অ্যালার্জি সম্পর্কে জানুন

10 hours ago 3
অ্যালার্জি হয় যখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেম এমন কোনো বস্তুতে প্রতিক্রিয়া দেখায়, যা আসলে ক্ষতিকর নয়। এই বস্তুগুলোকে বলা হয় অ্যালার্জেন। উদাহরণস্বরূপ—পোলেন (গাছের রেণু), মৌমাছির বিষ, পোষা প্রাণীর লোম, কিছু খাবার বা ওষুধ। আমাদের ইমিউন সিস্টেম সাধারণত জীবাণু বা ক্ষতিকর বস্তু আক্রমণ করতে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। কিন্তু অ্যালার্জির ক্ষেত্রে, এই অ্যান্টিবডিগুলো এমন কোনো নির্দোষ বস্তুকেও বিপজ্জনক ভেবে আক্রমণ করে। ফলে শরীরে প্রদাহ, চুলকানি, হাঁচি-কাশি বা হজমের সমস্যা দেখা দেয়। আরও পড়ুন : ঘুম থেকে উঠেই কফি ডেকে আনছে যেসব বিপদ আরও পড়ুন : হৃদরোগের ঝুঁকি বুঝতে সাহায্য করে এই টেস্ট অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়—কেউ হালকা অস্বস্তি অনুভব করেন, আবার কারও ক্ষেত্রে এটি অ্যানাফাইল্যাক্সিস নামে প্রাণঘাতী অবস্থাও হতে পারে। যদিও অ্যালার্জি পুরোপুরি সারানো যায় না, সঠিক চিকিৎসায় উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অ্যালার্জির সাধারণ উপসর্গ অ্যালার্জির লক্ষণ নির্ভর করে কোন অ্যালার্জেনের কারণে এটি হচ্ছে তার ওপর। উপসর্গগুলো শ্বাসনালী, ত্বক, সাইনাস বা হজমতন্ত্রে দেখা দিতে পারে। হে ফিভার (অ্যালার্জিক রাইনাইটিস) - হাঁচি - নাক, চোখ বা মুখে চুলকানি - নাক বন্ধ বা পানি পড়া - ক্লান্তি - চোখ লাল, পানি পড়া বা ফুলে যাওয়া খাবারে অ্যালার্জি - মুখে ঝিমঝিম ভাব - ঠোঁট, জিহ্বা, মুখ বা গলা ফুলে যাওয়া - চুলকানি বা হাইভস (লাল দাগ) - পেট ব্যথা, বমি বা ডায়রিয়া - গুরুতর ক্ষেত্রে অ্যানাফাইল্যাক্সিস পোকামাকড়ের কামড়ে অ্যালার্জি - কামড়ের স্থানে ব্যথা ও ফুলে যাওয়া - শরীরজুড়ে চুলকানি বা ফুসকুড়ি - বুকের চাপ, কাশি বা শ্বাসকষ্ট - গুরুতর ক্ষেত্রে অ্যানাফাইল্যাক্সিস ওষুধে অ্যালার্জি - ত্বকে র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি - মুখমণ্ডল ফুলে যাওয়া - শ্বাসকষ্ট বা মাথা ঘোরা - বমি বা ডায়রিয়া - অ্যানাফাইল্যাক্সিস অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস (একজিমা) - ত্বকে চুলকানি - লালচে বা বাদামী দাগ - ত্বক শুষ্ক, খোসা ওঠা বা ফেটে যাওয়া অ্যানাফাইল্যাক্সিস — গুরুতর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া কিছু খাবার, পোকামাকড়ের কামড় বা ওষুধে গুরুতর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যাকে বলে অ্যানাফাইল্যাক্সিস। এটি দ্রুত জীবনহানিকর অবস্থায় রূপ নিতে পারে। এর লক্ষণগুলো হলো: - অজ্ঞান হয়ে যাওয়া - রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া - শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া - ত্বকে লাল দাগ বা হাইভস - মাথা ঘোরা, দুর্বলতা - বমি বা