আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণে পাবিপ্রবিতে স্মরণসভা

4 weeks ago 20

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) ও পাবনা জেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা করেছে পাবিপ্রবি প্রশাসন।

সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি বন্দে আলি মিঞা মুক্তমঞ্চে চার শহীদের পরিবার ও আহতদের নিয়ে জাতীয় সংগীত ও ধর্মগ্রন্থ পাঠের মধ্যে দিয়ে স্মরণসভা শুরু হয়। 

এ সময় স্মরণসভার আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল-আওয়াল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্দোলনে শহীদের পরিবার ও আহতরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল-আওয়াল বলেন, ‘১৭ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট সরকার ইচ্ছামতো রাষ্ট্র পরিচালনা করে দেশকে শেকলবন্দি করে ফেলেছিল। মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে কলুষিত করেছিল। দেশ ও জাতিকে এ শেকল ভেঙ্গে মুক্তির জন্য এবং স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে ২৪ এর কোটা আন্দোলন রূপ নেয় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে।’ 

তিনি বলেন, ‘আমরা এ দেশটাকে, এ আন্দোলনটাকে ধারণ করি। ছাত্রদের আন্দোলন নিয়ে গর্ব করি। তাদের গল্প, সত্যিকার ইতিহাস বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে। তাদের ইতিহাস আমরা বিলীন হতে দিতে পারি না। তাদের ত্যাগের আদর্শকে সামনে রেখে দেশকে নতুন করে গড়ে তোলা হবে। শহীদ ও আহতদের পরিবারের দুঃখ কষ্টের কথা আমরা স্মরণে রেখে নতুন আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিজের সংশ্লিতা সম্পর্কে বলেন, ‘সে সময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমার বাড়িতে থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। তাদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান ভাবি। এ আন্দোলনে অনেকে রক্ত দিয়ে, অর্থ দিয়ে, সময় দিয়ে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তারা সবাই সম্মানপ্রাপ্য। ছাত্র-জনতা যে উদ্দেশ্য নিয়ে ত্যাগ স্বীকার করেছে আমাদের দায়িত্ব হল তাদের উদ্দেশ্য পূরণ করা।’

স্মরণসভায় শহীদ মাহাবুব হাসান নিলয়ের বাবা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘খুনীদের বিচার না হলে জাতি হিসেবে আমরা কলঙ্কিত হব। এমন কিছু না হলে আমরা ঋণমুক্ত হতে পারব না।’

শহীদ জুলকার নাইনের বাবা আব্দুল হাই আল হাদি বলেন, ‘আমার সন্তান ন্যায়ের জন্য শহীদ হয়েছে। এখন আমরা কোনো বিভেদ না করে লোভ লালসার ঊর্ধ্বে ওঠে সবাই দেশের জন্য কাজ করব।’

শহীদ জাহিদুলের বাবা দুলাল উদ্দিন বলেন, ‘শহীদদের উদ্দেশ্য যেন সফল হয়। দেশের জন্য যেন আর কাউকে রক্ত দিতে না হয়।’

শহিদ জাহাঙ্গীরের স্ত্রী মনজিলা খাতুন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার স্বামী সাধারণ মানুষ হলেও দেশ প্রেমিক ছিলেন। তাই আন্দোলনে গিয়েছিল। সে ছিল পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম। তাকে  হারিয়ে  দুই সন্তান নিয়ে আমি নিঃস্ব।"

স্মরণসভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পেটে গুলিবিদ্ধ শ্রমিক আরাফাত হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত ছাত্র মাসুম হোসেন, সানোয়ার হোসেন সনি, তাহসিন আহমেদ, সমন্বয়ক মনজুরুল ইসলাম, মিরাজুল ইসলাম এবং শিক্ষকদের মধ্যে অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান খান, শিক্ষক সাইমুন নাহার রিতু, ইমরান হোসেন ও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন। 

পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের ও আহতদের হাতে আর্থিক সহায়তার চেক এবং  আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া হয়।

Read Entire Article