অফলাইন উভয়েই হোক আয়কর রিটার্ন দাখিল

2 days ago 10

গত ৩ আগস্ট একটি বিশেষ আদেশ (বিশেষ আদেশ নং- ০১/২০২৫), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক জারি হয়। উক্ত আদেশে ব্যক্তি করদাতাগণের অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল সংক্রান্ত বিষয়ে অবহিত করা হয়।

ব্যক্তি করদাতাদের আয়কর রিটার্ন বর্তমান বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এ উদ্যোগকে বাংলাদেশের মানুষ সাধুবাদ জানায় এবং সকল ব্যক্তি করদাতা এবং আয়কর আইনজীবীরা যুগোপযোগী পদক্ষেপ বলে দাবি করেন। নিঃসন্দেহে এই উদ্যোগ রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে সহায়ক হবে। তবে এ প্রক্রিয়াকে শতভাগ সফল করতে এবং রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্য অর্জনের স্বার্থে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা ও পুনণবিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার পিছনে দুর্নীতি দমনের মহা উদ্দেশ্যকে আয়কর আইনজীবীরা স্বাগত জানালেও এর ব্যবহারিক কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই আধুকায়নের প্রক্রিয়ার যে প্রচেষ্টা তা প্রশংসনীয় হলেও বাস্তব চিত্র হলো দেশে নিবন্ধিত আয়কর আইনজীবীদের বর্তমানের অনলাইন দাখিলের বিষয়টি জটিলতার সৃষ্টি করছে। অনেক আইনজীবীদের রিটার্ন দাখিলের বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান না থাকার কারণে করদাতারা ভবিষ্যতে বিরাট ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। কেবল অনলাইন পদ্ধতি বাধ্যতামূলক করে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব নয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক গৃহীত এরূপ পদক্ষেপ সফলভাবে সম্পূর্ণ হবে না বলে আয়কর আইনজীবীরা মনে করেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আয়কর আইনজীবী এবং ব্যক্তি করদাতা উভয়ের এ বিষয়ে ভোগান্তির শেষ নেই।

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন বিষয়টি বর্তমানে সকল শ্রেণির মানুষের কাছে এক ধরনের বড় প্রতিবন্ধকতা। বাংলাদেশের সকল মানুষ যারা আয়কর রিটার্ন দাখিলের উপযুক্ততা লাভ করেছে সবাই অনলাইন মাধ্যমে এখনো অভ্যস্থতা লাভ করে নাই। আমাদের দেশের অনলাইন সার্ভার সিস্টেম এখনো দ্রুতগতি সম্পন্ন হয়ে উঠেনি। শহর, উপশহর এবং গ্রমাঞ্চলে যারা কর রিটার্ন দাখিলের আওতায় পরে তাদের সকলের জন্য বড় বাধা হচ্ছে নির্বিঘ্নভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া। ই-রিটার্ন সিস্টেমে শহরের দিকে আয়কর আইনজীবীদের বর্তমানে রিটার্ন দাখিল করতে গিয়ে নানামুখী সার্ভার জটিলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে সার্ভারের জটিলতার শিকার। অনলাইনে ফাইল Submission অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় এবং কয়েক ঘণ্টা সময় পার করতে হয় একটি ফাইল পোস্টিং দিতে, যেখানে অফলাইনে সময় লাগে তার অর্ধেক। কোনও কোনও সময় সার্ভার জটিলতার কারণে রিটার্ন দাখিলের Mejor কিছু পোস্টিং নিতে চায় না। এক্ষেত্রে প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের ভোগান্তির কথা বলা বাহুল্য।
এছাড়াও অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের বিষয়টি বর্তমানে সকল জনসাধারণের নিকট স্পষ্ট নয়। অনলাইন মাধ্যমে পারদর্শী হতে একদিকে যেমন আয়কর আইনজীবীদের সময়ের দরকার তেমনিভাবে করদাতাদের এ বিষয়ে অভ্যস্ত হতে অর্থাৎ বিষয়টি উভয় পক্ষের জন্য সময় সাপেক্ষ। বাংলাদেশের মতো মধ্য আয়ের দেশে অনলাইন পদক্ষেপ একান্তভাবে চাপিয়ে দেওয়া সকলের জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যক্তি করদাতাগণের অনলাইনে এবং অফলাইন উভয় প্রেক্ষিতে আয়কর রিটার্ন দাখিল আয়কর আইনজীবী এবং ব্যক্তি করদাতাদের সময়ের দাবি। উক্ত বিষয়ে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করে সকলের জন্য নির্ভেজাল আয়কর রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন। এতে করে ব্যক্তি করদাতারা স্বাচ্ছন্দ্যে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলে উৎসাহিত হবে। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল হবে। জাতীয় রাজস্ব খাতে লাভবান হবে।