ডায়রিয়া - ভয় বা আতঙ্কের অনুভূতি কখন ডাক্তার দেখাবেন যদি মনে হয় আপনার উপসর্গগুলো অ্যালার্জি থেকে হচ্ছে এবং বাজারে পাওয়া সাধারণ ওষুধে কাজ হচ্ছে না, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। যদি নতুন কোনো ওষুধ খাওয়ার পর উপসর্গ দেখা দেয়, দ্রুত সেই চিকিৎসককে জানান যিনি ওষুধটি দিয়েছেন। যদি গুরুতর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া (অ্যানাফাইল্যাক্সিস) হয়, তবে সাথে সাথে স্থানীয় জরুরি নম্বরে ফোন করুন। এ অবস্থায় দ্রুত ইপিনেফ্রিন (EpiPen) ইনজেকশন দিতে হয়। ইনজেকশন দেওয়ার পর উপসর্গ কমলেও অবশ্যই হাসপাতালে যেতে হবে, যাতে ডাক্তার নিশ্চিত হন প্রতিক্রিয়া ফিরে না আসে। যাদের আগে এমন গুরুতর প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তাদের অ্যালার্জি পরীক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা পরিকল্পনার জন্য অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিত। অ্যালার্জির কারণ অ্যালার্জি হয় যখন শরীর কোনো নির্দোষ বস্তুকে ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা সক্রিয় করে। এরপর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা পরের বার সেই একই বস্তুর সংস্পর্শে এলে অ্যালার্জির উপসর্গ ঘটায়। সাধারণ অ্যালার্জির কারণ - বাতাসে থাকা পোলেন, ধূলা, ছত্রাক বা প্রাণীর লোম - কিছু খাবার: চিনাবাদাম, গাছের বাদাম, মাছ, ডিম, দুধ, সয়াবিন, গম ইত্যাদি - পোকামাকড়ের কামড় (যেমন মৌমাছি, বোলতা) - কিছু ওষুধ, বিশেষত পেনিসিলিন জাতীয় - ল্যাটেক্স বা কিছু বস্তু যা ত্বকে লাগলে অ্যালার্জি হয় ঝুঁকির কারণ - পরিবারে অ্যালার্জি বা হাঁপানির ইতিহাস থাকা - শিশু বয়সে থাকা - হাঁপানি বা অন্য অ্যালার্জিক সমস্যা থাকা জটিলতা অ্যালার্জি থাকলে নিচের সমস্যাগুলোর ঝুঁকি বাড়ে: - অ্যানাফাইল্যাক্সিস — গুরুতর অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া - হাঁপানি — অ্যালার্জির কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা - সাইনাস, কান বা ফুসফুসের ইনফেকশন প্রতিরোধ ও করণীয় অ্যালার্জি প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো যেসব বস্তুতে অ্যালার্জি হয় সেগুলো এড়িয়ে চলা। অ্যালার্জি সৃষ্টি করে এমন জিনিস থেকে দূরে থাকুন। যেমন, পোলেন অ্যালার্জি থাকলে ফুলের সময় জানালা বন্ধ রাখুন। আরও পড়ুন : ভিটামিনের ট্যাবলেট কখন ও কীভাবে খাবেন আরও পড়ুন : ওজন কমাতে সকালের শুরুটা হোক সঠিক খাবার দিয়ে ধূলা-মাইট অ্যালার্জি থাকলে নিয়মিত পরিষ্কার করুন ও বিছানার চাদর ধুয়ে ফেলুন। অ্যালার্জির উপসর্গ কখন বাড়ে তা বুঝতে একটি ডায়েরি রাখুন। যদি গুরুতর অ্যালার্জি থাকে, তাহলে মেডিকেল অ্যালার্ট ব্রেসলেট পরুন, যাতে অন্যরা জরুরি অবস্থায় সাহায্য করতে পারে। সূত্র : Mayo Clinic
Read Entire Article