ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একের পর এক হামলা চলছে। চলমান এই সংঘাত সমাপ্তের লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে আলোচনায় হামাস ও ইসরায়েল পরস্পরকে দোষারোপ করছে।
চুক্তির বাস্তবায়ন এখনো অনিশ্চিত। উভয়পক্ষই আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফলাফলের আশা প্রকাশ করলেও বাস্তবে তা এখনো সম্ভব হয়নি।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বাধা
যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে হামাস দাবি করেছে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে নতুন শর্ত আরোপ করেছে, যা চুক্তি কার্যকর হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। হামাসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, দখলদার বাহিনী যুদ্ধবিরতি, বন্দি বিনিময়, বাস্তুচ্যুতদের প্রত্যাবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে নতুন শর্ত আরোপ করেছে। এ কারণে সহজেই পৌঁছানো চুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে।
তবে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে দোষারোপ করে বলেছেন, হামাস সন্ত্রাসী সংগঠনটি মিথ্যা বলছে। তারা ইতোমধ্যে হওয়া সমঝোতাগুলো থেকে সরে এসেছে এবং আলোচনায় বাধা সৃষ্টি করছে।
মধ্যস্থতা ও আলোচনার অগ্রগতি
কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় এ যুদ্ধবিরতি আলোচনার প্রক্রিয়া চলছে। হামাস নমনীয়তা দেখানোর কথা বললেও, ইসরায়েল তার অবস্থানে অটল রয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা কাতারে আলোচনার পর নতুন পরিকল্পনা করছে। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা আলোচনাকে দ্রুত এগিয়ে নিতে প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার বর্তমান পরিস্থিতি
এদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর গাজার উত্তরাঞ্চলে সামরিক অভিযান পূর্বের চেয়ে জোরদার হয়েছে। বুধবারের হামলায় অন্তত ২৪ জন নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শেখ রাদওয়ান এলাকার একটি স্কুলে বিমান হামলায় বহু বাস্তুচ্যুত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা হামাসের সশস্ত্র সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে, এসব হামলায় বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি এবং আহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় খবর পাওয়া যায়, গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চলে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ভোরের দিকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৫ ফিলিস্তিনি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এই সাংবাদিকরা আল কুদস টুডে চ্যানেলের কর্মী ছিলেন।
ইসরায়েলি সেনারা নিহতদের ‘জঙ্গি সদস্য’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তবে এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি তারা। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
যুদ্ধের পটভূমি
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে বন্দি করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। এ পর্যন্ত ৪৫,৩০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করেছে।
গাজার ২৩ লাখ মানুষের অধিকাংশই বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইসরায়েল বলছে, তারা নিরাপত্তার জন্য গাজার উত্তরাঞ্চলে বাফার জোন তৈরি করতে চায়। কিন্তু ফিলিস্তিনিরা অভিযোগ করছে, এটি তাদের এলাকা থেকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করার প্রচেষ্টা।
পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল
যুদ্ধবিরতির চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালু থাকলেও পরস্পরের দোষারোপ এবং নতুন শর্ত আরোপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। যুদ্ধের অবসান কতটা সম্ভব হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।