অঞ্জনার নামের আগে কেন ‘নবাগত’ লেখা হতো না

2 days ago 7

ঢালিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী অঞ্জনা রহমান তার অভিনয়জীবন শুরু করেন ১৯৭৬ সালে। বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ চলচ্চিত্র দিয়ে অভিনয় শুরু করলেও তার অভিনীত ও মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিটি ছিল ‘দস্যু বনহুর’। সারথি পরিচালিত ‘দস্যু বনহুর’ ছবিটি ১৯৭৬ সালের ৩০ জুলাই মুক্তি পায়। প্রথম ছবিমুক্তির সময় তার নামের আগে ‘নবাগত নায়িকা’ কথাটি লেখা হয়নি।

নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কারণেই সিনেমায় ডাক পান অঞ্জনা। অঞ্জনা অভিনীত ‘দস্যু বনহুর’ সিনেমার প্রযোজক ছিলেন নায়ক মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা। ‘দস্যু বনহুর’ ছবিতে সোহেল রানার বিপরীতেই নায়িকা ছিলেন অঞ্জনা। সেসময় অভিষেক হওয়ার অভিনেত্রীদের নামের আগে লেখা হতো নবাগত…। প্রথম সিনেমার সময় অঞ্জনার নামের সঙ্গে ‘নবাগত’ লেখা হয়নি যে কারণে, জীবদ্দশায় তা জানিয়েছিলেন অঞ্জনা নিজেই।

নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচিতির কারণেই তিনি সিনেমায় ডাক পেয়েছিলেন। তখন তিনি রীতিমতো প্রতিষ্ঠিতি। অঞ্জনা বলেছিলেন, ‘নাচের কারণে চলচ্চিত্রে আমার পদার্পণ সহজ হয়েছিল। বাংলা চলচ্চিত্রের আমি একমাত্র নায়িকা, যার নামের পাশে নবাগতা টাইটেল ব্যবহার করা হয়নি। কারণ, সেই ছোট্টবেলা থেকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতে আমি সাড়া ফেলেছিলাম। এ কারণে চলচ্চিত্রে আগমন আমার জন্য সহজ হয়েছিল।’

নায়ক সোহেল রানার প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন অঞ্জনা। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে বাংলা চলচ্চিত্রে নিয়ে আসার জন্য আমার ওস্তাদ কিংবদন্তি চিত্রনায়ক ড্যাশিং হিরো মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা ভাইয়ের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। নাচ জানতাম বলেই তিনি আমাকে বাংলা সিনেমায় প্রধান নায়িকা হিসেবে নিয়েছিলেন।’

অঞ্জনা অভিনীত উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমা হলো খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘মাটির মায়া’, আজিজুর রহমানের ‘অশিক্ষিত’, নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘চোখের মণি’ ও ‘সুখের সংসার’, দিলীপ বিশ্বাসের ‘জিঞ্জির’, ‘অংশীদার’ ও ‘আনারকলি’, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘বিচারপতি’, শফি বিক্রমপুরীর ‘আলাদীন আলীবাবা সিন্দাবাদ’, নায়করাজ রাজ্জাকের ‘অভিযান’, আলমগীর কুমকুমের ‘মহান’ ও ‘রাজার রাজা’, এফ আই মানিকের ‘বিস্ফোরণ’, আজিজুর রহমানের ‘ফুলেশ্বরী’, সত্য সাহার ‘রাম রহিম জন’, মতিউর রহমান বাদলের ‘নাগিনা’, আলমগীর কবিরের ‘পরীণিতা’।

নায়িকা অঞ্জনার প্রথম সিনেমা ‘দস্যু বনহুর’ ছিল সুপারহিট। এ ছবির পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একাধিক স্বর্ণপদক, বেশ কয়েকবার পেয়েছেন বাচসাস পুরস্কার ও কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

নৃত্যশিল্পী হিসেবেও অঞ্জনা পেয়েছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। নৃত্যের জন্য তিনি তিনবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন, দশটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। জীবদ্দশায় এই অভিনেত্রী একবার জানিয়েছেন, ১৯৭৯ সালে এশিয়া মহাদেশের প্রায় এক শ দেশের প্রতিযোগীর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া মস্কো ইন্টারন্যাশনাল ডান্স কম্পিটিশন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন ১৯৮২ সালে।

নাচে অঞ্জনার অন্যান্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে ১৯৮৬ সালের সার্ক ডান্স ফ্যাস্টিভ্যাল চ্যাম্পিয়নশিপ। ১৯৮৮ সালে তিনি অংশ নেন উপমহাদেশীয় ডান্স কম্পিটিশনে, ১৯৯১ সালে ব্রিটিশ ডান্স ফ্যাস্টিভ্যালে, ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস ক্ল্যাসিকাল ডান্স কম্পিটিশনে, ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ এশীয় ফোক ডান্স ফ্যাস্টিভালে, ২০০৩ সালে জাপান ত্রিদেশীয় ডান্স কনফারেন্সে। এ জায়গাগুলো থেকে তিনি পেয়েছেন স্মারক সম্মাননা।

হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২৪ নভেম্বর অঞ্জনাকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার সিসিইউতে চিকিৎসা নেওয়ার পর গত বুধবার তাকে স্থানান্তর করা হয় বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে। সেরাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা ৩০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই অভিনেত্রী।

আরএমডি/এএসএম

Read Entire Article