ধমানভাবে পণ্যমূল্য, শারীরিক সুস্থতা ও দীর্ঘায়ুকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। নতুন বছর ফ্যাশন শিল্পের জন্য হবে চ্যালেঞ্জিং। তবে প্রযুক্তির ব্যবহার কিছুটা স্বস্তি দেবে। বার্ষিক ফ্যাশন রিপোর্ট ‘দ্য স্টেট অব ফ্যাশন ২০২৬: হোয়েন দ্য রুলস চেঞ্জ’-এ বিষয়গুলো উপস্থাপিত হয়েছে, যা প্রকাশ করেছে মার্কিন বহুজাতিক কৌশল ও ব্যবস্থাপনা পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনজি অ্যান্ড কোম্পানি। গত ১৭ নভেম্বর প্রকাশিত রিপোর্টটিতে তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে ২০২৬ সালে বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও ভোক্তাদের আচরণে পরিবর্তন ফ্যাশন ব্যবসায় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। রিপোর্টের ফলাফলে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালে ফ্যাশন শিল্পের মূল উদ্বেগে রয়েছে বাণিজ্য উত্তেজনা ও শুল্কের প্রভাব। বিশ্বের ফ্যাশন নির্বাহীদের ৭৬ শতাংশই শুল্ককে বছরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহী কর্মকর্তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) শিল্পের সবচেয়ে বড় সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা পণ্য পৃথকীকরণ ও টেকসই বাড়
২০২৬ সালে নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে বৈশ্বিক ফ্যাশন শিল্প। মার্কিন শুল্ক ও বাণিজ্য উত্তেজনা পরিবর্তন এনেছে সরবরাহ চেইনে। ভোক্তারা এখন ক্রমবর্ধমানভাবে পণ্যমূল্য, শারীরিক সুস্থতা ও দীর্ঘায়ুকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। নতুন বছর ফ্যাশন শিল্পের জন্য হবে চ্যালেঞ্জিং। তবে প্রযুক্তির ব্যবহার কিছুটা স্বস্তি দেবে।
বার্ষিক ফ্যাশন রিপোর্ট ‘দ্য স্টেট অব ফ্যাশন ২০২৬: হোয়েন দ্য রুলস চেঞ্জ’-এ বিষয়গুলো উপস্থাপিত হয়েছে, যা প্রকাশ করেছে মার্কিন বহুজাতিক কৌশল ও ব্যবস্থাপনা পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনজি অ্যান্ড কোম্পানি।
গত ১৭ নভেম্বর প্রকাশিত রিপোর্টটিতে তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে ২০২৬ সালে বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও ভোক্তাদের আচরণে পরিবর্তন ফ্যাশন ব্যবসায় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
রিপোর্টের ফলাফলে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালে ফ্যাশন শিল্পের মূল উদ্বেগে রয়েছে বাণিজ্য উত্তেজনা ও শুল্কের প্রভাব। বিশ্বের ফ্যাশন নির্বাহীদের ৭৬ শতাংশই শুল্ককে বছরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।
একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহী কর্মকর্তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) শিল্পের সবচেয়ে বড় সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যা পণ্য পৃথকীকরণ ও টেকসই বাড়ানোর মতো অন্য ব্যবসায়িক অগ্রাধিকারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৪৬ শতাংশ মনে করছে ২০২৬ সালে শিল্পের অবস্থা আরও খারাপ হবে, যদিও ২৫ শতাংশ কিছু সুযোগ দেখছে। কোন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক বিষয়গুলোকে ২০২৬ সালে ফ্যাশন শিল্পের বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হিসেবে মনে করেন? এমন এক প্রশ্নের জবাবে শিল্পের নির্বাহীদের ৭৮ শতাংশ গ্রাহক আস্থা, ৬৬ শতাংশ ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, ৩০ শতাংশ অর্থনৈতিক অস্থিরতা, ২৫ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি ও ৪০ শতাংশ বিঘ্নিত বাণিজ্য প্রবাহের কথা বলেন।
আরও পড়ুন
২০ জনে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সিদ্ধান্ত শিল্পে অস্থিরতা আনবে
