অধিনায়কই বাঁচান, অধিনায়কই ডোবান দলকে

9 hours ago 5

ফুটবল মাঠে যেমন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কোচের, ক্রিকেটে তেমন অধিনায়ক। ফুটবলে কোচের একটি ভুল সিদ্ধান্ত জেতা ম্যাচ হারিয়ে দিতে পারে, তেমনই ক্রিকেটে হারিয়ে দিতে পারে অধিনায়কের ভুল।

মেহেদী হাসান মিরাজ বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে কি তার কাজটা ঠিকঠাক করতে পারছেন? সুপার ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হারের পর কিন্তু সেই প্রশ্ন উঠছে জোরেসোরে।

মিরাজের নেতৃত্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে এসেছে বাংলাদেশ। খেলাটা আফগানদের পরিচিত কন্ডিশন আবুধাবিতে হওয়ায় হয়তো মিরাজ ততটা সমালোচিত হননি। কিন্তু আফগানদের বিপক্ষে একটি ম্যাচও জিততে না পারার দায় কি অধিনায়ক এড়াতে পারেন?

ক্রিকেট ক্যাপ্টেনস গেম। এখানে বড় বড় অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয় অধিনায়ককে। শুধু মাঠেই নয়, দল নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে অধিনায়কের। মিরাজ কি সেখানে যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারছেন?

শেষের দিক থেকেই শুরু করা যাক। মঙ্গলবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সুপার ওভারে যে তিন ব্যাটার বেছে নেওয়া হলো, সেটি নিয়ে হয়েছে প্রবল সমালোচনা। সুপার ওভারে ইনিংসের শুরুতে নামেন সৌম্য সরকার আর সাইফ হাসান, ওয়ান ডাউনে নাজমুল হোসেন শান্ত।

এশিয়া কাপে দেখা গেছে, সাইফের হাতে পাওয়ার হিটিংয়ের জোর আছে। সৌম্যও ভালো মারতে পারেন। কিন্তু ওয়ান ডাউনে কেন নাজমুল হোসেন শান্ত? যিনি কিনা স্ট্রাইকরেট নিয়ে সমালোচনায় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকেই ছিটকে গেছেন!

যে কোনো সাধারণ সমর্থককেও সুপার ওভারে যদি তিনজন ব্যাটার বেছে নিতে বলা হতো, তারা একজনকে অবশ্যই রাখতেন। তিনি রিশাদ হোসেন। যে ম্যাচে বাংলাদেশের সব ব্যাটার ধুঁকেছেন, সেই ম্যাচে ১৪ বলে ৩৯ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেছেন রিশাদ। মেরেছেন তিনটি ছক্কাও।

রিশাদকে ব্যাটিংয়ে না দেখে অবাক হয়েছেন সুপার ওভারে ক্যারিবীয়দের হয়ে বল করা আকিল হোসেনও। রিশাদও ফেল করতে পারতেন, কিন্তু তাতে অন্ততপক্ষে এই আক্ষেপটা থাকতো না যে বাংলাদেশ ভুল চয়েজ করেছে।

ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা সৌম্য সরকার জানালেন, ‘এটা ছিল অধিনায়ক ও কোচের সিদ্ধান্ত।’ তাহলে মিরাজ কিভাবে দায় এড়াবেন? অধিনায়করা তো অনেক সময় কোচের সঙ্গে তর্ক করেও নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। কারণ দিনশেষে জবাবদিহিতা তারই। মিরাজ কি সেটা পারছেন বা করছেন?

এ তো গেলো একটি ভুলের কথা। সুপার ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে মিরাজ একটি ক্যাচও ছাড়েন। যে ক্যাচ ফেলার পর ক্ষিপ্ত হতে দেখা যায় ঠান্ডা মেজাজের মোস্তাফিজকেও। সেটা হবেইবা না কেন? ওই ক্যাচ নিতে পারলে সুপার ওভারে বাংলাদেশের দরকার পড়তো মাত্র ৪ রান।

এর আগে মূল ম্যাচেও বোলিং পরিবর্তনে ভুলভাল সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেছে মিরাজকে। মোস্তাফিজের দুই ওভার বাকিই রয়ে গিয়েছিল। বোলিং পরিবর্তন ঠিকঠাক করতে না পারায় শেষ ওভারে সাইফ হাসানের হাতে বল দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। সাইফ ম্যাচটা জিতিয়ে দিলেও তাতে অধিনায়ক মিরাজের কোনো কৃতিত্ব থাকতো না।

ব্যাটিংয়েও মিরাজ আপ টু দ্য মার্ক ছিলেন না। কন্ডিশন কঠিন ছিল। কিন্তু এতটাও কঠিন ছিল না যে শেষ ওভার পর্যন্ত খেলে ৫৮ বলে মাত্র ৩২ রান করতে হবে। মিরাজ সেট ব্যাটার হয়েও শেষদিকে হাত খুলতে পারেননি। শেষ ১০ বলে নেন মাত্র ১১ রান।

বল হাতেও মিরাজ ছিলেন নখদন্তহীন। স্পিনারদের দাপট দেখানো ম্যাচে ১০ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে একটি উইকেটও পাননি মিরাজ। অথচ বাঁহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে অনেকটা সময় পেয়েছেন তিনি। কিন্তু ফেলতে পারেননি বিপাকে।

উল্টো স্পেলের শেষ বলে আকিল হোসেনের কাছে ছক্কা হজম করেন মিরাজ। এই ছক্কার পরই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমীকরণ সহজ হয়ে আসে। ১২ বলে দরকার পড়ে ১৪। শেষ ওভারে সাইফ হাসান ঝলক না দেখালে সহজেই ম্যাচটা জিতে যেতো ক্যারিবীয়রা।

এক ম্যাচে মিরাজের এত এত ভুল চোখে তো লেগেছেই! বারবার এই প্রশ্নটাই আসছে, মিরাজ কি আসলেই বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়ক হয়ে উঠতে পারছেন নাকি কেবলই ‘দায়িত্ব একজন পালন করলেই হলো’ এমন গা-ছাড়া ভাবেই চলছে দল!

এমএমআর/এএসএম

Read Entire Article