অগ্রাধিকার পরিবহন-বিদ্যুতে, অবহেলিত শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাত

3 months ago 54

 

আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য উন্নয়ন বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও বিদ্যুৎ খাতে। এই দুই খাতে বরাদ্দ থাকছে ৯১ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

আগামী অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ কমছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এতে বরাদ্দ কমছে প্রায় সব খাতেই। তবে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ কমছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে।

রোববার (১৮ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এতে সভাপতিত্ব করেন। এনইসি সভায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার ব্যয় সম্বলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়।

সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের জন্য বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ কম দেওয়া হলেও এ দুই খাতে পরিচালন ব্যয় বাড়ানো হবে। অনেক বড় বড় হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। একইভাবে বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে যেমন ডাক্তার নেই, তেমনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নেই। এসব কারণে এ দুই খাতে পরিচালন ব্যয় বাড়ানো হবে।

তবে আসন্ন অর্থবছরে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতকে গুরুত্ত দেওয়া হয়েছে। এ খাতে মোট ৫৮ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা।

ফলে নতুন এডিপিতে উন্নয়ন বরাদ্দের দিক দিয়ে সবচেয়ে অগ্রাধিকার পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এরপর রয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি। বিগত বছরগুলোতেও এই দুই খাতকেই অগ্রাধিকার পেতে দেখা গেছে। এবার শিক্ষা খাতের অবস্থান তিন নম্বরে। চার নম্বরে আছে গৃহায়ন। স্বাস্থ্য খাতের অবস্থান পঞ্চম।

অগ্রাধিকার পরিবহন-বিদ্যুতে, অবহেলিত শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাত

জানা গেছে, শিক্ষা খাতে ৯১ প্রকল্পে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা, যা চলতি এডিপির বরাদ্দ থেকে ২ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা কম। শতকরা হারে এ খাতে এডিপির বরাদ্দ কমেছে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ। স্বাস্থ্য খাতের ৩৫ প্রকল্পে আগামী অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ থাকছে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। চলতি এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ ২০ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। বরাদ্দ কমেছে সোয়া ১২ শতাংশ। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের প্রকল্পগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই স্কুল-কলেজ, হাসপাতালের ভবনসহ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প। প্রকল্প বা কর্মসূচির আওতায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের গুণগত মান উন্নয়নে বরাদ্দ কম থাকে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুসারে, আগামী এডিপির অর্থের মধ্যে স্থানীয় উৎস থেকে জোগান দেওয়া হবে এক লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া প্রকল্প সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। মোট প্রকল্প সংখ্যা এক হাজার ১৪২টি।

প্রস্তাবিত এডিপিতে বরাদ্দের ৭০ শতাংশ রয়েছে পাঁচ খাতে। এগুলো হলো- পরিবহন ও যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, শিক্ষা, গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলী এবং স্বাস্থ্য। এই পাঁচ খাতে বরাদ্দ কমছে ৮ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত।

এডিপিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিক্ষা খাতে। এ খাতে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ ২৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা। গৃহায়ন খাতে ২২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যে ১৮ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লি উন্নয়নে ১৬ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া কৃষিতে ১০ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ খাতে ১০ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৫ হাজার ৩৮ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।

দেখা যাচ্ছে, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ শিক্ষার দ্বিগুণ ও স্বাস্থ্যের তিন গুণের বেশি।

এমওএস/কেএসআর/জেআইএম

Read Entire Article