পেপারলেস এরূপ কার্যক্রম অবশ্যই ভালো উদ্যোগ হলেও এসব প্রতিবন্ধকতা বর্তমানে বিশেষভাবে অন্তরায়। আয়কর রিটার্ন দাখিলে নির্দিষ্ট সময় সীমা থাকে, তাই ভবিষ্যৎ নেটওয়ার্ক সিস্টেমে উন্নত না হলে এসব বিষয়ে দ্রুত কার্যক্রম সম্ভব নয়। সুতরাং বাধ্যতামূলক অনলাইন রিটার্ন দাখিল সকল শ্রেণির মানুষের জন্য এক ধরনের মানুষকভাবে চাপ সৃষ্টি করে এবং এতে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতাগুলো খুব দ্রুত নিরসন হবে না বলে বর্তমান পরিস্থিতিতে তা স্পট। তাই সকলের সুবিধার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক সবার জন্য উন্মুক্ত প্রশিক্ষণ এবং এ বিষয়ে সচেতনতার উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বিভাগের সিনিয়র আয়কর আইনজীবীগণের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পরামর্শ গ্রহণ করলে সকলের জন্য উপকৃত হবে এবং অনলাইন রিটার্ন দাখিলে স্বচ্ছতার মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

যদিও বিশেষ আদেশ নং-০১/২০২৫ (২নং) উল্লেখ আছে, অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিলে সমর্থ না হলে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে যৌক্তিকতাসহ করদাতা পেপার রিটার্ন দাখিল করিতে পারবেন। এ বিষয়ে করদাতাদের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি এবং এ পদক্ষেপে তারা দ্বিগুণ ভোগান্তির শিকার হবেন।

তাই আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে অনলাইন ও অফলাইন উভয় পদ্ধতি কমপক্ষে দুই (২) থেকে তিন (৩) বছর চালু রাখলে করদাতাদের অধিকার খর্ব হবে না। করদাতারা নির্বিঘ্নে, সময় নিয়ে, এবং নির্ভুলভাবে উভয় পদ্ধতিতে আয়কর রিটার্ন দাখিলে করতে পারবেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয়ের কাছে এ বিষয়ে ইতোমধ্যে একটি চিঠি পাঠিয়ে যৌক্তিকতা ও অযৌক্তিতার বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যক্তি করদাতাগণের অনলাইনে এবং অফলাইন উভয় প্রেক্ষিতে আয়কর রিটার্ন দাখিল আয়কর আইনজীবী এবং ব্যক্তি করদাতাদের সময়ের দাবি। উক্ত বিষয়ে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করে সকলের জন্য নির্ভেজাল আয়কর রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন। এতে করে ব্যক্তি করদাতারা স্বাচ্ছন্দ্যে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিলে উৎসাহিত হবে। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল হবে। জাতীয় রাজস্ব খাতে লাভবান হবে।

লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও আয়কর আইনজীবী, ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশন।

এইচআর/এমএস

Read Entire Article