বিশ্ব অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে ‘বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব’ মেটাতে হবে
বাধা পেরিয়ে রপ্তানি আয় বেড়েছে, প্রত্যাশা ছুঁতে পারেনি প্রবৃদ্ধি
২০২৬ সালে ফ্যাশন শিল্পের মূল চ্যালেঞ্জ শুল্ক (ট্যারিফ) হলেও, রপ্তানিকারক দেশগুলো- যেমন বাংলাদেশসহ অন্যদের জন্য আরও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, এ চ্যালেঞ্জগুলোই বছরের ব্যবসায়িক পরিবেশ নির্ধারণ করবে।
বাণিজ্য ও শুল্ক
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির কারণে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য পরিবর্তিত হয়েছে। ফলে ব্র্যান্ড এবং সরবরাহকারীদের দ্রুত তাদের সোর্সিং ও উৎপাদন কৌশল সমন্বয় করতে হচ্ছে। নির্বাহীদের মতে, শুল্ক ২০২৬ সালের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, এটি সরবরাহ চেইনকে বিঘ্নিত করতে পারে ও ব্যয় বাড়াতে পারে- বিশেষ করে উত্তর আমেরিকায়।
উচ্চ শুল্কের কারণে সম্পূর্ণ ভ্যালু চেইনে খরচ বাড়ছে, যা বিশেষ করে ফ্যাশন শিল্পকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। বড় সরবরাহকারীরা তাদের উৎপাদন ও সরবরাহ নেটওয়ার্ককে আরও দক্ষ করার জন্য ফুটপ্রিন্ট অপ্টিমাইজেশন, ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন ব্যবহার করছে, আর ছোট ব্যবসায়ীরা ক্রমবর্ধমান চাপের মুখোমুখি হচ্ছে। যারা দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারবে, তারা তাদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা বজায় রাখতে সক্ষম হবে।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও কম প্রবৃদ্ধি
বিশ্বের ফ্যাশন শিল্পে ২০২৬ সালে আবারও এক অঙ্কের কম হতে পারে। চীনের জিডিপি ধীরে ধীরে বৃদ্ধির পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে সংযত ব্যয়ের কারণে চাহিদা কমে যেতে পারে এবং সম্প্রসারণের সুযোগ সীমিত হতে পারে।
অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলতে থাকায় শিল্পের মনোবল কমে যেতে পারে। ভোক্তারা আরও মূল্য সচেতন হয়ে উঠবেন। এটি বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যাচ্ছে, যেখানে ২০২৫ সালে ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাস কম ছিল।
ভোক্তাদের পরিবর্তিত পছন্দ
ভোক্তারা তাদের ব্যয়ের ধরন পুনর্বিবেচনা করছেন। মূলত পণ্যমূল্য, সুস্থতা ও দীর্ঘায়ুর ওপর বেশি জোর দিচ্ছেন তারা। এর মানে, ফ্যাশন ব্র্যান্ডদের আরও নির্বাচনি কেনাকাটার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে। কারণ ক্রেতারা অযথা খরচের চেয়ে লক্ষ্যভিত্তিক ও কার্যকরী কেনাকাটাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ফলে গ্রাহক আনুগত্য ২০২৬ সালের ফ্যাশন শিল্পের অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
আগামী বছর ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর মূল ফোকাস গ্রাহক ধরে রাখায় থাকবে। ৫০ শতাংশের বেশি শিল্প নেতৃত্ব মনে করছেন, এটি হবে বছরের মূল থিম। গ্রাহক আকর্ষণ ও ধরে রাখার জন্য ব্র্যান্ডগুলোকে তাদের দাম ও পছন্দে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো দাম বাড়িয়েছে, কিন্তু পণ্যের গুণমান বা সৃজনশীলতায় কোনো বড় উন্নতি দেখা যায়নি। ডিজাইনভিত্তিক ব্র্যান্ডগুলো পণ্য ও স্টোর অভিজ্ঞতা উন্নত করেছে। বর্তমানে মিড-মার্কেট সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে। ফ্যাশনের মূল ভ্যালু ক্রিয়েটর হিসেবে বিলাসবহুল খাতের স্থান দখল করছে। সুতরাং, এ বিষয়ে নজর দিতে হবে।
প্রযুক্তিগত রূপান্তর
বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন শিল্প বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। উচ্চ ইনপুট খরচ, সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন ও ধীর প্রবৃদ্ধি শিল্পের অর্থনৈতিক মডেলকে চাপের মধ্যে ফেলেছে। এই পরিস্থিতিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কেবল প্রতিযোগিতার সুবিধা নয়, ব্যবসায়িক অপরিহার্যতা হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। ব্র্যান্ডগুলো তাদের কর্মী বাহিনী পুনর্গঠন করছে, কিছু কাজ এআইভিত্তিক করে সৃজনশীল ও বিশ্লেষণাত্মক কাজে গুরুত্ব দিচ্ছে।
বিশ্বের বড় ফ্যাশন ও বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো ইতোমধ্যে জেনারেটিভ এআই ব্যবহার করে রুটিন কাজ, যেমন- অনলাইন কাস্টমার সার্ভিস, ছবি তৈরি, কপিরাইটিং, কনজিউমার সার্চ ও প্রোডাক্ট ডিসকভারি সহজ করছে। ৩৫ শতাংশের বেশি নির্বাহী এরই মধ্যে এই প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছেন। বিশেষ করে বিপণন ও বিক্রির ক্ষেত্রে জেনারেটিভ এআই অটোমেশন বড় উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করছে।
সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন
বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইন এখনো অস্থিতিশীল, যার পেছনে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, শুল্ক প্রভাব ও লজিস্টিক চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে। ব্র্যান্ডগুলোকে উৎপাদন দক্ষতা বজায় রাখতে ভোলাটাইল ইনপুট খরচ, বিলম্ব ও পরিবর্তিত বাণিজ্য রুট পরিচালনা করতে হবে।
শিল্প এখনো টেকসই বাড়ানোর চাপের মুখোমুখি। নির্বাহীদের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেই পরিবেশগত লক্ষ্য অর্জন ও লাভজনকতা বজায় রাখতে সমন্বয় করতে হবে।
ম্যাককিনজি অ্যান্ড কোম্পানি তার সুপারিশে বলেছে, ২০২৬ হবে ফ্যাশন কোম্পানিগুলোর জন্য আরেকটি অস্থির বছর। ফ্ল্যাট বা স্থির বাজারে কেবল সেই কোম্পানিগুলোই প্রবৃদ্ধি ও বাজার অংশীদারত্ব অর্জন করতে পারবে, যারা গ্রাহকদের মন ও হৃদয় জয় করতে সক্ষম হবে।
কী করতে হবে
ফ্যাশন শিল্পকে ২০২৬ সালে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন দ্রুত খাপ খাইয়ে নেওয়া, সৃজনশীল উদ্ভাবন ও গ্রাহককে কেন্দ্রে রেখে কাজ করা।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গ্রহণ করা
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আর বিলাসিতা নয়, এটি একটি অপরিহার্যতা। কোম্পানিগুলো তাদের কর্মী বাহিনী পুনর্গঠন করছে, এআইভিত্তিক ভূমিকার দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং প্রচলিত ফ্যাশন ইকোসিস্টেমের বাইরে প্রতিভা খুঁজছে। এআই কাস্টমার অভিজ্ঞতাকেও বদলাচ্ছে, যেমন এআইচালিত স্টাইল কনসালট্যান্ট ও সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন।
গ্রাহক আনুগত্য গড়ে তোলা
গ্রাহক ধরে রাখা এখন মূল লক্ষ্য। জরিপে অর্ধেকের বেশি নির্বাহী ধরে রাখার কৌশলকে ২০২৬ সালের শিল্পের প্রধান থিম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ব্র্যান্ডগুলোকে গ্রাহকদের মূল্যবান ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিতে হবে যাতে তারা ফিরে আসে।
মিড-মার্কেটের উত্থান
মিড-মার্কেট এখন সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে। ভোক্তারা গুণমান ও ডিজাইনকে সাশ্রয়ী মূল্যে খুঁজছেন। বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলোও যারা সুস্থতা, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে, তারা মূল্য সচেতন গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে।
আইএইচও/এএসএ/এমএফএ/জেআইএম
What's Your Reaction?